আমফান ধ্বংস করে দিলো পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়ে সব তছনছ করে দিলো আমফান। এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রচুর এলাকা বিচ্ছিন্ন।
পশ্চিমবঙ্গ বিপর্যস্ত। রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে আমফান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ”উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।” হাজার হাজার বাড়ি ভেঙেছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য ব্রিজ। ভেসে গিয়েছে রাস্তা। অসংখ্য বাঁধ ভেঙেছে। জল ঢুকে গিয়েছে বহু জায়গায়। অন্ততপক্ষে ১২ জন মারা গিয়েছেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানীয় জল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ”কবে দুর্গত জায়গায় পৌঁছনো যাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে কত ক্ষতি হয়েছে তা বুঝতে। আমি এখনও সব খবর পইনি।” এতখানি এলাকা জুড়ে এই ধরনের ধ্বংসলীলা এর আগে কবে হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও। লাখ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ রাতারাতি সর্বহারা হয়ে পড়েছেন। একে করোনা, তার ওপর আমফানের তাণ্ডব পশ্চিমবঙ্গকে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।
রীতিমতো হতাশ এবং দুঃখিত মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ”আমফানযেখান দিয়ে গিয়েছে, সেখানে সব বাঁধ, ব্রিজ, রাস্তা, বাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। এ দিকে করোনার ফলে রাজ্য়ের হাতে এখন আর টাকা নেই। কী করে অবস্থা সামলাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করছি, দয়া করে রাজনীতি করবেন না। সাহায্যের হাত বাড়ান। গোটা বিশ্বের কাছে সাহায্য়ের আবেদন করছি।”
তবে আমফানের তাণ্ডব এখনও শেষ হয়নি। কলকাতা সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি সহ বহু জেলায় গভীর রাত পর্যন্ত ঝড় ও বৃষ্টি চলছে। সারারাতও চলতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ”দক্ষিণ ২৪ পরগনা তো ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। কৃষি শেষ। বাড়িঘর শেষ। বাঁধ শেষ। রাস্তা শেষ। এরকম তাণ্ডব হবে ভাবিনি। তাও তো আমরা পাঁচ লাখ লোককে একদিনের নোটিসে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম বলে তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু আমফান এলাকার পর এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে। নদীর জলে ভেসে গিয়েছে বহু এলাকা। রাজারহাট থেকে বনগাঁ, বাগদা, হাবড়া, ও দিকে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ সব শেষ।”
মুখ্যমন্ত্রী যখন নবান্নে এই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, তখনও বোঝা যাচ্ছে ঝড়ের তীব্রতা। নবান্নের সাউন্ডপ্রুফ ঘরের ভিতরের মাইকেও শোনা যাচ্ছে তার শব্দ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, নবান্নেরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তাঁর নিজের ঘরে তিনি ঢুকতে পারেননি। জানলা ভেঙে গোটা ঘরে কাচ ছড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ি মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠেছে। কলকাতার বহুতল বাড়ি থেকে এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে জানলার কাচ ও কপাট। কলকাতার অবস্থাও খুব খারাপ।
ক্ষতিটা শুধু মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা ও সুন্দরবন ও কলকাতায় হয়নি, তার সঙ্গে হাওড়া, হুগলি সহ আশপাশের সব জেলায় হয়েছে। এমনকী বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাতেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। এককথায় এমন বিপর্যয়ের মুখে পশ্চিমবঙ্গ কমই পড়েছে।