রানাকে ভারতে পাচারের নেপথ্য কাহিনি
সাভার ট্রাজেডির খলনায়ক ও রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা বেনাপোল থেকে আটক হওয়ার পর থেকে ওই বাড়িটি দেখতে এখনো শত শত লোক ভিড় জমাচ্ছে সেখানে। এ নিয়ে গোটা বেনাপোলে চলছে নানা কথাবার্তা। কেউ বলছে সে ভারত থেকে এসে এ বাড়িতে অবস্থান করছিল। আবার কেউ কেউ বলছে ফরিদপুর থেকে এখানে এসে অবস্থান করছিল ভারতে পালানোর জন্য। অনেকে বলেছেন, বেনাপোলের জন্য এই ঘটনা কলংকিত। এমন একটি গণহত্যার খলনায়ককে বেনাপোলে কেন আশ্রয় দেয়া হলো। বেনাপোল থেকে আটক সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার আশ্রয়দাতা শাহ আলম মিঠুর শশুরবাড়ি পক্ষের আত্মীয় ছিলেন। রবিবার দুপুরে মিঠুর ভাড়াবাড়ি থেকেই রানাকে আটক করা হয়। এ সময় সোহেল রানার সহযোগী অনিল ও আশ্রয়দাতা মিঠুকেও আটক করে এলিট ফোর্স র্যাবের গোয়েন্দা সেলের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসানের সহযোগিতায় র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর একেএম জাহিদুল করিম জাহিদ। র্যাবের অভিযানের আগেই ইমরান নামের আরেক সহযোগি র্যাবের অভিযানের আগেই ৪০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে শনিবার রাত ১১টায় বেনাপোলে মিঠুর ভাড়াবাড়িতে এসে ওঠে রানা। র্যাবের এই সাফল্য বেনাপোলসহ যশোরের সব মহলের প্রশাংসা কুড়িয়েছে।এদিকে, মিঠু স্থানীয় কোনো দলের নেতাকর্মী নয় বলে জানা গেছে। তিনি একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ীর পাশাপাশি সিএন্ডএফ ব্যবসা করে। বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন উভয়ই জানিয়েছেন, মিঠু তাদের কর্মী নয়। তাকে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। মিঠুর স্ত্রী শিউলি আক্তার জানান, তার পিতার বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বড়দিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম জালাল উদ্দীন। সোহেল রানা তার পিতার বাড়ি পক্ষের আত্মীয়। তিনি আরও জানান, তাদের দুই ছেলে স্বাধীন (১৪) ও হাসিব (১০) স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের বেনাপোল বাজারে স্বাধীন এন্টার প্রাইজ নামে একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ও অটবি ফার্নিচারের দোকান রয়েছে রেল স্টেশন রোডে। শনিবার রাত ১১টায় হঠাৎ সোহেল রানা তাদের বাড়িতে এসে ওঠেন। ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিলেন। বাবার বাড়ির আত্মীয় হওয়ায় তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এলাকাবাসী জানান, মিঠু বেনাপোল পৌরসভার পাঠবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। মিঠুকে তারা কখনো কোনো দলের পক্ষে কাজ করতে দেখেননি। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার বাবা অসুস্থ হয়ে ছেলের বাড়িতে শয্যাশায়ী দীর্ঘদিন। মা আগেই মারা গেছেন। মিঠুরা দুই ভাই এক বোন। অনেক আগে তার ছোট ভাই মারা যায়। মিঠুও নানা রোগে আক্রান্ত। পাটবাড়ির জমি বাড়ি বিক্রি করে মিঠু পরিবার নিয়ে বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সজিব এন্টারপ্রাইজের মালিক মনিরুজ্জামান জেটির বাড়িতে ভাড়া থাকে দীর্ঘদিন ধরে। বেনাপোলের অনেকে বলেছে, বিপুল টাকার বিনিময়ে কোন একটি বড় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিঠু গণহত্যার হোতা সোহেল রানাকে ভারতে পার করে দেয়ার মিশন হাতে নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সাথে বেনাপোলের একটি রাঘব বোয়াল চক্র জড়িত রয়েছে। যারা তাকে আশ্বস্ত করেছিল রানাকে ভারতে পার করে দেওয়ার। রানা যাতে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যেতে না পারে তার জন্য পুলিশকে সকর্ত করা হয়। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা ও সহকারি পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল নাইমুল ইসলাম অবস্থান নেন বেনাপোল পোর্ট থানায়। ওসি মিজানুর রহমানসহ সব দারোগা পুলিশ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে থাকে । বিশেষ করে পুটখালী সীমান্তের চোরাচালানী ও মানুষ পাচার ঘাটে রেডএলার্ট জারি করা হয়। |