স্বাধীনতার পথে – “ইস্কান্দার মির্জা” ইতিহাসের পট পরিবর্তনকারী এক নায়ক (!)
স্টুডেন্টকে ইতিহাস পড়াতে গিয়েই পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সম্পর্কে আবার পড়তে বসলাম । কত সুন্দর করেই না অনেক কিছু এড়িয়ে লিখা হয়েছে । আমার ষ্টুডেন্ট পারিবারিক কারণেই ভীষণভাবে রাজনীতি সচেতন । ফলে অজ্ঞাতেই মুখ ফসকে “শালা পাকিস্তানী” গালি বেড়িয়ে গেলো । কি যেন বুকে খচ খচ করে উঠলো । বইটা আবার ধরলাম । পাঠ্যবইয়ের অতীতের ইতিহাসগুলো স্মৃতিচারণ করলাম । প্রতিটি সরকারই খুব সচেতন ভাবেই একটি বিষয় আমাদের প্রজন্মগুলোর কাছে লুকিয়েছে । এই ইস্কান্দার মির্জা “পাকিস্তানী” নয় বরং “বাঙালী” ছিলেন ।
ইস্কান্দার মির্জা
আজ এই স্বাধীনতার মাসে অনেকটা সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই ইস্কান্দার মির্জাকে নিয়ে লিখাটা লিখতে বসেছি ।
.
ইস্কান্দর মির্জা ছিলেন একজন বাঙ্গালী । তবে ইতিহাস অজ্ঞরা তাকে নায়ক ভাবলে ভুল করবেন উনি ছিলেন সমাজের গতিপ্রবাহ পরিবর্তনকারী এক খলনায়ক । লিখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন পাকিস্থানের ইতিহাস অনেকাংশে তার আঙ্গুলের ইশারায় ক্ষণে ক্ষণে মোড় পাল্টেছে । ১৩ নভেম্বর ১৮৯৯ মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি শৈশব থেকেই ছিলেন ভীষণ মেধাবী । বংশগতভাবে সামরিক পরিবারে বেড়ে উঠার দরুণ পেশা জন্য তিনি সেনাবাহিনীকেই বেঁছে নেন । ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুকাল অবস্থান করার পর আরো উচ্চাশার তাগিদে ইস্কান্দার মির্জা ইন্ডিয়ান পলিটিকাল সার্ভিসে যোগ দেন । তার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতের জয়েন্ট সেক্রেটারি হন । এবং ব্যক্তিগত লিংকের কারণে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান হতে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে নিয়োগও পান । এরপর থেকে শুরু হয় তার পূর্বপুরুষের দেখানো ষড়যন্ত্রে পথে এগিয়ে চলার কাহিনী ।
জিন্নাহ্র সাথে ইস্কান্দার মির্জা
১৭ জানুয়ারী, ১৯৫১ তারিখ । বেশ কয়েকজন সিনিয়ারকে টপকে লেঃ জেনারেল আইয়ুব খানকে সেনাপ্রধানের দ্বায়িত্বভার অর্পন করেছেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান । পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন তার সামরিক সচিব ইস্কান্দার মির্জা । অথচ এই পদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল আইয়ুব খানের সিনিয়ার আরেক বাঙালী বিস্ময় মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদ । বিশ্বযুদ্ধে অসাধারণ দক্ষতা দেখানো এই মানুষটির অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সামনে আইয়ুব খান চিরকালই নিজেকে ছোট মনে করতেন । বলা হয় যদি সেদিন ইসফাকুল মজিদ সেনাপ্রধান হতেন তাহলে হয়তো পাকিস্তানের ইতিহাস অন্যরকম হতো । যা সম্ভব হয়নি একমাত্র এই ইস্কান্দার মির্জার ছলের কারণে । এই ব্যাপারে ইস্কান্দার মির্জা প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীকে বলেন-
.
– “ইসফাকুল মজিদের প্রধান অযোগ্যতা হচ্ছে সে একজন বাঙ্গালী”
.
ইস্কান্দার মির্জা নিজেও যে একজন বাঙালী ছিলেন এটা বোধ হয় উনি ভুলে গিয়েছিলেন।
ইস্কান্দার মির্জা
এখানে অফ টপিক মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদ সম্পর্কে কিছু না বলে পারছি না। এই বাঙ্গালী বিস্ময় সম্পর্কে আমার বাঙ্গালীরা আসলে কিছু জানি না । তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালী যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রাজের অন্যতম সমর কৌসুলি ছিলেন , তিনি ছিলেন একমাত্র উপমহাদেশীয় সেনা কর্মকর্তা যিনি কমনওয়েলথ দেশসমূহের সেনাবাহিনীর কাছে তাঁর অভিজ্ঞতার কারণে এক জীবিত কিংবদন্তি । মানেক শোর অনেক ইন্টারভিউতে এই মানুষটার সামরিক জ্ঞান নিয়া অনেক কথা বলতে শুনা যায় । লেঃ অজয় নারায়ন দাশের পরে উনি ২য় বাঙ্গালী যিনি কুইন ভিক্টোরিয়া রেজিমেন্টে নিয়োগ পান । তার এই সামান্য যোগ্যতার কারণে পরবতীতে তাঁকে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করা হয় । যার পক্ষে লড়েছিলেন আরেক বিখ্যাত আইনজীবি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী । সোহরাওয়ার্দী তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন । এরপর মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদ স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যান । বলা হয় পাকিস্তানী গোয়েন্দা বাহিনী চিরকালই তাঁকে চোখে চোখে রেখেছে তাঁর থেকে আসন্ন বিপদ হতে পারে ভেবে । হয়তো এই কারণেই ২৬ মার্চেই পরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় । বন্দী করে নির্যাতন করা হয় । যার কারনে ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । যদি উনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্ত ও সুস্থ থাকতেন , তাহলে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনানি কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) ওসমানী নয় বরং মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইসফাকুল মজিদই হতেন । এই মহান বাঙ্গালীকে আমাদের সেনাবাহিনীও মনে রাখেনি । এমনি কি তাঁর নামে কোন ক্যান্টনমেন্টে কোন স্থাপনাও নেই । কেবল তাই নন নেট জগতে তার একটা ছবি পর্যন্ত পাবেন না । কেবল উইকিপিডিয়ায় কয়েক লাইনে তার কথা বলা আছে ।
আবার অন দ্যা টপিক ইস্কান্দার মির্জায় ফিরে আসি । ভাষা আন্দোলন তখন পুরো পূর্ব পাকিস্তানে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়েছে । কনফিউজ প্রধানমন্ত্রীকে লিয়াকত আলীকে জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা প্রধানমন্ত্রীকে পুর্ব পাকিস্তানে মিলিটারী পুলিশ নিয়োজিত করবার পরামর্শ দিলেন । উনার অভিমত হচ্ছে -“যথোপযুক্তি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই এর সঠিক সমাধান সম্ভব” । কিছুদিনের মধ্যেই দ্বায়িত্ব গ্রহন করলো মিলিটারী পুলিশের ইউনিটগুলো। এর পরের কাহিনী নতুন করে বলার নেই। ভাষাশহীদের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া এদেরই অবদান ।
ভাষা আন্দোলনের ছবি
.
অবশেষে ষড়যন্ত্র পথে হেঁটে ২২ শে মে, ১৯৫৪ পুর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর হলেন জেঃ ইস্কান্দার মির্জা । পূর্ব পাকিস্তানে পা দিয়েই পরিস্কার স্পষ্ট বাংলায় বললেন
.
– “পাকিস্তান বিরোধী কোন রকমের কাজ কঠোর হাতে দমনে আমি একবিন্দু সময় নেবনা। এই প্রদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যদি শক্তি প্রয়োগের দরকার হয়, তবে কোন ধরনের দ্বিধা ছাড়াই আমি তা করবো।”
.
এর পরের দিনই চারশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো । যার লিষ্ট উনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকেই নিয়ে এসেছিলেন । যার মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে একজন হচ্ছেন শেখ মুজিবর রহমান।
.
ষড়যন্ত্রের পথে ধরে ৭ই আগস্ট, ১৯৫৫ থেকে অস্থায়ী গভর্নর হিসেবে শপথ নিয়েছেন জেঃ ইস্কান্দার মির্জা । অসুস্থতার কারনে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গুলাম মুহাম্মদ আলী যুক্তরাজ্যে ছুটিতে (!) আছেন । সেদিনই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য করলেন আরেক বাঙ্গালী প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মুহাম্মদ আলীকে ।
বগুড়ার মুহাম্মদ আলী
.
২৩ মার্চ, ১৯৫৬ । ৯ বছরের চেষ্টায় পাকিস্তানের নতুন সংবিধান কার্যকর হয় এবং এরই ক্ষমতাবলে গভর্নর জেনারেলের পদবীর নাম পাল্টে হল প্রেসিডেন্ট আর এইভাবেই হয়ে গেলো পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা হয়ে গেলেন পাকিস্তানের প্রথম অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
.
নির্বাচন হল । যুক্তফ্রন্ট জিতে গেলো । ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬ দিনকে ইতিহাস চিরকাল মনে রাখবে । পূর্ব পাকিস্তানের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আজকে শপথ নিচ্ছেন পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে । দেশে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদ দুটোই বাঙ্গালীর হাতে । শুরু হবে পুরো পাকিস্তানে কেবল বাঙ্গালীর জয় জয়কার । এটলিষ্ট এটাই ছিলো অনেকের ভাবনা , কিন্তু হলো না ।
.
১০ অক্টোবর, ১৯৫৭ বিকেল । প্রেসিডেন্টের অফিসে ডাকা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। উপস্থিত আছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সহ অন্যান্য বাহিনীর প্রধান । প্রধানমন্ত্রীর সারা দেশের এক ইউনিট নীতি, নানা ক্ষেত্রের জাতীয়করন এবং সর্বশেষে শিপিং লাইনও জাতীয়করনের ফলে ব্যবসাহীরা ক্ষতিগ্রস্থ । এই অজুহাতে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা তার পদত্যাগ পত্র চান । আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন সোহরাওয়ার্দী সরাসরি জবাব দিলেন ।
.
“আমি পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আমাকে সরাবার দরকার হলে পার্লামেন্টের সভা ডাকুন। সেখানে অনাস্থা ভোটে আমি পরাজিত হলে আমি পদত্যাগ করবো। এভাবে পদত্যাগ করতে বলবার অধিকার আপনার নেই।“
.
প্রেসিডেন্ট গনতন্ত্রকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেন । এই ব্যাপারে পরবতীতে তার বিখ্যাত একটি লাইন আছে । “Democracy is hypocrisy without limitation “
অবশেষে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা
তার সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলেন
– “আমি চাই আপনি পদত্যাগ করুন, নাহলে আপনাকে বরখাস্ত করা হবে। সেই ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার আছে।“
সোহরাওয়ার্দীর আর কিছুই করবার ছিলনা। উনি বললেন,
– “আমি পদত্যাগ করবো। তবে আপনি যে ধারার সুচনা করলেন, সেটার ফল একদিন না একদিন আপনিও ভোগ করবেন।“
সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা বৃথা যায়নি । পরবর্তীতে তা ইস্কান্দারের জীবনে হাড়ে হাড়ে ফলে গিয়েছে । ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সামরিক শাসন জারী করলেন ।
যা পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়া পযর্ন্ত বহাল ছিলো । সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথামত উনি এই শাসনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে শুরু করলেন । এতদিন ছিলেন উনি ক্ষমতার শীর্ষবিন্দু । এখন তার পতন শুরু হলো । আইয়ুব খানকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রীসভা করলেন । তার নতুন মন্ত্রীসভায় আনলেন অনেক নতুন মুখ । যাদের মাঝ থেকে উদয় হল এক অখ্যাত ব্যারিষ্টার যার নাম আগে কেউ শুনেইনি । এই হলো সেই কুখ্যাত জুলফিকাল আলী ভুট্টো । তাকে তিনি সামরিক প্রধানের দ্বায়িত্ব প্রদান করেন ।
জুলফিকার আলী ভুট্টো
একটি বিখ্যাত চিঠি যেখানে ভুট্টোর তোষামোদী প্রতিভার ভালই পরিচয় পাওয়া যায় ।
ইস্কান্দারের মন্ত্রীসভা
নতুন মন্ত্রীসভা নিয়ে আইয়ুব খানের সাথে ইস্কান্দার মির্জার দ্বন্দ্ব শুরু হলো । আসলে সামরিক শাসন জারী হওয়ায় পর থেকে আইয়ুব খান তার ক্ষমতা সীমা কতটুকু তা ধরতে পারলেন । তারপর যা হবার তাই হলো । এক বনে তো আর দুটো বাঘ থাকতে পারেনা । ইস্কান্দার মির্জা এবার আইয়ুব খানকেই ক্ষমতা থেকে সরানো জন্য অন্যান্য জেনারেলদের সাথে বৈঠক করতে লাগলেন । যাতে হিতে বিপরীত হলো ।
.
২৭ অক্টোবর , ১৯৫৮। নিজের শয়ন কক্ষে ২য় স্ত্রী নাহিদ আমিরতিমুর সাথে ঘুমিয়ে আছেন ইস্কান্দার মির্জা। আইয়ুব খান তার শয়ন কক্ষে গিয়ে শুধু তার দিকে বন্দুক স্থাপন করলেন। এইভাবেই আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন।
তাকে স্বস্ত্রীক লন্ডনে নির্বাসনে পাঠান আইয়ুব খান । যে আইয়ুব খানকে ইস্কান্দার মির্জা সব দিয়েছিলেন । যার চাকুরীর মেয়াদ চার বছর বৃদ্ধি না করলে এই আইয়ুব খান ১৯৫৭ সালেই অবসরে চলে যেতেন আর পাকিস্তানের ইতিহাসে আইয়ুব খানের আমল বলে কিছু লেখা থাকতো না । তখন ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহ কোন দিকে মোড় নিতো কে জানে !
আইয়ুব খান
ইস্কান্দার মির্জা আরো ১১ বছরের বেশি কিছুকাল বেঁচে ছিলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের জীবনের শেষ কাটলো খুব করুন ভাবে । জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় ছিল লন্ডনের একটা খাবারের রেস্তোরার হোটেল বয় হিসেবে । বলা হয়ে শেষ সময়ে তিনি এক মাসের জন্য নিজ দেশে ফিরতেও চেয়েছিলেন কিন্তু আইয়ুব খান অনুমতি দেননি । আর্থিকভাবে অসচ্ছল লন্ডনে চিকিৎসা খরচ দিতে না পেরে তিনি তার ইরানী বংশদ্ভুত স্ত্রীকে বললেন,
– “নাহিদ, আমরা চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবোনা আর, সে সামর্থ্য আমার নেই। আমাকে মরতে দাও!”
.
সারাজীবন ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার শীষবিন্দুতে উঠা পরাক্রমশীল ব্যক্তি হতে হোটেল বয় হয়ে উঠা মানুষটির মৃত্যু হলো খুব সাধামাটা ভাবে ১৩ নভেম্বর ১৯৬৯ সালে । তার মৃত্যুর খবর পাকিস্তানে পৌছলে আইয়ুব খান বলেন,
.
– “এই বিশ্বাসঘাতকের লাশ যেন কোনক্রমেই পাকিস্তানের মাটি না স্পর্শ করে!
.
চিরকাল বাঙ্গালী হয়ে বাঙ্গালীদের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী এই পাকিস্তানপ্রেমী মানুষটির মুল্যায়ন এইভাবেই । তার লাশ পাকিস্তান গ্রহণ করতে রাজি হলো না । তার স্ত্রী সুত্রে তার কবর হলো ইরানের মাটিতে । ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর সে কবরের চিহ্নও মুছে ফেলা হলো।
.
এই হতভাগাটির প্রতি করুণা প্রদর্শন করতেও ঘৃণা হয় । কারণ এই ষড়যন্ত্র প্রিয় মানুষটিতে থেকে বিশেষ কিছু আশা করাও অন্যায় । কারণ তার জন্মই ষড়যন্ত্রের এক বংশে । এতক্ষণ যেটা বলা হয়নি , এই ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন সরাসরি স্বয়ং মীর জাফরের ৪র্থস্তন বংশধর অর্থ্যাৎ মীর জাফর ছিলেন তার দাদুর বাবা ।
এক বিশ্বাসঘাতকের বংশধরের থেকে এর চেয়ে বেশি কি আশা করা যায় ? মাঝে মাঝে পাকিস্থানের ইতিহাসে তার এই প্রকট অবস্থান দেখে মনে হয় এই মানুষটা ছিলো বলেই বোধ হয় আমরা দ্রুত স্বাধীনতার পথে এগুতে পেরেছি । সে হিসেবে তাঁকে তাচ্ছিল্য অর্থে নায়ক বলাই যায় ।
তথ্যসুত্র- বিভিন্ন ব্লগ ও বই
বিশেষ কৃতজ্ঞতায় শতদ্রু একটি নদী