সরাইলে ভিজিএফের চালসহ ট্রাক আটক :: পলাতক চালক, হেলপার
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে :: সরাইলে পবিত্র ঈদ- উল-আযহা উপলক্ষ্যে দুঃস্থ অতিদরিদ্র ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে বিতরনের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির বিপুল পরিমান চাউলসহ একটি ট্রাক আটক করেছে প্রশাসন। আটকের পরই দ্রুত পালিয়ে যায় ট্রাকের চালক হেলপার ও এক আরোহী। পালিয়ে যাওয়ার আগে চালক জানায় চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের ট্রাকে সেখানকার শ্রমিকরা চেয়ারম্যান মেম্বারের উপস্থিতিতে চাউলের বস্তা গুলো তুলে দিয়েছেন। চাউল গুলো সরাইলের জনৈক নান্নু মিয়া নামের ব্যবসায়ির কাছে যাবে। এক কথা বলেই তারা হঠাৎ লোক চক্ষুর আড়ালে সটকে পড়ে। নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে চাউলসহ ট্রাকটি পুলিশ হেফাজতে দিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বন্যাক্রান্ত, অন্যান্য দূর্যোগাক্রান্ত, দুঃস্থ ও অতিদরিদ্র ব্যক্তি পরিবারের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্যশস্য বিতরন শুরু করেছে। কার্ডধারী প্রত্যেককে পাবে ১০ কেজি করে চাউল। বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরাইলের প্রত্যেক উপজেলায় এ চাউল বিতরন শেষ করার কথা। সরাইলের চুন্টা ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৭৫টি কার্ডের বিপরীতে ১৬.৭৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্ধ পেয়েছে।
বুধবার বিকেলে বস্তা পরিবর্তন করে প্রায় দেড়/দুই টন চাউল চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ট্রাকে (সিলেট-ড-১১-০৩২৩) তুলে দেয়া হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রশাসন ও সাধারন লোকজন বিকাল ৫টার দিকে সরাইল বেপারী পাড়া ব্রীজের উপর ট্রাকটি আটক করে চ্যালেঞ্জ করেন। হতকচিত হয়ে চেহারা বিমূর্ষ হয়ে পড়ে চালক হেলপার ও জনৈক আরোহীর। চালক তার নিজের নাম অহিদ মিয়া ও গাড়ির মালিক জামাল মিয়া বলে জানান। দৌড়ে পালিয়ে যান জনৈক আরোহী।
অহিদ মিয়া বলেন, চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদে যেখান থেকে ভিজিএফের চাউল বিতরন করা হচ্ছে। সেখান থেকেই চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা দাঁড়িয়ে থেকে চাউলের বস্তা গুলো তুলে দিয়েছেন। আর বলেছেন সরাইলের নান্নু মিয়া চাউল গুলো গ্রহন করবে। এর বেশী কিছু বলতে পারি না। বলেই কাঁপতে থাকেন চালক। কথোপোকথনের এক ফাঁকে লোক চক্ষুর অন্তরালে দ্রুত ট্রাক ফেলেই পালিয়ে যায় চালক ও হেলপার।
ঘটনাস্থলে দ্রুত হাজির হন নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি চাউল গুলো ভিজিএফের এ বিষয় নিশ্চিত হয়ে জব্দ করেন। পরে ট্রাকসহ সেই চাউল পুলিশের সহায়তায় থানায় পাঠিয়ে দেন ইউএনও। চুন্টা ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত টেক অফিসার মোঃ হাসিনুর রশিদ বলেন, আমি ১টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে ৫’শ কার্ডধারী লোকের মধ্যে বিতরন করেছি। এর মধ্যেও অনেক অনিয়ম পেয়েছি। অনেক প্রতিনিধি ২০-৩০টি কার্ড দিয়ে একসাথে চাউল নিয়েছেন। স্থানীয়দের মধ্যে চুন্টায় গরীব অসহায়দের চাউল কম দিয়ে লুটপাটের রাম রাজত্ব কায়েমের বিষয়টি ও আলোচিত হচ্ছে।
নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে এ গুলো ভিজিএফের চাউল। তারপর ভালভাবে তদন্ত করে দেখছি।
চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া বলেন, আমার স্টক ঠিক আছে। এই চাউল আমাদের নয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, গরীবের ভাগ্য নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে তাদের সাথে কোন আপোষ নেই। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই। এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্য কেউ যেন কোন অবস্থাতেই ছাড় না পায়।