মাদ্রাসার ছাত্রদের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে লেলিয়ে দেয়াসহ নানা অভিযোগে মাওলানা আব্দুর রহিমকে জামিয়া থেকে অব্যাহতি



ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রসার মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমী মাদ্রাসার স্বার্থ পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকায় এবং তার ব্যাপারে বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে জামিয়ার সকল পদ ও শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের (মজলিশে ইলমিয়া) সদস্যরা জরুরি বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মজলিশে ইলমিয়ার সদস্য হলেন আল্লামা আশেক এলাহী, মাওলানা মুবারকুল্লাহ, আল্লামা সাজিদুর রহমান, আল্লামা সামছুল হক, আল্লামা আখতারুজ্জামন, আল্লামা মুফতি সামছুল হক।
এছাড়াও মাওলানা আব্দুর রহিমের অব্যাহতির সিদ্ধান্তের সাথে এক মত পোষণ করেন জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রসার ২৪ জন শিক্ষক। তারা হলেন হযরত মাওলানা মুফতী মুহসিনুল করীম, নোমান হাবিব, বেলায়েতুল্লাহ, মুফতী মারুফ কাসেমী, মোশাররফ, আবু বকর, আব্দুল্লাহ, শরীফুদ্দিন আফতাবী, রকিবুল হাসান, আব্দুল হক, ক্বারী আবুল খায়ের, হোসাইন আহমদ, মাষ্টার গোলাম মোস্তফা, আতহার আলী, হাফেজ গোফরান, হামিদুল হক, আহমদুল হক, আশ্রাফুল ইসলাম, রুহুল আমীন, বুরহানুদ্দীন, ইকরাম হোসাইন, আল আমীন, আতাউর রহমান, মুহিউদ্দিন আব্দুল হাফিজ, আনোয়ার বিন মুসলিম, ইয়াকুব আলী, এনামুল হক।
মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমীকে অব্যাহতি দেয়ার কারনঃ
(১) আব্দুর রহিম কাসেমী জামিয়ার কোন মুরুব্বিকেই তোয়াক্কা করেন না। প্রায় সময়ই তাঁদের সাথে বেয়াদবিমূলক আচরণ ও বিভিন্ন প্রকারের হুমকি প্রদান করে থাকেন। তিনি তার একছত্র আধিপত্য বিস্তারের অপতৎপরতা চালিয়ে মাদ্রাসার বাহিরে ও ভেতরে সকলকে কোনঠাসা করে রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১২ নভেম্বর ২০২০ যোহর নামাজের পূর্বে ক্লাশ চলাকালীন সময়ে পরিকল্পিকভাবে হঠাৎ করে কিছু ছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরকে ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে শতবর্ষের জামিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নষ্ট করে নিজ নেতৃত্বদানে বিদ্রোহ করেন। যার ফলে সমস্ত মাদ্রাসায় এক আতংককর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে সময় তিনি জামিয়ার এক প্রবীন ওস্তাদকে তার রুমের দরজা লাথি মেরে তাকে অপমাণিত, লাঞ্ছিত ও নাজেহার করে সন্ত্রাসী কায়দায় উঠিয়ে নিয়ে যান। অপরদিকে মসজদি ও মাদ্রাসার দফতরের সামনে ছাত্রদেরকে চরমভাবে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে লেলিয়ে দেন। এতে দফতরে থাকা মুরুব্বি ওস্তাদদেরকে হতবাক, বিমূর্ষ ও জিম্মী করে ওস্তাদগন কর্তৃক ছাত্রদেরকে বারবার শান্ত করার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেন। এমনকি স্বয়ং মুহতামিম কর্তৃক ছাত্রদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তাঁকেও ধমক দিয়ে ছাত্রদের বিদ্রোহ অব্যাহত রাখেন। শতবর্ষের জামিয়ার দফতরের দরজায় লাথি, ঘুষি, হট্টগুল, ভীতিকর তান্ডব ও ত্রাস সৃষ্টি করে রাখেন। উপরন্তু তিনি নিজে দফতরে প্রবেশ করে কয়েকটি খুন হবে বলে হুমকী দেন।
(২) তিনি জামিয়ার কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্যের নিকট এই কথাও ব্যক্ত করেন যে, জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম ও মাওলানা সাজিদুর রহমান তারা দুইজন হলো জামিয়ার জন্য একটি বিষফোঁড়া। তাই তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বের না করলে জামিয়ার উন্নতি হবে না। তারই ফলশ্রুতিতে স্বীয় খাদেম আব্দুল কুদ্দুসকে নারী সাজিয়ে কয়েকজন মুরুব্বি ওস্তাদকে ব্ল্যাকমেইল করতে চেষ্টা চালিয়ে যান। জেলা পুলিশ প্রশাসন এর স্বাক্ষী। যার দরুন আব্দুল কুদ্দুস বর্তমানেও জেল হাজতে আছেন।
(৩) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তাবলীগি মুরুব্বিদের এক জমাত মুহতামিম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে একজন বিশিষ্ট ওয়ায়েজ মাওলানা ইয়াকুব কাসেমীকে জামিয়ার দফতরে মুহতামিম সাহেবসহ সকলের সামনে মারধোর করে জামিয়ার ঐতিহ্য ও দফতরকে অবমাননা করেন।
অতএব, জামিয়াকে কুলঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে এবং সকল ওস্তাদগণের মধ্যে ঐক্য রক্ষার্থে সকল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এহেন পরিস্থিতিতে তার অপসারণের জোর দাবী করায় মজলিশে ইসলামিয়াে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমীকে অত্র জামিয়া থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
মাদ্রাসার মোহতামিম মুফতি মুবারকুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।