রোববার ছিল ভিন্ন সুর। সেই সুরে বাজছিল যে কোনো মূল্যে সব সামলে গদি অাঁকড়ে থাকার গান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কড়া ধমকে সেই সুর পাল্টে গেল হঠাৎ। সোমবার মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। প্রধানমন্ত্রী রোববার রাতে গণভবনে তলব করেন তাকে। এর মাত্র ১৫ ঘণ্টার মাথায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে মন্ত্রিত্ব ছাড়েন প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, পদত্যাগ ইস্যুতে গড়িমসি করতে থাকা সুরঞ্জিত পরিস্থিতি সামলাতে আরো কিছু সময় চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু দুর্নীতিকারী ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে যোগসাজশ রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া প্রধানমন্ত্রীর মন টলেনি তাতে। ইমেজ সঙ্কট তৈরি হওয়ায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দলীয় পরিম-লে সুরঞ্জিতের পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন আগেই। উপরন্তু ‘সুরঞ্জিত কা-ে’ নিজেও ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাই অবিলম্বে সুরঞ্জিতকে রেলমন্ত্রীর পদ ছাড়ার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। তার এ নির্দেশের পর মুখে কলুপ অাঁটেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুরঞ্জিত। গণভবন থেকে বেরিয়ে তাই অনেকটা যেন অন্তর্ধানেই চলে যান তিনি। সংবাদ মাধ্যম তো বটেই, এমনকি রাজনৈতিক সতীর্থ আর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ঝানু এই পলিটিশিয়ান। সোমবার সকালে জানা যায়, দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবেন সুরঞ্জিত। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে যে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন তা কিন্তু তখনো পরিষ্কার ছিল না। রোববার পর্যন্ত যিনি নিজের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ও নিজের মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার কাছে উৎসবিহীন ৭০ লাখ টাকা প্রাপ্তির ঘটনাকে হজম করে চলছিলেন, যার আচরণে যে কোনো মূল্যে মন্ত্রিত্ব অাঁকড়ে থাকার প্রবণতা প্রবল হয়ে ফুটছিল, সেই ঝানু রাজনীতিকই কি না কোনো প্রকার পূর্বাভাস ছাড়াই মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বসলেন। দলীয় সূত্র বলছে, এছাড়া অবশ্য উপায়ও ছিল না সুরঞ্জিতের। নয়তো নিজের দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির বিপক্ষে কঠোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করতেন তাকে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা করেছিলেন জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও। গত শনিবার তুরস্ক থেকে ফিরে ‘সুরঞ্জিত কা-‘ নিয়ে আলোচনার জন্য গণভবনে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এইচটি ইমাম ও মাহবুব-উল-আলম হানিফের মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা সুরঞ্জিত ইস্যুতে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। কারও খামখেয়ালিপনার জন্য সরকার ও দলের ভাবর্মূতি নষ্ট হতে দেয়া যায় না। এর পর দিনই সুরঞ্জিতকে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে গণভবনে পৌঁছান সুরঞ্জিত। প্রধানমন্ত্রী তখন বঙ্গভবনে। রাত ১০ নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর দেখা পান। মিনিট তিরিশেক সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলে তাদের। বৈঠক শেষে অনেকটা নীরবেই গণভবন ছাড়েন হতাশ সুরঞ্জিত। এর মাত্র ১৫ ঘণ্টার মাথায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে তার ভাষায় ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নেন সুরঞ্জিত। পদত্যাগ করেন রেলমন্ত্রীর পদ থেকে। মাত্র মাস পাঁচেক ‘ক্ষমতা ভোগে’র পর মন্ত্রিত্ব সাঙ্গ হয় মন্ত্রিদের কড়া কড়া সমালোচনা করে মন্ত্রিপরিষদের স্থান পাওয়া সুরঞ্জিতের। |