বাঞ্ছারামপুরে শুক্কুর আলী হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসির আদেশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে শুক্কুর আলী হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক সাবেরা সুলতানা খানম এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। এসময় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং দুইজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নায়ায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের আমিরুদ্দিনের ছেলে আফজাল কৈয়া ও আফজালের স্ত্রী হেলেনা বেগম। এই মামলা আফজালের পিতা আমিরুদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬মাসের কারাদণ্ড। এছাড়া আমিরুদ্দিনের অপর দুই ছেলে মো. সুমন ও ওমর ফারুককে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
রায় প্রদানকালে আফজাল কৈয়া ও আমিরুদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হেলেনা বেগম আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পর পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার শুক্কুর আলী ওরফে ফালান মিয়া একই এলাকার আমিরুদ্দিনের কাছ থেকে জমি কিনতে দাম বাবদ ৫লক্ষ টাকা দেন। কিন্তু এই জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে টালবাহানা করেন আমিরুদ্দিন। পরে আমিরুদ্দিন শুক্কুর আলীকে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সম্মত হন। রেজিস্ট্রি করার দুইদিন আগে আমিরুদ্দিন ও তার ছেলে আফজাল কৈয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দিতে আফজালের শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াতে দিয়ে নিয়ে যায়। এসময় শুক্কুর আলীর সাথে আমিরুদ্দিন, আমিরুদ্দিনের ছেলে আফজাল কৈয়া, মো. সুমন, ওমর ফারুক ও আফজালের স্ত্রী হেলেনা বেগম বেড়াতে যান।
এর মধ্যে আমিরুদ্দিন, সুমন ও ওমর ফারুক রূপগঞ্জে সেদিনই ফিরে আসেন। কিন্তু শুক্কুর আলী আর ফেরেন নি। শুক্কুর আলীর কথা তার স্ত্রী পারভীন আক্তার জিজ্ঞাস করলে আমিরুদ্দিনরা জানান শুক্কুর আলী সেইদিনই ফিরে এসেছে।
এর এক সপ্তাহ পর আফজাল কৈয়া ও তার হেলেনা বেগম ফিরে আসলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারাও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। পরে গ্রামের লোকজন নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানান শুক্কুর আলীকে মেরে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় গ্রামের লোকজন হেলেনাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এরই মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ৮ তারিখে সকালে মেঘনা নদীরপাড়ে গলাকাটা ও ভুড়ি বের হওয়া অজ্ঞাত (৩৫) একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ওই এলাকার চৌকিদার বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্কুর আলীর স্ত্রী রূপগঞ্জ থানাকে জানালে তারা বাঞ্ছারামপুর থানায় যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়। পরে পুলিশ আমিরুদ্দিন, সুমন ও ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়।
হেলেনা বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, শুক্কুর আলীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দুইদিন আগে বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দিরে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হেলেনা শুক্কুর আলীকে সন্ধ্যার পর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলে নদীপাড়ে নিয়ে যায়৷ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে হেলেনা তার সাথে থাকা ছুরি দিতে শুক্কুর আলীর লিঙ্গ কেটে ফেলে, পরে সেখানে পূর্বে থেকে থাকা হেলেনার স্বামী আফজাল শুক্কুর আলীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেন।
এই মামলায় ৫জনকে আসামি করে ২০১৩ সালের ২৯ মে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন বাঞ্ছারামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অংশু কুমার দে।
পরে বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আদালত এই রায় প্রদান করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করন।