দিব্যি ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকলেন নকল জেনারেল
ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্ব গেটের সামনে দাঁড়াল একটি হন্ডা সিটি৷ জানলার কাচ নামিয়ে পিছনের সিটে জলপাই পোশাক পরে বসে থাকা ভদ্রলোক রাশভারী গলায় বললেন , ‘আমি মেজর জেনারেল , পি কে মিত্র৷ গেটটা খুলে দিন৷ ‘ নিরাপত্তারক্ষীদের কোনও সন্দেহই হয়নি৷ চওড়া গোঁফ৷ ভদ্রলোকের পোশাকও হুবহু মেজর জেনারেলের৷ স্যালুট ঠুকে তাঁরা ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে ঢোকার পথ করে দেন গাড়িটিকে৷ তখনও কাকপক্ষী টের পায়নি মেজর জেনারেলের পোশাক পরে যে ভদ্রলোক ফোর্ট উইলিয়ামের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়লেন তাঁর সঙ্গে ভারতীয় সেনার কোনও সম্পর্কই নেই৷ মেজর জেনারেল তো দূরঅস্ত্, পি কে মিত্র কোনও কালেই সেনায় ছিলেন না৷
বুধবার দুপুরে প্রায় ঘণ্টাখানেক নকল মেজর জেনারেল অবাধে ঘুরে বেড়ালেন ফোর্ট উইলিয়ামের আনাচেকানাচে৷ সেনা ছাউনিতে ছবি তোলা নিষিদ্ধ৷ তিনি সেই কাজটা করাতেই সন্দেহ হয় জওয়ানদের৷ ততক্ষণে অনেকটাই ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনি৷ এ ভাবেই পাঠানকোটের সেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা৷ পি কে মিত্রর কোনও নাশকতা ঘটনোর উদ্দেশ্য ছিল কি না , তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে ফোর্ট উইলিয়ামের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা বলয় টপকে যে কোনওদিন জঙ্গিরা ঢুকে পড়তে পারে তা এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট৷ আম্বিয়া -সাম্বিয়ার ঘটনার পর ফোর্ট উইলিয়ামের পূর্ব গেটের নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়েছিল৷ তবে বুধবার সেই পূর্ব গেটেই পি কে মিত্র যে ভাবে সেনা জওয়ানদের চোখে ধুলো দিলেন , তা এককথায় নজিরবিহীন৷ বিনা বাধাতেই ‘কার্যসিদ্ধি ‘ করে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বেরিয়ে যেতেন মেজর জেনারেল৷ কিন্ত্ত তাঁকে মোবাইলে ফোর্ট উইলিয়ামের গোপন জায়গার ছবি তুলতে দেখে সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের৷
বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা বুঝতে পারেন , কেলেঙ্কারি কাণ্ড ঘটতে চলেছে৷ তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় , মেজর জেনারেলের ছদ্মবেশে যে ছবি তুলছিলেন , তিনি আদপে সেনাবাহিনীর সদস্যই নন৷ তড়িঘড়ি পি কে মিত্রকে পাকড়াও করে তুলে দেওয়া ময়দান থানার হাতে৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়৷ আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত হয়েছে তাঁর৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে , বেলতলার বাসিন্দা পি কে মিত্র আপাতত কাঠ বেকার৷ তাঁর স্ত্রী শহরের একটি নামি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা৷ ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর৷ তবে সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি৷ এলাকায় তিনি নিজেকে মেজর জেনারেল বলেই পরিচয় দিতেন৷ হামেশাই পি কে মিত্রকে সেনা পোশাকে দেখা যেত বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে৷
তাই ধৃত নকল মেজর জেনারেল মানসিক ভাবে সুস্থ কি না , তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের৷ যদিও জেরায় তাঁর কথাবার্তায় কোনও অসংলগ্নতা খুঁজে পায়নি পুলিশ৷ সব থেকে বড় কথা অনেক হাই -প্রোফাইল লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা রয়েছে ধৃতের৷ এবং তাঁদের কাছেও তিনি নিজেকে মেজর জেনারেল বলে পরিচয় দিয়েছিলেন৷ তাই এখনই ঘটনাটিকে হাল্কা ভাবে নিতে চাইছে না পুলিশ৷ তবে এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পূর্ব ভারতের সেনা কার্যালয় , ফোর্ট উইলিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ এক সেনা অফিসারের কথায় , ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে৷ আমরাও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি৷ কারণ , মোবাইলে কেন ভদ্রলোক ফোর্ট উইলিয়ামের সংরক্ষিত এলাকার ছবি তুলছিলেন তা অবশ্যই আমরা তদন্ত করে দেখব৷ ‘ কিন্ত্ত সেনার প্রেস বিবৃতিতে তাদের সদর দপ্তরে এই নিরাপত্তা গাফিলতির কোনও ব্যাখ্যা নেই৷ ‘সূত্র:: এই সময়