Main Menu

শ্রীলংকার নির্বাচনে কেন জিতলেন বিতর্কিত রাজনীতিক গোটাবায়া রাজাপাকসে

+100%-

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে বিজয়ী হয়েছেন। মি. রাজাপাকসে – যিনি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসের ভাই – তিনি ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পান।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন, এবং সোমবারই হয়তো গোটাবায়া রাজাপাকসে শপথ নিতে যাচ্ছেন।

মি. রাজাপাকসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের যেভাবে দমন করেছিলেন তা নিয়ে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠেছিল। তাকে নিয়ে শ্রীলংকার মুসলিমদের মধ্যেও ভয়-উদ্বেগ আছে।

কিন্তু একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হয়েও কেন বিজয়ী হলেন তিনি?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, এই নির্বাচনকে ঘিরে শ্রীলংকার জনগণের মধ্যে বিভক্তি ছিল স্পষ্ট ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মি. রাজাপাকসে সিংহলী সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় বেশি ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মি. প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা ছিল সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিমদের মধ্যে।

কিন্তু নির্বাচনের আংশিক ফল বেরুনোর পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে গোটাবায়া রাজাপাকসেই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।

গোটাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলংকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রায় দশ বছর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এবং শ্রীলংকায় তামিলদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ অবসানের কৃতিত্ব দেয়া হয় তাদের।

সেসময় গোটাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেরকম কঠোর এবং নিষ্ঠুরভাবে তিনি দমন করেছিলেন, সেজন্যে তিনি বেশ বিতর্কিত।

রাজপাকসে ভাইয়েরা প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় কয়েকদশকব্যাপি চলা তামিল টাইগার বিদ্রোহ দমন করা হয় – যে যুদ্ধে সব মিলিয়ে এক লক্ষ লোক নিহত হয়েছিল। তা ছাড়াও ২০০৫ থেকে ২০১৫-র মধ্যে সরকার-সমালোচক সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, তামিলসহ হাজার হাজার মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে।

তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগ ওঠে – কিন্তু গোটাবায়া রাজাপাকসে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।

এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানেও মি. রাজাপাকসে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

তার বিজয়ে শ্রীলংকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিরা বেশ উৎফুল্ল।

সাংবাদিকদেরকে একজন ভোটার বলেন, তিনি সবসময়ই চেয়েছিলেন মি. রাজাপাকসেই যেন প্রেসিডেন্ট হন। আরেকজন বলেন, মিস্টার রাজাপাকসে শ্রীলংকার নিরাপত্তার ব্যাপারে যেসব অঙ্গীকার করেছেন, তার সঙ্গে তিনি একমত বলেই তিনি তাকে সমর্থন দিয়েছেন।

গত এপ্রিলে শ্রীলংকায় এক ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর এটি ছিল শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন।

ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পর্কিত জঙ্গিরা শ্রীলংকার গির্জা এবং অভিজাত হোটেলগুলোকে টার্গেট করে এই হামলা চালিয়েছিল, যাতে নিহত হয় আড়াইশোর বেশি মানুষ।

শ্রীলংকার মুসলিমরা অভিযোগ করেন যে গত সাত মাস ধরে দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটা ঘৃণা ছড়ানোর অভিযান চলছে, এবং এর পেছনে ছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলো।

বিবিসির জিল ম্যাকগিভারিং বলছেন, শ্রীলংকার মুসলিমরা আড়ালে স্বীকার করেন যে তারা রাজাপাকসের বিজয়ের সম্ভাবনায় ভীত ছিলেন, কারণ তার বিরুদ্ধে মুসলিমবিরোধী উগ্রপন্থীদের সুরক্ষা দেবার অভিযোগ আছে।

মুসলিমরা এমনও আশংকা করেছিলেন যে রাজাপাকসে জিতলে সহিংসতা ও বর্ণবাদ বেড়ে যাবে।

অবশ্য নির্বাচনের ফল বেরুনোর পর মি. রাজাপাকসে এক টুইটে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্রীলংকার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ এই নতুন যাত্রার সাথী।

মি. রাজাপাকসে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকে।

অন্যদিকে সাজিথ প্রেমাদাসা ভালো করেছেন তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলে।

তিনি জোরালো সমর্থন পেয়েছিলেন তামিল এবং মুসলিমদের কাছ থেকে।

কিন্তু শ্রীলংকার বর্তমান সরকারের সঙ্গে মি. প্রেমাদাসার সম্পর্ক তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছিল।

শ্রীলংকা গত কিছুদিন ধরে যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে দেশটিকে স্থিতিশীল করতে মি. রাজাপাকসে ভূমিকা রাখবেন বলে তার সমর্থকরা আশা করছেন।

মি. রাজাপাকসে আরও বলেছিলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন।

চীনের কাছে শ্রীলংকা যেরকম ঋণগ্রস্ত, সেটি নিয়ে দুদেশের সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন চলছে। শ্রীলংকার রাজনীতিতে এটি বেশ স্পর্শকাতর বিষয়।

সে কারণে বিশ্লেষকদের মতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজটি সহজ হবে না, বিশেষ করে যখন তাকে ভারতের সঙ্গেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ বজায় রাখতে হবে।






Shares