কলকাতায় ধরা পড়েছে মোস্ট ওয়ান্টেড ‘জামাই ফারুক’ :: স্বস্তিতে ঢাকা
দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: বাংলাদেশের জামাত–উল–মুজাহিদিন–এর (জেএমবি) নীতি নির্ধারণকারী সর্বোচ্চ স্তর ‘সুরা’ সদস্য ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালোভাই সীমান্তের ওপারে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে ঢাকার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় শেখ হাসিনার মিছিলে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫–এর ১৭ এপ্রিল সে দেশে পরপর ৫০০টি বোমা বিস্ফোরণ–কাণ্ড, ওই বছরের ১৪ নভেম্বর আত্মঘাতী বোমায় ময়মনসিংহের দুই বিচারককে হত্যা, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশলায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশকর্মী আতিকুল ইসলামকে খুন করে তিন জঙ্গি ছিনতাই থেকে হাল আমলের গুলশান আর শোলাকিয়া ইদগাহের হামলা—সব ক’টি ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছিল এই জঙ্গির। এহেন শীর্ষ জঙ্গিকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) গ্রেপ্তার করায়, ঢাকার গোয়েন্দা মহলে এখন স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট। বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিইউ) প্রধান মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার ঢাকা থেকে টেলিফোনে জানান, কলকাতা পুলিশের এসটিএফ’কে অভিনন্দন। আনোয়ারকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম আমরা। ত্রিশলায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ সে। এদেশে ‘জামাই ফারুক’ বলে পরিচিত সে। এহেন ফারুক যাবতীয় জঙ্গি নাশকতার সঙ্গে যুক্ত। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে পরিচিত আনোয়ার। একইভাবে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়া রফিক ওরফে রুবেল এবং জাহিদুল ওরফে জাহিদও মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জামালপুরের বাসিন্দা আনোয়ার জেএমবি’র সঙ্গে যুক্ত হয় ২০০৩ সালে। সংগঠনের প্রধান সাইদুর রহমান এবং সেকেন্ড–ইন–কমান্ড বাংলা ভাইয়ের হাত ধরে খুব দ্রুত পৌঁছে যায় সর্বোচ্চ স্তর মজলিশ–এ–সুরা’তে। এরপর থেকে সে দেশে যতগুলি নাশকতার কাজে জেএমবি যুক্ত হয়েছে, তার সব ক’টির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তার। সবমিলিয়ে ৩০টি’র বেশি নাশকতার মামলা রয়েছে তার নামে। ত্রিশলার মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও জমা পড়েছে। কয়েকটি মামলায় সে দেশের আদালতে কারাদণ্ডেও দণ্ডিত হয়েছে ফারুক।
এহেন জঙ্গির নাশকতা অপারেশনে মধ্যে সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশলার সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলার ঘটনাটি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর জেল থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে জঙ্গিবাহী প্রিজন ভ্যানে একে–৪৭ রাইফেল এবং গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় জেএমবি। গোয়েন্দারা বলছেন, ওই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকর্মীদের উপর লাগাতার গুলি চালায় আনোয়ার। এ ঘটনায় ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, আনোয়ারের ছোঁড়া গুলিতেই মৃত্যু হয় কনস্টেবল আতিকুল ইসলামের। এমনকী হামলার জন্য খরচ হয়েছিল যে ৬০ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা, তাও জোগাড় করেছিল সেই। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন ফারুকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া খুনের মামলা এখন শুধু রায়দানের অপেক্ষায়। গোয়েন্দারা বলছেন, ওই হামলায় পুলিশ হেপাজত থেকে আনোয়ার ও তার দলবল ছিনিয়ে নিয়েছিল সালেহান এবং বোমা মিজানের মতো শীর্ষ জঙ্গি। এরপরই রাজশাহি সীমান্ত পার করে এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে জামাত–উল–মুজাহিদিনের ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নেয় তারা। এপারের গোয়েন্দারা বলছেন, নাম সামনে না এলেও খাগড়াগড় পর্বে রীতিমতো যুক্ত ছিল আনোয়ার। খাগড়াগড় পর্বের পর বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল সে। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা এলাকায় নাম ভাঁড়িয়ে জঙ্গি সংগঠনের কাজ পরিচালনা করত। গোয়েন্দারা বলছেন, বাংলাদেশি আনোয়ার হোসেন ফারুকই বর্তমানে নিউ জেএমবি’র এ রাজ্যের প্রধান।