আসছে হেফাজতের কঠিন কর্মসূচি।।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাওলানা সাজেদুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়
ডেস্ক ২৪: আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বিতর্কিত দুই নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী। শনিবার সংগঠনটির ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের প্রথম পর্বে এ সিদ্ধান্ত নেন নেতারা। চট্টগ্রামের জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসায় সকালে সহস্রাধিক আলেম ওলামার অংশগ্রহণের এ সম্মেলন শুরু হয়। দুপুর ৩টা পর্যন্ত সম্মেলনে হেফাজতের কমিটি পুনর্গঠন ও নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বিকেল ৩টা থেকে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কমিটি গঠন পর্বে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা পরিষদ গঠন করা হয়। এদের মধ্য থেকে ২৫ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে গঠিত হয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ। এ পরিষদের আমির হিসেবে আল্লামা আহমদ শফী ও মহাসচিব হিসেবে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী থাকলেও বাদ পড়েছেন দুই যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী। এছাড়াও নতুন এ কমিটিতে পুরোনো অনেক নেতাদেরই নাম পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে লালবাগ কেন্দ্রিক নেতাদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউই স্থান পাননি এ কমিটিতে। সাবেক নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস (বর্তমানে জেলে), মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আব্দুর রকিব, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মাহফুজ উল্লাহসহ অনেকেই বাদ পড়েছেন এ কমিটি থেকে। তবে অন্যদের বিভিন্ন কারণে এ কমিটিতে রাখা না হলেও মুফতি ফয়জুল্লাহ আর মাওলানা রুহীর বিরুদ্ধে ১৮দলীয় জোটের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ থেকেই তাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে হেফাজতের নাম ব্যবহার করে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ থেকেও এ দু’জনকে কোনো কমিটিতে রাখা হয়নি বলে কয়েকজন হেফাজত নেতা নিশ্চিত করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া দারুল আরকাম মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা সাজেদুর রহমান মাওলানা সাজেদুর রহমান ২৫ সদস্যের নীতি নির্ধারণী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দায়িত্ব পেয়েছেন। আমির আল্লামা শফী ও মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ছাড়াও ২৫ সদস্যের নীতি নির্ধারণী কমিটিতে এ পর্যন্ত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা আব্দুল হামিদ মধুপুর, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা তাফাজ্জুল হক (হবিগঞ্জ), মাওলানা মুশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল), মাওলানা আব্দুল জব্বার জেহাদী (রাজশাহী), মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সলিমুল্লাহ খান, মুফতি আনাস মাদানী (আল্লামা শফীর ছেলে), মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সালাহউদ্দিন। দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শেষের দিকে ২০১ জন শুরা সদস্য থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুরা কমিটিতে সংগঠনের সব নায়েবে আমির এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের নেয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রথম পর্বে সারাদেশ থেকে আসা হেফাজতের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা বক্তব্যও দেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, ওলামা মাশায়েখে সম্মেলনে মুফতি ফয়জুল্লাহ অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত থাকলেও মাওলানা রুহী ছিলেন অনুপস্থিত। আল্লামা শফী আগেই রুহীকে এ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে এ কমিটি একটি জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করবে। তারপর থেকে সে কমিটিই হেফাজতের দায়িত্ব পালন করবে। তবে নতুন সে কমিটিতে কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রতিনিধিদের রাখারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন কর্মসূচি: কর্মসূচিগুলো হচ্ছে- ২. ৩০ অক্টোবরের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে যেসব জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়নি সেসব শাখা কমিটি গঠন করে এর তালিকা কেন্দ্রে (সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবরে) প্রেরণ করা। ৩. ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ওলামা-সুধী সমাবেশ ও পেশাজীবী সংলাপ আয়োজন। ৪. আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলন আয়োজন। ৫. প্রত্যেক জেলায় ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শানে রেসালত সম্মেলন করা। ৬. শহীদদের (মতিঝিলে নিহতরা) কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় তথ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করা। ৭. সরকার যদি হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফাসহ উত্থাপিত অন্যান্য দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন না করে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কোরবানী ঈদের পরপরই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। এছাড়াও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় মহাসমাবেশ। সভাপতির বক্তব্যে হেফাজত আমির আল্লামা শফি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি প্রভাবশালী ইসলামবিদ্বেষী চক্র। বস্তুতপক্ষে তারা এ দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কওমী মাদ্রাসাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি “কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃকপক্ষ আইন ২০১৩” নামে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমরা এই আইনটি পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, তা বাস্তবায়িত হলে কওমী মাদরাসার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই আইন পাস করা থেকে সরকারকে বিরত রাখার জন্য কঠিন ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।’ হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী পরিচালিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা হাফেজ শামসুল আলম, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা মোবারক উল্লাহ, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুল বাসেত বরকতপুরী, সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা, মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব বরিশাল, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খুলনা, মাওলানা আব্দুস সামাদ রাজশাহী, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা ইদরিস, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা হাফেজ সালামত উল্লাহ, মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আনাস মাদানী, মুফতী হারুন ইজহার প্রমুখ। |