১৮৫৭-র বিদ্রোহের সিপাহির খুলি ভারতে ফিরিয়ে সমাহিত করা হোক, চাইছেন ইংল্যান্ডের ইতিহাসবিদ
লন্ডন: ১৮৫৭-র বিদ্রোহের সময় প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত এক ভারতীয় সৈনিকের মাথার খুলি ভারতে ফেরানো হোক এবং যেখানে জীবনের শেষ যুদ্ধ করেছিলেন, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হোক। এমনটাই চাইছেন এক ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ।
লন্ডনের কুইনস মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ান ড. কিম ওয়্যাগনার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসই তাঁর বিষয়। তিনি মনে করছেন, ব্রিটিশরা যাকে সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, সেই বিদ্রোহের অন্যতম নেতা হাবিলদার আলম বেগের খুলি তাঁর জন্মভূমিতেই সমাহিত করাটাই সঠিক হবে।
বিদ্রোহের পর আলম বেগের প্রাণদণ্ডের সময় কর্মরত ক্যাপ্টেন এ আর কোস্টেলো ওই খুলি ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছিলেন। পরে ওই খুলিটি পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্টে উপকূলবর্তী শহর ওয়ালমারে পাওয়া যায়।
ওয়্যাগনার বলেছেন, আলম বেগ আদতে কানপুর রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিলেন। কিন্তু আমার প্রস্তাব তাঁর খুলি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে রাভি নদীর কাছে সমাহিত করা হোক। যেখানে আলব বেগ ট্রিম্মু ঘাট যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
ওয়্যাগনারের লেখা ‘দ্য স্কাল অফ আলম বেগ: দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অফ অ্যা রিবেল অফ ১৮৫৭’ গ্রন্থ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়্যাগনার বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য আলম বেগের দেহাবশেষ তাঁর স্বদেশে পাঠানো মৃত্যুর ১৬০ বছর পর ওই সৈনিক কিছুটা শান্তি তো পেতেই পারেন’।
ইতিহাসবিদের এই প্রস্তাবে আলম বেগের খুলি দেশে পাঠানো নিয়ে দুই দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে ‘সম্ভাব্য আলোচনার’ জল্পনা তৈরি করেছে। তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ। অবিলম্বে এ ব্যাপারে কোনও নিষ্পত্তি ঘটে যাবে এমনটা তিনি আশা করছেন না।
১৮৫৭-র বিদ্রোহ নিয়ে তাঁর গবেষণা ও আলম বেগের দুঃখজনক মৃত্যু নিয়ে বই লেখার সূত্রপাত ২০১৪-তে। ওই বছরই খুলিটি যাদের হাতে ছিল, সেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাঁর।
১৯৬৩-তে দ্য লর্ড ক্লাইড পাবের নতুন মালিক স্টোররুমে ওই খুলিটি দেখতে পান। শুধু খুলি নয়, খুলির ভিতরে রয়েছে ইংরেজিতে লেখা ছিল এক চিরকুট। তাতে সবিস্তার লেখা, খুলিটা কার।
নোটে লেখা ছিল, এই খুলিটি আলম বেগ নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর এক কর্মীর। তাঁর বিরুদ্ধে এক স্কটিশ মিশনারির পরিবারের সদস্যদের খুন করার অভিযোগ ছিল।
পরে ধরা পড়েন তিনি এবং কামানের গোলায় উড়িয়ে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত আইরিশ অফিসার ক্যাপ্টেন কোস্টেলে খুলিটি স্মারক হিসেবে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন।
ওয়্যাগনার বলেছেন, আমার গবেষণায় বিভিন্ন চমকপ্রদ দিক উঠে এসেছে। যে অপরাধের জন্য আলম বেগের প্রাণদণ্ড হয়েছিল, সম্ভবত সেই অপরাধ করেননি তিনি।
খুলির সঙ্গে যে চিরকূট পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল যে, বেগের বয়স ৩২, উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চি। ৪৬ তম বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সিপাহি ছিলেন তিনি।