Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে পরিবারের চার ছেলেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ডক্টর ডিগ্রিধারী

+100%-

বাবা-মাকে নিয়ে সন্তানের স্মৃতিচারণ ও কিছু কথা

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিঞা, অধ্যাপক, ডীন, ইন্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

২৭ জুলাই ২০০৪ ভোর রাত ফজর নামাজের আযানের সময় আনুমানিক ৪টায় আমাদের শ্রদ্ধেয় বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহ…… রাজিউন। আজ ১৫ বছর পরে ও বাবাকে একটু ও ভুলিতে পারিনি। জানেন, বাবার মৃত্যুর সময় আমি জাপান, তাই আজ ও আমার বুকে ব্যথা করে। বাবাকে শেষ দেখা হয়নি বলেই আমার এখনো মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় আমার প্রিয় বাবা দুনিয়ায় বেঁচে নেই। ২০০৪ সালে দেশে ভয়াবহতম বন্যা হয়েছিল। আমি বাবার সাথে ফোনে শেষ কথা বলেছিলাম মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে। তখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে ফোন করলে বাড়ি নিয়ে যেত। বন্যা ছিলো বিধায় বাবার সাথে আর ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে জানতে পেরেছি বাবা আমার সাথে কি যেন কথা বলতে চেয়েছিলো। জানি না বাবা কি কথা বলতেন সেজন্য আমার বাবার কথা মনে হলেই বুকে হাহাকার করে। বাবা দেখেন আপনার সব ছেলেরাই আজ প্রতিষ্ঠিত। চার ছেলেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ডক্টর ডিগ্রিধারী। যারা প্রেস্টিজিয়াজ Scholarship, Fellowship নিয়ে সসন্মানে Japan, UK, France, Canada, Taiwan, Malaysia থেকে পি এইচ ডি, পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রী নিয়ে উচ্চ বেতনে উন্নত দেশে সুনামের সাথে রিসার্চ করে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তারা অবদান রেখে দেশ ও মানব কল্যানে ধারাবাহিক ভাবে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে।

আমাদের মা “রত্ন গর্ভা মা” হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন । আর ৩য় ছেলে হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন বর্তমানে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ও এলাকায় বিশিষ্ট সমাজ সেবক হিসাবে সুপরিচিত। বোনেরা ও সবাই ভালো আছে। আপনার পাঁচ ছেলের বউ ই মাস্টার্স করা। আপনার ছেলে মেয়ের নাতি নাতনীরা ইতিমধ্যেই ২ জন ইন্জিনিয়ার, ১জন ডাক্তার হতে চলছে, ১জন কলেজর প্রভাষক, একজন পিডিবিতে, ছোটরা স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। আপনার নাতিরা কেউ কেউ মালয়েশিয়া সৌদী প্রবাসী, নাতি বউ একজন আর্কিটেক্ট, নাতনী জামাইরা উচ্চ শিক্ষিত ব্যবসায়ী, ইটালী প্রবাসী ইত্যাদি। শুধু নেই আপনি। তবে আপনার সব স্বপ্ন ধাপে ধাপে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আমরা আপনার দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে চার ভাই ঢাকায় ৭তলা, ৯ তলা বিশিষ্ট বাড়ীর মালিক। কেউ কেউ গাড়ীর মালিক। ইতিমধ্যে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্রাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ গ্রামের বাড়ীটা ও সুন্দর গেইটসহ সুউচ্চ বাউন্ডারী করে নান্দনিক ভাবে সাজানো হয়েছে। যেখানে বাবা গেইটে প্রথমে আল্লাহ আকবার ও পরে আপনার নাম মার্বেল পাথরে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

বাবা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সুদীর্ঘ ৫০ বছর সুনামের সাথে ব্যবসা করে অসংখ্য ভক্ত অনুসারী রেখে গেছেন। গর্ব হয় বাবার সততা ও কর্মযজ্ঞ নিয়ে যখন মানুষ আলোচনা করে মনু বেপারী কেমন গূণী ও বিচক্ষণ ছিলেন। কিছু হাতেগনা পরশ্রীকাতর মানুষ থাকতে পারে তবে বেশীরভাগ (৯৯% প্লাস) মানুষই সমাজে আপনাকে নিয়ে ভাবে কি অসম্ভব তুখোর ধীমান গূণী মানুষ ছিলেন আপনি। সারা জীবন প্রতিটি ক্ষেত্রে সততার সাথে কাজ করে গেছেন। বাবা আপনার দীক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ও সততা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছি। আমার বাবা সারাজীবন ভরে ফজরের নামাজের পর লম্বা দোয়া করতেন আজও আমি শুনতে পাই বাবা দাদা দাদীর জন্য কান্না করে ছলছল অশ্রু সিক্ত নয়নে প্রাণভরে দোয়া করতেন। তিনি তার সন্তানদের জন্য আবেগ দিয়ে দোয়া করতেন যেন তারা সুশিক্ষিত ও মানুষের মত মানুষ হয়। বাবা কেমন আছেন জানি না তবে আপনার দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। হে আল্লাহ আমাদের বাবা দুনিয়ায় কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন পরকালে বাবাকে আর কষ্ট দিওনা। বাবার কবরটি বেহেশতের বাগিচা বানিয়ে দিও। সন্তান হিসাবে বাবার জন্য আকুতি বাবাকে শান্তিতে রেখো। বাবা ১৯৯৬ সালে হজ্জ পালন করেন তাই আমার আরাধনা হে মাবুদ বাবার কবরটাকে বিশ্ব মানবতার পথপ্রদর্শক প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর রওজা মোবারকের সাথে কানেকশন করে দাও। বাবা তার জীবদ্দশায় গরীব, অসহায়, দুঃখী, এতিম মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন জীবনভর। মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানের উন্নয়নে অবদান রেখে গেছেন। সমাজের মানুষের জন্য আমরাও চেষ্টা করছি সেবা দিতে উপকার করতে। ইতিমধ্যেই বাবা মায়ের নামে ” আমেনা মান্নান ফাউন্ডেশন” করে দান অনুদান চালু করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে এর ব্যাপ্তি ঘটবে। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন যেন প্রচারবিমুখ গূণী, নিরংহকারী সমাজসেবক এই মহৎ মানুষটা জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসীন্দা হউন, এই নিবেদন রাখছি। আল্লাহ সবাইকে ভালো রেখো।






Shares