রমযান নিয়ে কিছু কথা
রমযান মাস আল্লাহর রহমতের মাস। রমহমত, বরকত আর মাগফিরাত নিয়েই রমযান মাস। মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি পবিত্র আল-কুরআন রমযান মাসে নাজিল করেছি’। রমযান মাসের এত গুরুত্ব , এত মাহাত্ন্য যে, শুধু এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে সে জন্য। অন্য কোন কারনে নয়। রমযান মাস অন্য ১১ টি মাসের মত না। রমযান মাসে রোজা রাখা ফরয। ফরয হচ্ছে অবশ্য কর্তব্য। এক জন মুসলমানকে অবশ্যই অবশ্যই রোযা রাখতে হয়। না হলে সে কাফির হয়ে যায় ।মানে অবিশ্বাসীদের দলে সে অন্তর্ভুক্ত হয়। মুমিন ব্যক্তি তারাই যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব করতে পারে। সন্তুষ্টি মানে সকল ভাল কাজ করা।
শান্তির মাস হচ্ছে রমযান মাস। রোজা রাখলে মনে প্রশান্তি আসে। ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে যেমন মনে প্রশান্তি আসে। ঠিক তেমনি রমযান মাসে রোজা রাখলে মন শান্তিতে থাকে।
রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ। জাহান্নামে আগুন যখন ব্যক্তিকে গ্রাস করতে চাইবে তখন কেবল রোজাই জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাতে পারে। কাউকে তীর ছুঁড়া হলে সে যেমন ঢাল কে ব্যবহার করে নিজেকে বাঁচায়। এবং তীরকে প্রতিরোধ করে ঠিক তেমনি রোজা ও জাহান্নামের আগুনকে প্রতিরোধ করে। আর জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের ৭০/৭১ গূণ বেশি শক্তিশালী। বেশি ক্ষমতাধর।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
‘ইয়া আইয়ু হাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুসসুম সিয়াম ক্বামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন। ( সুরাঃ আল-বাক্বারা -১৮৩)
অর্থাৎ ঃ হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে , যেমন তোমাদের পূর্ব পুরুষদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
খাতামুন ন্যাবিয়ীন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর যামানা থেকেই আমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে এমনটি না, অনেক আগে থেকেই মুসলমানরা রোজা রাখতেন । তবে তখন রোজা সবার ওপর ফরজ হয়নি। মহান আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করার পরই কেবল গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে , উদ্দেশ্যঃ- আমরা যাতে আল্লাহ কে ভয় করতে পারি । তার হুকুম আহকামকে ভয় করতে পারি ।
আয়াতটিতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন কেবল মুমিনদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়াছে। সকল মানুষের ওপর নয়।
আল্লাহ তাআলা রোজার প্রতিদান নিজ হাতে বান্দার হাতে তুলে দেবেন। অন্য সকল ক্ষেত্রে সেটা বলা হয়নি, কেবল রোজার বেলায়ই । কেননা রোজাতে ফাঁকি দেয়া যায়না। অন্য সকল কিছুতে ফাঁকি দেয়া গেলেও । রোজাদার ব্যক্তির আল্লাহ ভীতি আধিক থাকে । কেননা তিনি যানেন যে মানুষকে ফাঁকি দিয়ে অনেক কিছু খাওয়া যায় কিন্তু আল্লাহকে ফাঁকি দিয়ে কোনো কিছু খাওয়া যাবেনা। নিশ্চয়ই তিনি সকল কিছু দেখছেন। সব কিছুই তার গোচরে। তিনি মনের খবর ও জানেন। তার মতো বিজ্ঞ কে আছে?
অন্য ক্ষেত্রে লোক দেখানো কিছু কাজ করা যায় কিন্তু লোক দেখানো রোজা রাখা যায়না। যেমন – কাওকে দেখিয়ে সালাত আদায় করা যায় কিন্তু রোজা কাওকে দেখিয়ে রাখা যায়না। কেননা রোজাদার ব্যক্তিই কেবল জানেন যে, তিনি রোজাদার নাকি বেরোজাদার। অন্য ব্যক্তির পক্ষে বিচার করা সম্ভব না। এটা কেবল আল্লাহ তাআলাই বিচার করতে পারবেন। তাই তিনি বলেছেন কেবল রোজার প্রতিদান তিনি নিজ হাতে রোজাদার বান্দার হাতে তুলে দেবেন ।
বিশ্বের সকল মুসলিম দেশেই বর্তমানে সিয়াম সাধনা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে ও সিয়াম সাধনা শুরু হয়ে গেছে। রমযানের আগের দিনগুলোতে অনেক তাপমাত্রা ছিল। মাঝেমধ্যে সহ্য করা অনেক কঠিন ছিল, কিন্তু আল্লাহর বড় নিয়ামত রমযান শুরু হবার সাথে সাথে আর্দ্রতা বারতে থাকে আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমতে থাকে । বৃষ্টিপাত হয় । আল্লাহর অশেষ নিয়ামত। তিনি যা কিছু করেন তার বান্দাদের উত্তম এর জন্যই করেন ।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ । শতকরা ৯০/৯১ জনই মুসলিম । তবে সাম্রদায়িক স্মপ্রীতির দেশ। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবাই প্রয়োজনে একসাথে ইফতার করি যা অন্য দেশের জন্য আদর্শ । জাতি, ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশের সন্তান। আমরা সহযোগিতা, সহমর্মিতা দিয়ে বিশ্ব জয় করতে পারি।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একজন মুসলিম কে সালাত, রোজা , যাকাত ,হজ্ব অর্থাৎ ইসলামের মূল খুঁটি ছাড়াও অন্যান্য সমাজসেবা মূলক কাজকর্ম , সহযোগিতামূলক কাজকর্ম করতে হয়।
মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন, ‘ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকল কাজকর্মই ইবাদতের সামিল। ‘
সুতরাং শুধু রোজা বা সালাত বা যাকাত বা হজ্বই কেবল ইবাদতের সামিল নয় বরং ভালো সকল কাজই ইবাদতের সামিল।
রমযান মাসে একটি ভাল কাজ করলে অন্য সময়ের তুলনায় ৭০ গূণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে। নফল নামাজ রমযান মাসে পড়লে অন্য সময়ের ফরয নামজের ঘাটতি পূরণ করবে। রমযান মাসের অনেক মাহাত্ম্য । কোন ব্যক্তি যদি কোন মন্দ কাজ করে এবং সে দিন সে যতক্ষণ পর্যন্ত তাওবা না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মন্দ কাজটির হিসাব লিপিবদ্ধ করা হয়না। ফেরেশতারা তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে যে , ‘এই বুঝি ব্যক্তিটি তাওবা করলো’ দিন শেষ হয়ে গেলে যখন ব্যক্তি তাওবা না করে তখন তার মন্দ কাজটির হিসাব লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু সেটা ৭০ গূণ না হয় ১/১০ গূণ । আল্লাহ কত মেহেরবান। আবার কোন ব্যক্তি যদি কোন ভাল কাজ করে তবে সাথে সাথে তার আমল নামায় ৭০ গূণ নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। রমযান মাসের কত মাহাত্ন্য !
আসুন আমরা রমযান মসের গুরুত্ব ও মাহাত্ন্য বুঝি এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ি।