ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কালভৈরব মন্দিরে বার্ষিক যজ্ঞানুষ্ঠান-লোকজ মেলা শুরু



বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ সাড়ে তিনশত বছরের প্রাচীণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডার তিতাস নদীর তীরে শ্রীশ্রী কালভৈরব মন্দিরে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক সপ্তসতি চণ্ডী যজ্ঞ উৎসব শুরু হয়েছে।
উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দির প্রাঙ্গণ। বৃহৎ এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দির এলাকায় বসেছে লোকজ মেলা।
মন্দিরের পুরোহিত, মন্দির পরিচালরা কমিটির সভাপতি ও ভক্তদের সঙ্গ কথা বলে জানা গেছে,
৩শ’ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফুলবাড়ীয়া নিবাসী দুর্গাচরণ আচার্য স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে কালভৈরব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ডিনামাইটের মাধ্যমে ২৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বৃহৎ আকারের এ মূর্তিটিকে ধ্বংস করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজ স্থানীয় ভক্তদের সহায়তায় মন্দির টি আবারও প্রতিষ্ঠা করে। এরপর থেকে প্রতিবছর জীব জগতের শান্তি কামনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা বার্ষিক উৎসব ও সপ্তসতি চণ্ডি যজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
উৎসবে অংশ নেয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আসা ভক্ত বেলন রানী সাহা বলেন, ‘পবিত্র এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে এসে নিজের পরিবারের পাশপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় শ্রীশ্রী চণ্ডি মা এবং অনাদির আদি বাবা কাল ভৈরবের কাছে বিশেষ প্রার্থনা করছি।’
স্বস্তিকা দাস বলেন, ‘ছোট থেকে বাবা মায়ের সাথে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে আসতাম। এখন নিজের ছেলে মেয়েদের নিয়ে যজ্ঞ অনুষ্ঠানে এসেছি।স্মৃতিগুলো মনে পরছে। বাবা কালভৈরব ও মা চণ্ডি যেন সবার মঙ্গল করেন। এ প্রার্থনা করছি।’
কালভৈরব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য জানান, পুরোহিতেরা মধুসুধন চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মন্দির প্রাঙ্গণে বৈদিক পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে ৬দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়েছে। সপ্তসতি চন্ডি যজ্ঞ অনুষ্ঠানে পবিত্র মন্ত্রের মাধ্যমে দেশ জাতির পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি কামনা ও পাপ থেকে মুক্তির জন্য এই প্রার্থনা করা হচ্ছে। এ পবিত্র অনুষ্ঠানে সকল ধর্মবর্ণের মানুষ শামিল হচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে। ছয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মন্দিরের পাশে তিতাস নদীর তীরে বসেছে লৌকজ মেলা। প্রতিদিন অনুষ্ঠান সূচীর মধ্যে থাকছে যজ্ঞ-হরিনাম কীর্তন, গীতাপাঠ এবং মহাপ্রসাদ বিতরণ। আগামী ১১ মার্চ মঙ্গলবার শেষ হবে ৬দিন ব্যাপী উৎসবের মূল অনুষ্ঠানিকতা।