ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বারসহ দুটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ দুটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদখল হয়ে থাকা ২৫ শতক জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের মসজিদ রোড এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার নুসরাত জাবীন এই অভিযান পরিচালনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের মসজিদ রোড এলাকায় জেলা প্রশাসন চেম্বারসহ স্থানীয়দের প্রায় ২৫ শতক জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে চলমান মামলায় হেরে যায় জেলা প্রশাসন। উচ্চ আদালত জায়গাটি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মসজিদ রোড এলাকায় উপস্থিত হন। এ সময় চেম্বার অব কমার্সের ভবনে থাকা দোকানদারের মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা মালামাল সরিয়ে নিলে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে।
মামলার রায় ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন অর্পিত সম্পত্তির ২৪ দশমিক ৮৯ শতক জায়গা জেলা চেম্বারসহ বিভিন্নজনের কাছে বন্দোবস্ত দেয়। লীলাময় ভট্টাচার্য নামের এক ব্যক্তি ২০১২ সালের জুলাই মাসে জায়গাটির মালিকানা দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আদালতে মামলা করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জেলা চেম্বার অব কমার্স। জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি হওয়ায় ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ লীলাময় ভট্টাচার্যের পক্ষে রায় দেন। সরকারপক্ষ এই অর্পিত আপিল রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন করেন। পরে মামলার বাদী রিভিউ পিটিশনের বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেন। উচ্চ আদালতের আপিল ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালের অর্পিত আপিল মোকদ্দমার রায় ডিক্রি বাস্তবায়নের জন্য এক আদেশ দেয়।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্মারকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে প্রতিকার চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই উচ্চ আদালত রিট করার জন্য কোনো প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০১৬ সালের অর্পিত আপিল রায়ের কার্যকারিতার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ নেই। অর্পিত আপিল ট্রাইব্যুনাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের দেওয়া ডিক্রি বাস্তবায়নের আদেশ বিদ্যমান থাকায় মামলার রায়-ডিক্রি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আইনত আর কোনো বাধা নেই বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মতামত দেন। তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের উচ্ছেদের কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। চেম্বারও কিছু বলেনি।’
জায়গার মালিক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটি আমাদের পূর্বপুরুষের জায়গা ছিল। বিভিন্ন কারণে এটি অর্পিত সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়। সরকারের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের আইন করার পর আমরা ২০১২ সালে মামলা করি এবং ২০১৮ সালে রায় হয়। ২০১৯ সালে উচ্ছেদের নোটিস আসে। উচ্চ আদালতে দু-একটি রিট হওয়ার পর রায় আমাদের পক্ষে আসে। জেলা প্রশাসন প্রত্যেক লিজিকে সরে যেতে নোটিস দেয়।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার নুসরাত জাবীন বলেন, আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে চেম্বারসহ দুটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।































