Main Menu

“আমার শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাম্প্রদায়িক নয়”

+100%-

kolkataসৌমেন শীল, কলকাতা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাঙালি অধ্যুষিত এই রাষ্ট্রের ভাষা আন্দোলন নজর কেড়েছিল রাষ্ট্রসংঘের। বাঙালা ভাষা নিয়ে আন্দোলনের কারণেই ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে। সেই বাংলাদেশই এখন আবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। কারণটা অবশ্য গর্বের নয়।

বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্পদায়িক হিংসার ঘটনা এই মুহূর্তে কমবেশি সমগ্র বিশ্বেই আলোচিত হচ্ছে। যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে মানতে নারাজ ওই শহরের বাসিন্দা এক যুবক। বর্তমানে কলকাতায় পড়তে আসা ছেলেটি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকৃত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। সাম্প্রদায়িকতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নাম জড়ালে ভবিষ্যতে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সেটিই এই গোপনীয়তার প্রধান কারণ। তাঁর কথায়, “আমার শহরে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বড় হয়। ওই শহরে মাদ্রাসার আলেম ও ছাত্রদের ভয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাড়িয়ে বেড়ায় না।” নিজের সেই প্রিয় শহর সাম্প্রদায়িক হতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। নিজের শহর সম্পর্কে তিনি আরও বলেছেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ‘মৃত্তিকা রানীর’ বাসায় বসে ক্রিকেট খেলা দেখে বহু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, সুরবালা দিদির মেয়ের বিয়ের টাকাও নাকি জোগাড় করেছিল এই শহরের মাদ্রাসার ছাত্ররাই । পাশের শহর হবিগঞ্জ, সেখানে বহু মাদ্রাসা আছে যেখানের দেয়াল ঘেঁষে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। বহু যুগ ধরে মাগরিবের আজান আর উলুধ্বনি একসঙ্গে হয়, কোনও দিন সমস্যা হয়নি। ফজরের ঘন্টা দুয়েক আগে মাদ্রাসার ছেলেরা গায়ের জোর দিয়ে কোরআন শরীফ পড়ে কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো ঘুম ভাঙে না, সমস্যা হয় না। এটাই বেঁচে থাকা। এইটাই অসাম্প্রদায়িকতা।”

bbaria
কাবা শরীফে শিব মূর্তির ছবি প্রতিস্থাপনের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে এবং উপাসনালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় জড়িত সকলের শাস্তি হওয়া উচিত বলেই মনে করেন কলকাতায় পড়তে আসা ভিন দেশের সেই বাঙালি ছাত্র। এই ঘটনার পিছেন রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। সেই তালিকায় নিজেকেও রাখছেন এই পড়ুয়া। তাঁর মতে, “সাম্প্রদায়িকতার বীজ বাংলাদেশে ধর্মীয় আলেমরা নিয়ে আসেননি, সে বীজ বপন করেছেন আমার দেশের প্রধান সারির রাজনৈতিক দলগুলো । তারা ধর্ম নিয়ে প্রথমে ব্যবসা করেছেন, তারপর সু-কৌশলে ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। এই সাম্প্রদায়িক গালি দিয়ে আর যাই হোক, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হয় না। এই গালি দিলে আপনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দিন। যারা দিনের পর দিন সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে নির্বাচনের আগে টুপি পড়ে নামাজে যায়, যারা তসবি হাতে ভোট ভিক্ষা করে, যারা গোলাপ-সুগন্ধি মেখে হেফাজতের জন্য দরদ দেখায়, যারা ইসলামের নাম দিয়ে নাশকতা চালায়, যারা ইসলামের নামে বাংলাদেশে বোমা মারে।”

চলতি মাসের প্রথম দিনে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল প্রতিবেশী মুসলিমরা।’ এই ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় নিদর্শন বলে জানিয়েছেন নাম কলকাতায় পড়তে আসা প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ছেলেটি।






Shares