Main Menu

ইতিহাসের হাসি-কান্না- মায়ের জন্য তাদের ভালোবাসা

+100%-

2_136164হযরত আলী রা. এর ছেলে হুসাইনের সন্তান। তার নামও আলী। মায়ের প্রতি তার একনিষ্ঠ আনুগত্য এবং সুগভীর ভালোবাসা দেখে মানুষ অবাক হয়ে যেত। অথচ এতকিছুর পরও তিনি মায়ের সাথে এক থালায় বসে খাবার খেতেন না। আগে মা খেয়ে নিতেন, তারপর তিনি।

তার বন্ধুরা একদিন এর কারণ জিজ্ঞেস করলো। ‘তুমি এত মাভক্ত ছেলে, অথচ মায়ের সাথে এক প্লেটে বসে খেতে তোমার লজ্জা কেন?’

লাজুক আলী তাদেরকে বললেন, দেখো, হয়তো মায়ের সাথে এক প্লেটে খেতে বসলাম। খাবারের কোন একটি অংশে হয়তো মায়ের চোখ পড়েছে- মা হয়তো সেটি খাওয়ার ইচ্ছা করেছেন- কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে মায়ের মনের ইচ্ছা টের না পেয়ে তার হাতে সেটি যাওয়ার আগেই আমি সেটি মুখে দিয়ে দিলাম। মায়ের ইচ্ছাটি হয়তো অপূর্ণ রয়ে গেল। আমার ভয় লাগে, এতে মায়ের সাথে বেয়াদবী হলো না তো! এ আমার দ্বারা অসম্ভব। এর চেয়ে ভাল, মা তার মনভরে খেয়ে নিক, তারপর যা থাকে, আমি খেয়ে নিবো।
বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে আছে আলীর দিকে। এমনও কি ছেলে হয়!!
শুধু মায়ের জন্য!

ইমাম আবুল হাসান কাত্তান। হাদীসশাস্ত্রের আরেকজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তার চারপাশে ঘিরে আছে অজস্র ছাত্র। তিনি হাদীস পড়াতেন। জীবনের শেষপ্রান্তে তার চোখ দূর্বল হয়ে পড়েছিল। তিনি প্রায় অন্ধত্বকে বরণ করে নিয়েছিলেন। দু চোখে তার আঁধার নেমে এসেছিল। সেই অসহায় দিনগুলোতে তিনি তার শিষ্য-শাগরেদদেরকে শোনাতেন তার করুণ কাহিনী।

তিনি বলতেন, আমার মা! মা আমার জন্য কাঁদতেন। আমি যখন হাদীস শেখার জন্য দূর দূরান্তে চলে যেতাম, মা তখন আমাকে কাছে না পেয়ে কাঁদতেন একা একা। মায়ের সেইসব কান্না শুনে ছুটে আসতো স্বজনরা। শুধু আমি নেই বলে মা কাঁদতেন সারাক্ষণ। মাকে কাঁদিয়েছি বলেই হয়তো আজ আমার দু চোখ এমন অসহায় হয়ে এসেছে। আমার বিরহে মা’র দু চোখ দিয়ে যে বেদনার অশ্র“ গড়িয়ে পড়তো- এর দায় আজ ভোগ করছি আমি। আজ তো মা নেই!

ইসলামের চার মাযহাবের অন্যতম একটি শাফেয়ী। ইমাম শাফেয়ী রহ. এ মাযহাবের ইমাম। তিনি তার সারাজীবনে অর্জিত ইলমভান্ডারকে সংকলন করেছিলেন একটি গ্রন্থে। শাফেয়ী মাযহাবের একটি অন্যতম সুপ্রসিদ্ধ দলীল হিসেবে গৃহীত এ বৃহৎ গ্রন্থটি ইমাম শাফেয়ী নামকরণ করেছিলেন, মায়ের নামে। কিতাবটির নাম- কিতাবুল উম্ম। বাংলায় এর অর্থ- ‘মায়ের গ্রন্থ’। মায়ের প্রতি ইমাম শাফেয়ীর গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে আজও অজস্র ফেকাহবিদের কাছে সমাদৃত হয়ে আছে এ কিতাব।

বিশ্বাস নাকি পরীক্ষা

হাদীসজগতের একজন বড় মুহাদ্দিস এবং সাধক। তার নাম হাইওয়া ইবনে শুরাইহ আননাজিবী। বছরে তার সম্মানী ছিল মাত্র ষাট দিনার। প্রতিবছর তিনি সেই দিনারগুলো হাতে পেয়ে ওখানেই সব দান করে দিতেন। তারপর খালি হাতে ঘরে ফিরে আসতেন। অবাক ব্যাপার হল, তিনি ফিরে এসে তার বিছানার নীচে ষাট দীনার পেতেন। প্রতি বছরই তার এমন ঘটনা ঘটতো।

তার এক চাচাতো ভাই এ দান এবং ঘরে ফিরে আবার ফেরত পাওয়ার ঘটনা শুনে সেও একই কাজ করলো। রাজকোষ থেকে বেতন পেয়েই সে ওখানে তা দান করে দিল। কিন্তু ঘরে ফিরে সে কিছুই পেল না। বেচারা হতাশ হয়ে ইবনে শুরাহইকে এর রহস্য জিজ্ঞেস করলো। কী ব্যাপার, তুমি তো পাও, কিন্তু আমি যে পেলাম না।

ইবনে শুরাইহ তার ভাইটিকে বললেন, আমি ঐ দিনারগুলো আল্লাহর জন্য দান করি পূর্ণ একীন এবং বিশ্বাসের সাথে। আর তুমি দান করেছো প্রতিদান যাচাই করার জন্য। আল্লাহর সাথে যাচাই-পরীক্ষা দিয়ে চলে না, যার ভেতর আছে তার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ- তাকেই তিনি দান করেন।






Shares