Main Menu

ভারতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুও

+100%-

ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ালো, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ২৭। বন্ধ হচ্ছে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের ঘরে ফেরা।

লকডাউন চলছে, তাও থামানো যাচ্ছে না করোনার সংক্রমণ। সরকারি হিসেব বলছে, করোনায় এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৪। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। তবে বেসরকারি সূত্রের দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা এগারোশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পংয়ে করোনায় আক্রান্তহয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। বিশ্ব স্বাস্থা সংস্থা যতই ঢালাও করোনা পরীক্ষার জন্য দেশগুলিকে অনুরোধ করুক না কেন, ভারতে এখনও করোনার পরীক্ষা কম হচ্ছে। অনেকে করোনা হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার করছেন। ফলে করোনা গোষ্ঠীর ভিতরে ছড়াতে শুরু করেছে বলে অনেকের ধারণা।

পশ্চিমবঙ্গেই এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বোঝা গিয়েছে তাঁর করোনা হয়েছে। পাঞ্জাবে বিদেশ থেকে ফিরে কোয়ারান্টিনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে দুই ব্যক্তি গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। তাঁদেরও করোনা ধরা পড়েছে। এরকমই একটি পরিবার বিয়ে বাড়িতেও চলে গিয়েছে। গায়িকা কণিকা কাপুরের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। মধ্যপ্রদেশে দুইজন করোনা আক্রান্ত হাসপাতাল থেকে পালিয়েছিলেন, তাঁদের আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কেরালায় করোনা আক্রান্ত এক আধিকারিক নিষেধ না মেনে উত্তরপ্রদেশে বাড়িতে ফিরেছেন। রাজ্য প্রশাসন তাঁকে সাসেপন্ড করেছে।

করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি ও সম্পূর্ণ লকডাউন চলতে থাকায় সব চেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন ভিন রাজ্যের শ্রমিক ও গরিবরা। গত দুই দিন ধরে দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাসে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। দিল্লিতে তাঁদের থাকার জায়গা নেই, যাঁদের সাময়িক আশ্রয় আছে, তাঁদের খাবার কেনার টাকা নেই। অভুক্ত অবস্থায় তাঁরা হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কয়েকজন পথেই মারা গিয়েছেন। এই অবস্থায় উত্তরপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করে, তারা এক হাজার বাস দেবে। শ্রমিকদের উত্তরপ্রদেশে নিয়ে আসা হবে সেই বাসে। শনিবার থেকে সেই বাসে করে নিজেদের গ্রামে ফেরার জন্য হাজারো মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে একে অন্যের সঙ্গে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। জ্বর ও সর্দি-কাশির পরীক্ষা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অত জনের মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত থাকেন, তা হলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে।

সোমবার সকালেও আনন্দ বিহারে ভিড় ছিল যথেষ্ট। বস্তুত, এই সমস্যা কেবল দিল্লিতে নয়, অধিকাংশ রাজ্যই কমবেশি এই সমস্যায় ভুগছে। এই অবস্থায় রোববার কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির প্রতি একটি নির্দেশনামা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ” জেলা ও রাজ্যের সীমানা সিল করে রাখতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় জিনিস নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও গতিবিধি যেন না হয়। কিছু রাজ্যে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের গতিবিধি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শহর বা রাস্তা দিয়ে এই ভাবে লোক চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। গরিব ও ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করতে হবে। এর জন্য দরকার হলে কেন্দ্রের একটি তহবিলের অর্থ তারা ব্যবহার করতে পারবে। আর কেন্দ্রীয় নির্দেশ ঠিকভাবে রূপায়ণের জন্য জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।”

কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশের পর ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের বাস দেওয়া তো দূরস্থান, হেঁটে বাড়ি ফেরাও মুশকিল হয়ে গেল। আগেই তাঁদের পুলিশের মার খেতে হচ্ছিল। এ বার নির্দেশ চলে আসায় তাঁরা আর বাড়ি ফিরতে পারবেন না। যেখানে আছেন, সেখানেই থাকতে হবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তিনি ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সরকারি স্কুলগুলিকে সাময়িক আশ্রয়শিবিরে পরিণত করা হচ্ছে। পুলিশকে বলা হয়েছে, তারা যেন শ্রমিক ও গরিব লোকেদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়।

কংগ্রেস অবশ্য ভিন রাজ্যের গরিব শ্রমিকদের এই দুরবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ, সরকার অনেক দিন ধরেই জানতো, করোনা প্রবল আকার নিচ্ছে। রাহুল গান্ধীও বারবার সরকারকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। তা সত্ত্বেও কোনওরকম চিন্তাভাবনা না করে, আগে থেকে ঘোষণা না করে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষেরা এখন যাবেন কোথায়?

রোববার প্রধানমন্ত্রী মোদী রেডিওতে তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, ”এই কঠিন পদক্ষেপনেওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। বিশেষ করে গরিব মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি জানি আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার ওপর রেগে গিয়েছেন। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতার জন্য এই কঠিন ব্যবস্থাগুলি জরুরি ছিল।” মোদী অবশ্য পরে তাঁর যোগব্যায়ামের ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, ‘মন কি বাত’-এ লোকে জানতে চেয়েছিলেন, আমি কী করে নিজেকে ফিট রাখি। তাই এই ভিডিও শেয়ার করলাম।”

এর মধ্যে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে গুজব শুরু হয়েছিল। লেখালিখিও হচ্ছিল। কিন্তু ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা জানিয়েছেন, লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেছেন, ”আমি এই বিষয়ে রিপোর্ট দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। লকডাউনের দিন বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত নেই।’ সূত্র: ডয়েচ ভেলে।।






Shares