ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১১ ছাত্র নেতাসহ ১২ জনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১১ ছাত্র নেতাসহ ১২ জনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনটি পালনে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার প্রাঙ্গণে নিহতদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির।
এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম,এ,এইচ মাহবুব আলম, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকের মোঃ লোকমান হোসেন প্রমূখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন। পরে নিহত ছাত্রনেতাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ জিয়ারত শেষে ফেরার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ ছাত্র নেতাসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের উপ নির্বাচনে বিজয় লাভ করারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে টুঙ্গীপাড়া যান। সে দিন তাঁর সফর সঙ্গী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীগণ। মাজার জিয়ারত শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেরার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মর্মান্তিক এক দূর্ঘটনায় শিকার হয় ছাত্রনেতাদের বহনকারি একটি গাড়ি। ঘটনা স্থলেই গাড়ি চালক সহ নিহত হন আট জন ছাত্র নেতা। হাসপাতালে নেওয়ার পর নিহত হন আরো চারজন। নিহত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শান্ত, বাবু, লিয়েন, রুমেল, রায়হান, আলমগীর, তানভীর, রিয়াদ, মুরশেদ, আসিফ, এমরান, যুব নেতা ও গাড়ি চালক মিজান।
কি ঘটেছিলো সেদিন:-
বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর গাড়িবহর দুর্ঘটনায় ১১ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। গুরম্নতর আহত দু’জন। তবে এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অক্ষত আছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গা হাসপাতালে গিয়ে লাশের মিছিল দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় হাসপাতালজুড়ে সৃষ্টি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গার তাড়াইলে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মাইক্রোচালক বাদে নিহতরা সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। দুর্ঘটনার খবর শুনে নবনির্বাচিত এমপি গাড়ি ঘুরিয়ে দ্রম্নত হাসপাতালে যান।
ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার সহযোগীদের নিয়ে কয়েকটি মাইক্রোবাসযোগে শুক্রবার সকালে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সমাধি থেকে ফেরার পথে বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চন্দ্রা ইউনিয়নের তাড়াইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকার দিক থেকে আসা একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কলরি (কুষ্টিয়া ড-৪১-০০১০) রাসত্মায় চলে আসা একটি গরম্ন বাঁচাতে গিয়ে এমপির গাড়িবহরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসকে সজোরে আঘাত করলে মাইক্রোটি দুমড়েমুচড়ে যায়। স্থানীয় জনগণ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস থেকে সবাইকে টেনে বের করে। এতে দুর্ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় আরও তিনজন। পরে হাসপাতালে ওটিতে মারা যান আরও একজন। নিহতদের মধ্যে ১০ জনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। নিহত অপরজন মাইক্রোচালক মিজান মোলস্না। বিধ্বসত্ম মাইক্রোটিতে ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মী ছিলেন। গুরম্নতর আহত তিনজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর ট্যাঙ্কলরি চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে গেছে।
ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট সুব্রত কুমার হালদার জানান, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে ঢাকা ফেরার পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের তাড়াইলে বিপরীতমুখী একটি ট্যাঙ্কলরির সঙ্গে সংঘর্ষে এমপি মোকতাদিরের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে যায়। বর্তমানে তিনি ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুরে গেছেন আহতদের দেখতে।
উলেস্নখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নির্বাচিত হন।
জানা যায়, নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সহযোগীদের নিয়ে ১৬টি মাইক্রেবাসে নিজ এলাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। নিহতরা হলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেহেদী হাসান শানত্ম (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক শওকত হোসেন লিয়েন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নেতা শেখ রায়হান (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস আরিফুল ইসলাম বাবু (৩০), ছাত্রলীগ কমর্ী আসিফ (৩৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ইমরান (৩০), ছাত্রলীগ নেতা রম্নমেল (২৪), ছাত্রলীগ নেতা মোর্শেদ (২৮), রিয়াদ (৩১), তানভীর (২৫) ও মাইক্রো চালক মিজান মোলস্না। গুরম্নতর আহতাবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন মাইক্রোযাত্রী ছাত্রলীগ নেতা পাভেল (২৭), আলমগীর (২৭)।