বাঞ্ছারামপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতীর মৃত্যুর অভিযোগে তিতাশ হাসপাতালে তালা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় সাজিদা আক্তার (২৮) নামের এক প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগে সদরের তিতাশ ইউনিটি হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তালা ঝুলানোর ঘটনা ঘটে। তার বাড়ি উপজেলার দশদোনা গ্রামে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশ্বাসে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের তালা খুলে দেয় এলাকাবাসি।
সাজিদা আক্তারের ছোট ভাই রিয়াজ ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার (২২আক্টোবর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমাদের বাড়ি জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে সাজিদা আপা পায়ে হেটে ইজি বাইকে করে তিতাশ হাসপাতালে যায়। সেখানেও হাসপাতালের গেইট থেকে দোতলায় পায়ে হেটে যায়। সকাল দশটার দিকে আপার সিজার করতে হাচপাতালের ওটিতে আপাকে নিয়ে যায়। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে হাসপাতালের এমরান ভাই (ব্যাবস্থাপনা পরিচালক) আমাদেরকে ডেকে বলছে রোগীর অবস্থা ভালো নয় তাকে ঢাকায় পাঠাতে হবে এই বলে একটি মাইক্রোবাস জোগাড় করে দেয়। তিনি আরো বলেন, আপারে যখন হাসপাতলের ওটি থেকে বের করার সময় দেখি আপার মুখ ফুলে চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হাসপাতালের লোকজন আমাদেরকে কিছু বুঝতে না দিয়েই একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে আর আপার মুখে অক্সিজেন লাগাইয়া দিছে। মনের শান্তনার জন্য মরা আপকে নিয়েই ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়া যাই সেখানে চিকিৎসকরা জানিয়েছে অনেক আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমার আপারে ইনজেকশন দিয়া মাইরা মেরে ফেলেছে।’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সোহেল আহাম্মেদ খান (তিতাশ ইউনিটি হাসপাতালে ওই সময় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন) মুঠোফোনে বলেন, ‘ওটিতে নেওয়ার আগেই রোগীর প্রেসার বেশি ছিল, যেহেতু গর্ভবতী ছিল প্রেসার কমানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করা হয়েছে। রোগীকে স্যালাইনের সঙ্গে এডিয়ানিল নামক একটি এনজেকশন দেয়া হয়েছিল প্রেসার কমানোর জন্য তাতে রোগীর কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। তিনি আরো বলেন- হাসপাতালে ট্রেনিং না থাকলে আমি বৃহস্পতিবার ছুটি নিতে পারি সকালে হাসপাতলে আসেন সেখানে কথা হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসক সোহেল আহাম্মেদ বুধবার সকালে ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন চার দিনের জন্য। ব্যাক্তিগত কারনে ছুটি নিয়ে কেউ প্রাইভেট হাসপাতালে প্রেকটিস করলে আমার কিছুই করার নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন শওকত হোসেন বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক ছুটি নিলে আবেদনপত্র থাকবে তা অনুমোদন হলে তিনি ভোগ করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক সোহেল আহাম্মেদ ছুটি নিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নাই। তিনি আরো বলেন, তিতাশ ইউনিটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর কোনো অভিযোগ পাইনি খোজ নিয়ে ব্যাবস্থা নিব।’
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিন্টু রঞ্জন সাহা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিতাশ ইউনিটি হাসপাতালে যাই ১১টার দিকে। সেখানে সাজিদার আত্বীয়স্বজনসহ এলাকার কিছু লোক বিষষটি নিয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বসেছিল কিন্তু হাসপাতালের মালিক পক্ষ আর নিহতের পক্ষ তারা পারস্পরিক আত্বীয়। আমরা তাদেরকে বলেছি নিজেরা বসে মিলমিশ করার জন্য, এর বেশি কিছুই হয়নি।
তিতাশ ইউনিটি হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আশেক এমরান বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমনটি সঠিক নয় আর রোগীর পরিবার থেকেও কোনো অভিযোগ শুনিনি। আমরা রোগীর চিকিৎসা করতে না পেরে ঢাকায় রোগীতে পাঠিয়ে দিয়েছি।