আইসিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিসিবি প্রধান
আনন্দবাজার:: তাসকিনকে বিশ্বকাপে ফিরিয়ে আনতে কম চেষ্টা করেনি বিসিবি। টি-২০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে এই পেসারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সন্দেহের প্রেক্ষিতে চেন্নাইয়ের রামাকান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেকানিক্স পরীক্ষায় বসতে হয়েছে তাঁকে। সেখানকার রিপোর্টে কিছু কিছু ডেলিভারিতে হাতের কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি ভেঙ্গে যাওয়ায় আইসিসি নিষিদ্ধ করে তাসকিনকে। তবে যথাযথ নিয়ম মেনে পরীক্ষা করা হয়নি, এই অভিযোগ এনে আইনজীবীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনায় আইসিসি’র জুডিশিয়াল কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল বিসিবি। কিন্তু ওই আবেদনে কাজ হয়নি, তাসকিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বহালই রেখেছে আইসিসি।
আইসিসি চেয়ারমান, সিইও’র সঙ্গে কথা বলে জুডিশিয়াল কমিশনে আবেদন করে আইসিসি’র সহানুভূতি আশা করেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তবে তাসকিন ইস্যুতে আইসিসি যখন কোনও সহানুভুতি দেখাতে পারেনি, তখন কি আর চুপ থাকা যায়? আইসিসি’র বিরুদ্ধে তাই মুখ খুলেছেন বিসিবি সভাপতি। শুক্রবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে তাসকিনের উপর অবিচারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাসকিনের সঙ্গে যা করা হল, তা ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বপ্রথম। এরকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। কোনও বোলার যদি ম্যাচে কোন অবৈধ ডেলিভারি করে, সে ক্ষেত্রে ওই বোলার বহিস্কৃত হতে পারে। কিন্তু ম্যাচে একটি বলও অবৈধ না করে সাসপেন্ড হতে পারে কোনও বোলার, ক্রিকেট ইতিহাসে এ বারই প্রথম হল।”
তাসকিনের প্রতি আইসিসি’র এই ‘অবিচার’কে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন পাপন। তাঁর মতে, “তাসকিন আমাদের প্রধান বোলার। সে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে এক টানা বল করতে পারে। যেখানে ভারতের এই উইকেটে ১২৫ কিলোমিটার গতিতে বল করাটাই চ্যালেঞ্জ, সেখানে তাসকিনের এি গতি সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো। বিশ্বকাপ, চারটি হোম সিরিজ এবং এশিয়া কাপে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠল না, কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপে তার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো। আমরা টি-২০তে ১৫০-১৬০ এর বেশি করতে পারছি না, তবুও বোলিংয়ের কারণেই জিতেছি। সেখানে আমাদের প্রধান দুই বোলার বাদ পড়ে গেল। যখন আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলাম এবং সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে খেলছি,তখন কি না এই কাজটি করা হলো।”
তাসকিন ইস্যুতে আইসিসি শীর্ষ কর্তারা কিছুই করেননি, এই কথার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনার আমি আইসিসি সভাপতি, সিইও’র সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছি। কাল যদি তাসকিনকে আবার পরীক্ষার জন্য পাঠাই, আমি নিশ্চিত সে পাস করে আসবে। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপ তো ছেলেটি খেলতে পারল না। তা হলে লাভটা কি? মুরালিধরনের জন্য আইন তারা বদল করেছে, শোয়েব আখতার নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বাউন্সার দিতে পারবে না সেই শর্তে ফিরেছে। তাসকিনের বেলায় এই সুযোগটা দেওয়া হল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
বাংলাদেশ যেখানে ফিল্ডিংয়ে সময় নিয়েছে ১০৪ মিনিট, সেখানে ভারতের লেগেছে ১০৬ মিনিট। স্লো ওভার রেটে জরিমানা যেখানে গোনার কথা ভারতের, সেখানে জরিমানা গুনতে হল বাংলাদেশকে! এই বিচারকেও হাস্যকর মনে করছেন পাপন। বললেন, “আমাদের এই বিরুদ্ধ পরিবেশেই খেলতে হবে। আইসিসি যদি ক্রিকেটের উন্নতি চায়, তা হলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যেভাবে খেলছি, এ ভাবে যদি খেলতে পারি, তা হলে এসব করেও আমাদেরক আটকানো যায় না। বাংলাদেশের সঙ্গে যা হচ্ছে তাতে সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে ১৬ বছর, এই লম্বা সময়েও ভারতের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে কোনও দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ। এর পেছনে সম্প্রচার চ্যানেলের ইন্ধন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। তাঁর দাবি, “বাংলাদেশের সঙ্গে খেললে তা বাণিজ্যিক ভাবে লাভ হবে না। এ সব কিন্তু ভারতীয় বোর্ড বলেনি, বলেছে সম্প্রচার চ্যানেল। আপনারা শুনলে খুশি হবেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। তারপরও যদি ওরা না খেলতে চায়, তা হলে কি করতে পারি?”