ওরা স্পিনে ভয় পায় বলে অন্য উইকেটে খেলা ফেলেছে
ডেস্ক ২৪:: গ্রুপ লিগে ম্যাকালামদের বিরুদ্ধে তাঁদের শেষ ম্যাচের কুড়ি ঘণ্টা আগে হ্যামিল্টন থেকে দেওয়া ফোন সাক্ষাত্কারে তেমনই দাবি করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং মাশরফির দলের জনপ্রিয় ম্যানেজার খালেদ মামুদ সুজন। তাঁর কণ্ঠস্বরে সেই বিনয়ী দৃঢ়তা যা এ বারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলার বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন: কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েও নাকি আপনাদের টিম এখন আত্মতুষ্ট নয়। বলছে নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারাব। সত্যি?
সুজন: হ্যাঁ, ছেলেরা খুব নির্ভার হয়ে রয়েছে। ভাল শেপেও আছে। ইনশাল্লাহ্ একটা চেষ্টা তো কাল করবেই।
প্র: নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ সাত ওয়ান ডে-তে আপনারা এগিয়ে রয়েছেন ৭-০। এটা তো বিশাল সাহস দেবে?
সুজন: সেই ম্যাচগুলো খেলা হয়েছিল আমাদের দেশের স্পিনিং পিচে। এখানে তো আর সেই সারফেস পাওয়া যাবে না।
প্র: কী বলছেন! হ্যামিল্টন হল নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে স্পিনার সহায়ক সারফেস। আপনি ইন্ডিয়া ম্যাচ দেখেননি সে দিন? অশ্বিন কেমন সমস্যা করছিলেন?
সুজন: দেখেছি। কিন্তু এ বার ওরা নিজেদের জন্য উইকেট অন্য রকম বানিয়েছে। স্পিনকে ভয় পায় তো। ইন্ডিয়া ম্যাচেরটায় খেলছে না। আজ দুপুরে দেখলাম প্রচুর জলও দিচ্ছে।
প্র: মানে ম্যাকালামরা কোনও রকম ঝুঁকি নিচ্ছেন না?
সুজন: না।
প্র: বাংলাদেশের এ বারের পারফরম্যান্সে চার দিকে তো ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে। কলকাতার মানুষও ভীষণ খুশি।
সুজন: হ্যাঁ তাই শুনছি। ঢাকায় তো আনন্দে অনেক মিছিল বেরিয়েছে। গোটা দেশ খুশি।
প্র: প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অভিনন্দনসূচক কিছু পাঠিয়েছেন?
সুজন: উনি খুব খুশি। তবে আপা তো প্রত্যেক ম্যাচের পরেই প্লেয়ারদের অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন। ওদের উত্সাহ দেন।
প্র: তাই? এমনি ম্যাচের পরেও?
সুজন: হ্যাঁ, উনি ভীষণ ক্রিকেটভক্ত। মীরপুর স্টেডিয়ামে বড় ম্যাচ হলে তো দেখতেও যান। দেশ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোয় উনি খুব খুশি।
প্র: আর আপনাদের দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী?
সুজন: বীরেন শিকদার। উনি বোধহয় মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনাল দেখতে আসবেন।
প্র: কোয়ার্টার ফাইনালে কার বিরুদ্ধে আপনারা পড়বেন সেটা নির্ভর করছে কাল কী হয়। ভারত হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা হতে পারে। আপনারা কাকে চাইছেন?
সুজন: ওই রকম কিছু নেই। এমসিজিতে যে পড়বে তার সঙ্গেই লড়ব।
প্র: সত্যি কথা বলুন আপনারা যে তিনটে ম্যাচ এখানে জিতেছেন, আগে ভেবেছিলেন এমন রোমাঞ্চকর কিছু ঘটতে পারে?
সুজন: একটা ধারণা ছিল বেরোবার আগে যে এ বার ওরা ভাল খেলবে। ঢাকা ছাড়ার আগে কিন্তু ওরা বলেছিল যে, এ বার কোয়ার্টার ফাইনাল যাবই। তা ছাড়া আমার মনে হয় প্লেয়ারদের মধ্যেও এ বার একটা তাগিদ কাজ করছে যে আর কত দেরি করব নিজেদের প্রমাণ করতে? এ বার না হলে দেরি হয়ে যাবে। আজও তো ওরা বলে গেল কালকের ম্যাচে লড়ব। এই স্পিরিটটা এ বার প্রথম থেকেই আছে।
প্র: বাংলাদেশি সমর্থকরা উদাত্ত ভাবে খাবার-দাবার নিয়ে ঢুকে পড়ছেন না?
সুজন: সে তো আমাদের সমর্থকদের একটা আবেগ আছেই। আর ওঁরা টিমকে খুব ভালবাসেন। সবাই ডেকে খাওয়াতে চান। কিন্তু এ বার তো জানেনই আইসিসি-র অনেক কড়াকড়ি রয়েছে। কাউকে সহজে প্লেয়ারদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্র: মাশরফির অধিনায়কত্বের ভূমিকা কতটা?
সুজন: মাশরফি খুব ভাল ক্যাপ্টেন। গেম রিড করে ভাল। বল করছেও খুব ভাল।
প্র: এই যে ছেলেরা এত উত্সাহ নিয়ে এ বার লড়ছে, মোটিভেশনের শেকড়টা কী?
সুজন: ওই তো বললাম, নিজেরাই বুঝেছে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। এ বার না হলে আর নয়, এমন তাগিদ ছিল। প্লাস আমাদের টিমে সাকিব একটা ছেলে যাকে দেখে এরা ইন্সপায়ার্ড হয়। সাকিব সত্যি একটা রোলমডেল, বাংলাদেশে থেকে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে লড়াই করার তার এই যে ক্ষমতা, এটা বাকিদের অবশ্যই উত্সাহ দেয়।
প্র: বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে কে কে মনে রাখার মতো প্রশংসা করলেন?
সুজন: নাসের হুসেন সে দিন ম্যাচের পর খুব প্রশংসা করছিলেন। গাওস্কর এক দিন বললেন। আজ শেন বন্ডের সঙ্গে মাঠে দেখা হতেই কনগ্র্যাচুলেট করে সুখ্যাতি করল। হ্যাডলি শুনলাম আপনাদের কাগজে রুবেলের খুব প্রশংসা করেছেন। কিন্তু উনি বোধহয় নামটা জানতেন না। তাই নামটা বলতে পারেননি।
প্র: ঠিক। রুবেলের তো উচিত এ বার এই সব বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলা। টিপস নেওয়া।
সুজন: সত্যিই উচিত। ও আসলে খুব শাই ছেলে। কিন্তু বোলিংটা দারুণ করছে। আরও দেখবেন ওর পারফরম্যান্স দেখানো বাকি রয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে আমাদের দেশের উইকেটেই ও ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিল।
প্র: আপনি এখন এত কিছু বলছেন। সে দিন যখন তামিমের হাতের ক্যাচটা পড়ল, ভয় পাননি যে হেরে যাবেন?
সুজন: সত্যি কথা, পেয়েছিলাম। প্রায় কপাল চাপড়াচ্ছিলাম যে হায় আল্লাহ্, তামিম এত ভাল ফিল্ডার ওর হাত দিয়ে এই ক্যাচটা পড়ল!
প্র: এখন?
সুজন: এখন ইনশাল্লাহ্ যে সামনে পড়ুক আমরা ভয় পাই না।