তিতাস কমিউটার ঃ আসনবিহীনসহ দুই টিকেট না কাটলে মিলেনা টিকেট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাইকপাড়ার সজীব দেবনাথ ঢাকায় বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতি সপ্তাহেই বন্ধের দিনে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেতে তিনি বেশিরভাগ সময়েই তিতাস কমিউটার ট্রেনে চড়েন। সজীব দেবনাথের অভিযোগ, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ওই ট্রেনে করে আসতে দুটি টিকিট কাটতে হয়। এর মধ্যে একটি আসনসহ আর আরেকটি আসনবিহীন। আসনসহ টিকিট নিতে আসনবিহীন টিকিট কেনা মাসের পর মাস ধরে বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়েছে বলে জানালেন সজীব দেবনাথ।
গত ২৪ ডিসেম্বর একই ট্রেনে করে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মান্দারপুর গ্রামের সাদেক ভূঁইয়া রিপন ফিরছিলেন। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট কাটার সময় বলা হয় দুটি টিকিট নিতে হবে। আসনসহ টিকিটের জন্য আসন ছাড়া টিকিট নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলে বলা হয়, পারলে কিছু করেন।
তিতাস কমিউটার ট্রেনে ঢাকা থেকে ফিরতে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে গেলে প্রত্যেক যাত্রীকে একজনের বিপরীতে দুটি টিকিট কাটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি টিকিট আসন নম্বরসহ দেওয়া হয়। আরেকটি টিকিটে কোনো আসন লেখা থাকে না।
একজনের বিপরীতে দুটি দেওয়া টিকিটের একাধিক প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী যাত্রী এ নিয়ে একাধিক পোস্টও করেছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
যাত্রীরা জানান, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে আসনবিহীন টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচলকারী তিতাস কমিউটার ট্রেন কর্তৃপক্ষ সে সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। একে তো সিটের বিপরীতে আসনবিহীন বাড়তি টিকিট কাটতে হয়, পাশাপাশি আসনবিহীন টিকিটও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিনই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ টাকা।
তিতাস কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স টি এম ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। আখাউড়া-ঢাকা, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা, ঢাকা-আখাউড়া পথে মোট চারবার যাতায়াত করে ট্রেনটি। ট্রেনে মোট ১৩টি বগি সংযুক্ত আছে। ট্রেনটিতে উল্লেখিত চারবারে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ ট্রেনটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা ঢাকায় চাকরি করেন, কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ এ ট্রেনে চড়েন বেশি। ট্রেনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া পথের ভাড়া মাত্র ৬০ টাকা। যেখানে আন্তঃনগর ট্রেনে চড়লে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়। কালোবাজারিদের কাছ থেকে কিনতে গেলে সেটা গিয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়ে যায়।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঢাকা থেকে ফিরতে হলেই তাদেরকে দুই টিকিটের এ গ্যাঁড়াকলে পড়তে হয়। চাহিদা বেশি থাকার কারণে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে একজনের বিপরীতে দুটি টিকিট কাটেন। নিয়ম না থাকলেও যাত্রীদেরকে আসন ছাড়া টিকিট দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের আরো একটি অনিয়মের কথা জানিয়েছেন। সেটি হলো, ঢাকা থেকে ফেরার পথে পরবর্তী কাছের স্টেশনগুলোর আসনসহ টিকিট খুব বরাদ্দ রাখা হয়। এক্ষেত্রে কেউ কাছের স্টেশনে নামতে চাইলেও ওই স্টেশনের টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা আখাউড়া পর্যন্ত টিকিট কাটেন। ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ার পর তেজগাঁও, বিমানবন্দর, নরসিংদী, ভৈরব, আশুগঞ্জসহ কয়েকটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে।
যাত্রীরা জানান, কমলাপুর ও বিমানবন্দরের কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে গেলে অনেক সময় শুরুতেই ৬০ টাকার বদলে ১২০ টাকা চাওয়া হয়। যারা ভাড়া সম্পর্কে জানেন তারা প্রতিবাদ করলে অশোভন আচরণ করা হয়, কিংবা টিকিট নাই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। আর যারা জানেন না তারা ওই দামেই টিকিট ক্রয় করে ফেলেন। টিকিট নেওয়ার পর একটি আসনসহ ও আরেকটি আসনবিহীন দেখে ভ্যাবাচেকা খান। অন্য যাত্রীদের কাছ থেকে তারা অলিখিত এই নিয়মের কথা জানতে পারেন।
কসবার সমাজকর্মী মো. লোকমান হোসেন পলা নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, গত সপ্তাহেই তিনি ঢাকা থেকে ফেরার পথে দুটি টিকিট কাটতে বাধ্য হন। ট্রেনে উঠতে জানতে পারেন, প্রত্যেক যাত্রীকেই একটির বদলে দুটি করে টিকিট কাটতে হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মেসার্স টি এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন রিপনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত চারদিন ধরে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সর্বশেষ বুধবার বিকেলে কল করা হলেও অপর প্রান্ত থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
সূত্র ঃ কালের কন্ঠ