Main Menu

এ যেন কেয়ামতরই এক রুপ—বলল একজন বৃদ্ধ। টর্নেডতে লন্ডভন্ড ব্রাক্ষনবাড়িয়া।

+100%-
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদর উপজেলায় ছয়টি গ্রামের ওপর বয়ে যাওয়া টর্নেডোর আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে রেললাইনে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়

মাত্র ১৫ মিনিটের ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি উপজেলার ২০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। শিশুসহ নিহত হয়েছেন ১৯ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি।
নিহতদের মধ্যে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের উড়শিউড়া গ্রামের ডলি রানী দে (৩০), একই ইউনিয়নের পাতিরহাতা গ্রামের লাভলী বেগম (৩০), সুমা আক্তার ও জয়নাল মিয়ার পরিচয় পাওয়া গেছে। তাত্ক্ষণিকভাবে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। গুরুতর আহত অন্তত পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের সদর হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। একপর্যায়ে সদর উপজেলা, বিজয়নগর ও আখাউড়া উপজেলায় টর্নেডো আঘাত হানে।
এতে সদর উপজেলার রামরাইল, সুলতানপুর, মাছিহাতা ও বাসুদেব ইউনিয়নের সোহাতা, মোহাম্মদপুর, উড়শিউড়া, পাতিরহাতা, চান্দপুর, চিনাইর, চাপুইর, পাইকপাড়া, বাসুদেব, ভাতশালা, জারুলতলা ও খেয়াই গ্রাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল, পত্তন ও আলীনগর এবং আখাউড়ার আমোদাবাদসহ প্রায় ২০টি গ্রাম টর্নেডোতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
টর্নেডোতে গ্রামগুলোর কয়েক শ কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ফসলি জমির ধান ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে।

জানা গেছে, টর্নেডোর আঘাতে সদর উপজেলার উড়শিউড়ায় অবস্থিত জেলা কারাগারের পূর্ব পাশের দেয়াল ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় এক মাকসুদুল আলম (৪০) নামে এক কারারক্ষী মারা গেছেন। রাত পৌনে এগারোটার দিকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. গিয়াসউদ্দিন জানান।
টর্নেডোর সময় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। গ্যাস-চালিত অটোরিকশাসহ বেশ কিছু গাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। রাত আটটায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাছ ভেঙে পড়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুত্সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
আখাউড়া উপজেলায় টর্নেডোর আঘাতে অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক বাড়িঘর।
ঘটনার পরপরই গ্রামবাসী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ও নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন চাকমা টর্নেডোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছি। হিসাব না করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল ও দুই বান্ডিল টিন দেওয়ার ঘোষণা দেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোর আঘাতে নিহতদের পরিবারপ্রতি ২০ হাজার টাকা এবং ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আহত ও যাদের ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের পরিবারপ্রতি তিন হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় টিন এবং বান্ডিল প্রতি তিন হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।






Shares