Main Menu

শ্বশুড় বটে! বিয়ে বাণিজ্য, প্রতারণা, মামলা অতপর—–

+100%-

নাসিরনগর থেকে ফিরে মোহাম্মদ মাসুদ :: নাছিরনগরের গোকর্ণ ইউনিয়নের চৈয়ারকুড়ি গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম (৫৫)। তবে বাচ্চু মিয়া নামেই এলাকায় পরিচিত। ৫ সন্তানের জনক। নিজেকে আ’লীগ নেতা দাবী করেন। বিয়ে করেছেন ৪টি। পেশা কি তিনি নিজেই জানেন না। স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অর্থের লোভে দিয়েছেন বাল্য বিয়ে । জামাই তারই প্রতিবেশী নায়েব আলীর ছেলে প্রবাসী মুর্শিদ মিয়া (২৮)। গ্রহন করেছেন নিজের ছেলে বলে। ছেলেকে দেখিয়েছেন নানা প্রলোভন। অল্প দিনে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৩৬ লক্ষাধিক টাকা। টাকার হিসেব চাইতেই পাল্টে যান বাচ্চু। বৌ ভাতের দিন ক্ষণ ঠিক করে বিয়ে অস্বীকার করে বসেন। আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে মুর্শেদের।  সমাজ সালিস ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে দেখিয়েছেন বৃদ্ধাঙ্গুলি। বাধ্য হয়ে স্ত্রী শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ও চাচা শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে জামাই করেছেন মামলা। তবে এলাকার সকল শ্রেণি পেশার লোকজন বাচ্চু মিয়ার এহেন কর্মকান্ডকে ঘৃনা ও ধিক্কার জানাচ্ছেন।

পুলিশ, মামলা, উভয় পরিবার ও সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০০৬ সালে সৌদী আরব যান মুর্শেদ। বাচ্চু মিয়া তার চাচাত চাচা। পাশাপাশি বাড়ি। চাচী রানু বেগম পরবর্তীতে শ্বাশুড়ির সাথে মুঠোফোনে কথা বলত মুর্শেদ। ২০১০ সালে মুর্শেদ চাচীকে পাত্রি দেখার কথা বলে। তিনি নিজের মেয়ে সুলতানার দিকে ইশারা করেন। ছোটকাল থেকে দেখা সুলতানার কথা শুনে সম্মত হয় মুর্শেদ। এক সময় কথাবার্তা পাকাপাকি হয়। দশম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা। ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারী শুক্রবার বিকেলে উভয় পক্ষের সম্মতি ও ঝাকজমকপূর্ণ উপস্থিতিতে ইসলামী বিধান মতে মুঠোফোনে সুলতানার সাথে মুর্শেদের বিয়ে হয়। দেনমোহর ধার্য্য করা হয়েছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিয়ের পর হইতে ৫ আগষ্ট ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিজের অভিভাবক মনে করিয়া সরল বিশ্বাসে মুর্শেদের  উপার্জনের সকল টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে শ্বশুড় বাচ্চু মিয়ার কাছে পাঠায়। এ ছাড়া স্ত্রী সুলতানা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য স্বর্ণালঙ্কার, কসমেটিক, মুঠোফোনসেট, টেব ও একাধিক ল্যাপটপ দেয়। সুলতানার সাথে নিয়মিত মুঠোফোনে কথা হতো স্বামী মুর্শেদের। সব মিলিয়ে শ্বশুড় বাচ্চু মিয়ার কাছে ৩৬ লাখ টাকা জমা করেছে সে। গত রমজানে দেশে আসার কথা বলে শ্বাশুড়ি রানু বেগমের কাছে কিছু টাকা চায় মুর্শেদ। আর তখনই বেঁকে বসে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি। নতুন পরিকল্পনা আটেন। বাচ্চু মিয়ার স্বপ্ন মোড় নেয় অন্যদিকে। মুঠোফোনে মুর্শেদের সাথে খারাপ আচরন শুরু করেন।

গত ৭ আগষ্ট মুর্শেদ বাড়িতে আসে। ৮ আগষ্ট তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে শ্বশুড়। এ বিষয়ে এলাকায় একাধিক সালিস বৈঠক হয়। সালিসে জামাই সাজিয়ে নিয়ে ফিরিয়ে দেয় মুর্শেদকে। ১০ আগষ্ট মুর্শেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে। রাতে বাচ্চু মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। উপজেলা আ’লীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সালিসকারকরা বিষয়টি নিস্পত্তির মুচলেকা দিয়ে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। ১৩ আগষ্ট উপজেলা আ’লীগের সভাপতি রাফি উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ১১ জন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সালিস বৈঠক হয়। ১৭ আগষ্ট সুলতানাকে মুর্শেদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তৈরী হয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ড। কিন্তু ১৬ আগষ্ট বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয় সুলতানাকে। ইটালি প্রবাসী এক আত্মীয়ের কাছে সুলতানাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাচ্চু মিয়া। অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মুর্শেদ। টাকা ও স্ত্রীর চিন্তায় মুর্শেদ এখন পাগল প্রায়। পুরো বিষয়টিকে ঘিরে চৈয়ারকুড়ি গ্রাম সহ গোটা নাসিরনগরে চলছে মুখরোচক আলোচনা। অবশেষে গত ১৯ আগষ্ট মুর্শেদ বাদী হয়ে বাচ্চু মিয়াকে প্রধান আসামী করে স্ত্রী সহ ৬ জনের বিরোদ্ধে মামলা করেছে।

মুর্শেদ মিয়া বলেন, আমি হেরেম শরীফের ভিতর থেকে বিসমিল্লাহ বলে সুলতানাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার জীবনটা শেষ। আমি আমার বিবাহিত স্ত্রী ও পাওনা টাকা ফেরত চাই। নতুবা দুনিয়াতে বেঁচে থেকে লাভ কি? নামপ্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক বাসিন্ধা, জনপ্রতিনিধি ও বাজারের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ি বলেন, মুর্শেদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া ও ৩৬ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি শতভাগ সত্য। এমন কাঁচা বেঈমানি জীবনে কখনো দেখিনি। অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম বাচ্চু মিয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিয়ে হয়েছিল। মুর্শেদ বখাটে ছেলে। তাই সুলতানা তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। মেয়ে সংসার না করলে আমি কি করব। সুলতানার আপন চাচা মনু মিয়া (৪০) মুর্শেদের সাথে বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আজকের এ পরিনতির জন্য আমার বড় ভাই বাচ্চু মিয়াই দায়ী।

নাসিরনগর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ রাফি উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিস্পত্তির শর্তে বাচ্চু মিয়াকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়ে এবং ছেলের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য। বাচ্চু মিয়া গোটা উপজেলার নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তকে অমান্য করেছে। শেষ পর্যন্ত সে মন্ত্রী মহোদয়ের কথাও শুনেনি। নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুল কাদের বাচ্চু মিয়ার বিশ্বাস ভঙ্গের কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অস্বীকার করছেন। ছেলেটাকে ডিভোর্সও করিয়েছেন। মুর্শেদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন। কোন সালিসের রায় ও বাচ্চু মিয়া মানছেন না। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিব।  

22






Shares