দিল্লি সহিংসতা: সাম্প্রদায়িক হামলার মধ্যেই হিন্দু মুসলমানদের হাতে হাত রাখার গল্প



বিবিসি বাংলা:: মনোজ শর্মা আর জামালউদ্দিন সাঈফী রবিবার বিকেলে তাদের বাড়ির কাছে পাশাপাশি বসেছিলেন। আর ঠিক তখনই মেইন রোডের দিক থেকে একদল সশস্ত্র দাঙ্গাবাজ এগিয়ে আসছিলো বিজয় পার্কের দিকে।তারা ইট-পাটকেল ছুঁড়ছিল আর দোকানপাট ভাংচুর করছিলো।
অবস্থা দেখে তখন পালানো ছাড়া মিস্টার শর্মা ও মিস্টার সাঈফীর আর কোনো বিকল্প ছিলো না।কিন্তু তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পালিয়ে যাননি। কিছুক্ষণ পরেই ওই এলাকার আরও লোকজনকে একত্রিত করে নিজেদের গলি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন দাঙ্গাকারীদের।এর মধ্যে পুলিশের কয়েকটি গাড়ীও দেখা গেলো সেখানে।ততক্ষণে দাঙ্গাকারীরা যা করেছে, প্রধান সড়কে তা ছিলো দৃশ্যমান – জানালার ভাঙ্গা গ্লাস, পুড়ে যাওয়া মোটরবাইক ও গাড়ী।পরে পরিচ্ছন্নকর্মীরা এসব সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে।
স্থানীয় অধিবাসী আব্দুল হামিদের অভিযোগ, ‘পুলিশই উস্কানি’ দিয়েছে দাঙ্গাকারীদের, যারা রড আর লাঠি হাতে উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছিলো।অনেকে বলছেন গুলিও হয়েছে সেদিন, আর বিহার থেকে আসা একজন শ্রমিক – মুবারক নামে একজন – তাতে প্রাণ হারিয়েছেন।জামালউদ্দিন সাঈফী বলেন, ওইদিন দাঙ্গাকারীরা এলাকায় ঢুকতে না পারলেও পরেরদিন অর্থাৎ সোমবার তারা আবার চেষ্টা করে।তবে তিনি বলেন যে ওইদিন তাদেরও যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল।
“এলাকার প্রধান লেনগুলো বন্ধ ছিল আর বহু মানুষ একসাথে বসেছিলো,” বলছিলেন মিস্টার সাইফী, যার নিজের বাড়িও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মৌজপুর এলাকাতেই বিজয় পার্ক। আর ওই মৌজপুরই এবারের সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি।মৌজপুর-বাবরপুর মেট্রো স্টেশন এখনো বন্ধ, যদিও অন্য এলাকায় ট্রেন চলছে স্বাভাবিকভাবেই।
বিজয় পার্ক এমন একটি এলাকা, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানরা পাশাপাশি বাস করে। এলাকার দুটি লেনে মন্দিরও আছে, আবার মসজিদও আছে – ভারতের অন্য অনেক শহরের মতোই।
ফলে যে কোনো ধরণের দাঙ্গায় এলাকাটির পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ।
পবন কুমার শর্মা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি জানালেন যে স্থানীয়রা একটি কমিটি করেছেন বিশ জন সুপরিচিত ব্যক্তিত্বকে নিয়ে, যাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই আছে।
তারা ঘরে ঘরে গেছেন এবং লোকজনকে কোনো গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করেছেন।
মিস্টার শর্মা বহু বছর ধরে মন্দিরের একজন ট্রাস্টি। দাঙ্গাকারীরা ওই এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করার একদিন পর মঙ্গলবারে তারা একটি শান্তি মিছিল করেছেন।
জুলফিকার আহমেদ পিস কমিটির একজন সদস্য।তিনি বলছেন, “গলির মুখে রাতভর আমাদের এলাকার লোকজন ছিলো। যে গলিতে হিন্দু বেশি সেখানে তাদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। আবার যেখানে মুসলিম বেশি সেখানে মুসলমানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে”।ধরম পাল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং এলাকায় এখন খুবই সক্রিয়। তিনি বলেন, এখন পুলিশ যদি নাও থাকে তাহলেও কিছু হতে দেব না।
বিজয় নগরে অলিগলিতে জীবন যাত্রা এখন স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। হিন্দু সবজি বিক্রেতারা আবার সক্রিয় হয়েছেন। তবে তারা যে এলাকা থেকে আসেন সেখানে তারা দাঙ্গা দেখেছেন অনেকে।তবে গুলিতে তরুণ মুবারকের মৃত্যু মানুষকে বেশ কষ্টই দিয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সুরেন্দ্র সিং রাওয়াত