করোনাভাইরাস: মসজিদুল হারামের খতিবের নির্দেশনা
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন সবার মাঝে এক মহা আতংক ও আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামে সাপ্তাহিক পাঠদানে মক্কা ও মদিনাবিষয়ক অধিদফতরের প্রধান এবং মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শাইখ আব্দুর রহমান সুদাইস এ বিষয়ে শরয়ী নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ (সূরা বাকারা: ১৫৫)
আল্লাহ মানুষকে নানা মুসিবত দিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষায় ফেলেন। এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের বিপরীত কিছু নয়।
অন্যত্র আল্লাহর ইরশাদ হয়েছে, (হে নবী) আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না। কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা তওবা: ৫১) একজন মুসলিম সদা আল্লাহর সিদ্ধান্ত এবং ফয়সালার প্রতি ঈমান রাখে।
ভয়াবহ এই করোনাভাইরাস ব্যাধিতে মানুষ আজ তিন ভাগে বিভক্ত। দুই পক্ষ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির দু’প্রান্তে। তৃতীয় একটি পক্ষ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। একপক্ষ শুধু ভরসা করে কিন্তু বাহ্যিক কোনো উপায় অবলম্বন করে না। আরেক পক্ষ নানাপন্থা অবলম্বন করলেও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে না। (যা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি)।
অপরদিকে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারীদের বৈশিষ্ট্য হল, তারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখার পাশাপাশি সুরক্ষার নিমিত্তে পূর্ণ সতর্কতা নিয়ে নানা উপায় অবলম্বন করে। এ ব্যাধিটি ছড়িয়ে না পড়তে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে সৌদি রাষ্ট্রের পরিচালিত বাস্তবসম্মত নীতি এটিই।
যেমনটি ইবনে আব্বাস রাজি.-এর সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, যদি তোমরা মহামারীর কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে তোমরা প্রবেশ হতে বিরত রাখ। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারীতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হইওয় না।’ (সহিহ বোখারী: ৫৩৯৬নং হাদিস)
মূলত এ হাদিসটির উদ্দেশ্য যাতে সে ব্যাধিটি সংক্রমণ না হয়।
তাছাড়া অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেন, কোন্ সংক্রামণ ব্যাধিটি কিংবা কুলক্ষণ নেই।’ (সহিহ মুসলিম: ২২২২নং হাদিস) এই হাদিসটি বাহ্যিকভাবে সামগ্রিক অর্থ ধারণকারী নয়। বরং এক ব্যক্তি হতে অন্য ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ একমাত্র আল্লাহর হুকুমেই ছড়ায়। এ হাদিসের প্রেক্ষাপট ছিল জাহেলি যুগের নানা চিত্রকে প্রত্যাখ্যান করে।
কেননা, তারা সংক্রামণ ব্যাধির ব্যাপারে নিজেদের মানুষ বা রোগীকে দায়ী করত। ব্যাপারটি আসলে এমন নয়, এ সবকিছু আল্লাহর হুকুমেই সম্পাদিত হয়।
এই কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সিংহের নিকট হতে পলায়নের ন্যায় তুমি কুষ্ঠ রোগী হতে পলায়ন কর।’ (মুসনাদে আহমদ) নবীজির উদ্দেশ্য হল, তুমি উপায় অবলম্বন কর।
এই কারণে লক্ষ্য করা গেছে, এই ভাইরাস মোকাবেলায় কিছু মানুষ মসজিদ হতে পলায়ন করছে। এটি মানুষের মানবিক দুর্বলতা। তবে মানুষদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর আশ্রয় হতে এক পলকও অমুখাপেক্ষী হওয়ার সুযোগ নেই।
যেমনটি নবী ইব্রাহীমের (আ.) উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন,আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। (সূরা শুআরা: ৮০)
যদি করোনার এই ভাইরাস প্রতিরক্ষায় জগৎবাসী যদি একত্রিত হয়ে যায়, তো আল্লাহর আদেশ, সিদ্ধান্ত ও ফায়সালা ছাড়া কোনোরূপেই তা হতে বাঁচা সম্ভব নয়। তাই বান্দাহর জন্য অবশ্য করণীয় হল আল্লাহর সমীপে ধাবিত হওয়া এবং একমাত্র তাঁর প্রতি ভরসা রাখা।
মানুষের ভয়-ভীতি, শংকা বা আতংকের ফলে আজ একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহ কিংবা মসজিদে আসা কিংবা নিজেকে অপর হতে আড়াল করে চলছে। আফসোস! তবে মনে রাখতে হবে, সবকিছু আল্লাহর হুকুমেই হয়।
বাহ্যিক উপায় অবলম্বনে নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখুন, দু’হাত ধৌত করুন। আবর্জনার মাধ্যমে ব্যাধি আপনার দিকে সংক্রামণ না হতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। সতর্কতামূলক এ সব ব্যবস্থাপনা অবলম্বন সুন্নাহর একটি অংশ। এটি আল্লাহর ওপর ভরসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
একদা উটের মাঝে খোস-পাঁচড়া রোগ দেখা দিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আক্রমণ হওয়া প্রথম উটটির মাঝে কে এই রোগের সংক্রামণ ঘটাল। তাই সর্বোচ্চ সতকর্তা অবলম্বনে সাময়িকভাবে উমরাসহ মক্কা ও মদীনায় আগমণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তথ্যসূত্র: হারামাইন ডেস্ক।