তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যুর পর ‘দুর্ব্যবহারকারী’ দুই আরএমওর রানা-ফায়েজের বদলি
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামানের (৫১) মৃত্যুর দুদিন পর আলোচিত দুই আবাসিক চিকিৎসকের (আরএমও) বদলির আদেশ হয়েছে। তাঁরা হলেন– মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান ও রানা নূরুস শামস। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাঁদের বদলির আদেশ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ওয়াহীদুজ্জামান কর্তব্যরত অবস্থায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। একই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বদলির আদেশ পাওয়া দুই চিকিৎসক গত বছর তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ না দেখলেও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যুর দুদিনের মাথায় বদলির আদেশ পেয়েছে।
মহাপরিচালকের পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মো. হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত আদেশে মোহাম্মদ ফাইজুর রহমানকে বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং রানা নূরুস শামসকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। আদেশে প্রজ্ঞাপন জারীর ২ কর্ম দিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বভার হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে বদলি আদেশের কথা বলা হলেও আলোচনা রয়েছে গত বছরের জুলাই মাসে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সদ্য প্রয়াত ডাক্তার ওয়াহীদুজ্জামানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় দুই আবাসিক চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডিউটিতে ফাঁকি দেওয়া নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার ওয়াহীদুজ্জামানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান চক্ষু বিভাগের ওবায়দুল হকসহ আরও কয়েকজন চিকিৎসক। তাঁরা হাসপাতালে বৈকালিক সেবা দিতে আপত্তি করেন। এ নিয়ে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের দরজায় লাথি দিয়ে বের হয়ে যায় ওবায়দুলসহ তাঁর সঙ্গে আসা অন্য চিকিৎসকরা। পরে এই চিকিৎসকরা ওই দুই আবাসিক চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে এসে তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে আবারো বিবাদে জড়ায়। ঘটনার ওই মাসেই দায়িত্বে অবহেলার জন্যে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক আবাসিক দুই চিকিৎসকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছিলেন । এ কারণে তত্ত্বাবধায়কের ওপর ক্ষোভ ছিল তাঁদের। ওই ঘটনার পরদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত দল হাসপাতালে এসে ঘটনার তদন্ত করেন। পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) হিসেবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে শক্ত হাতে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছিলেন। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাতে বিরাট পরিবর্তন আসে। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিতি এবং হাসপাতাল ত্যাগের বিষয়ে কঠোর ছিলেন ওয়াহীদুজ্জামান। এতে অনেকের ডিউটি ফাঁকি বন্ধ হয়ে যায়। সেবার মানে উন্নতি হওয়ায় গত বছর সারা দেশে প্রথম হয়েছে এই হাসপাতাল।
দুই আবাসিক চিকিৎসকের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর ওই ঘটনার সময় আমি এখানে ছিলাম না। অধিদপ্তরে ছিলাম।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার একরামুল্লাহ বলেন, ‘বদলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করেছেন। নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলেননি। তদন্ত আগেই হয়েছিল। আদেশটা হঠাৎ হয়েছে।’