নবীনগরে নির্বাচনী বিরোধে ধান কাটা বন্ধ



নবীনগর প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গ্রামছাড়া থানাকান্দি গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ। বউ-ঝিরাও থাকতে পারছেন না বাড়িতে। ৩১শে মার্চ হওয়া নির্বাচনের পরদিন সংঘর্ষ হয় বর্তমান কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর কাউসার মোল্লার গ্রুপের মধ্যে। চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ছিলেন বর্তমান এমপি’র সমর্থীত স্বতন্ত্র র্প্রার্থী দোয়াত-কলম প্রতীকের মনিরুজ্জামানের পক্ষে। আর কাউসার মোল্লা সাবেক এমপি ও নৌকার প্রর্থীর সমর্থক।
নবীনগর থানা সূত্রে জানা যায়, ওইদিনের ঘটনায় ১২শ’ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কাউসার মোল্লার পক্ষের লোকজনের অভিযোগ নৌকার নির্বাচন করায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়েছে। গ্রামছাড়া করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও তার লোকজন এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশও তাদের পক্ষের হয়ে হয়রানি করছে।
পার্শ্ববর্তী বড়াইল ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে পাগলা নদীর পাড়ে জমির ফসল প্রক্রিয়া করছিলেন আনোয়ারা বেগম। জানান- চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে গিয়ে জমির ধান কাটতে হয়।
ধান কাটার জন্য কানি পিছু ১ হাজার টাকাও দিতে হয়। গ্রামে অত্যাচারে থাকতে না পারার কথাও জানান এই নারী। গ্রামছাড়া মো. মুকসুদ মিয়া জানান, দোয়াত কলম মার্কা পাস করার পরদিন থেকে তাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর তার ভাই-ভাতিজারা বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। তার ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। ১৮ দিন ধরে বাড়িছাড়া তিনি। তার বাড়ি ছাড়াও মোস্তাকিম, হোসেন, খোকন, স্বপন ও জহির মিয়ার বাড়ি ও দোকান পাটে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।
থানাকান্দি গ্রামে গেলে এক বৃদ্ধা মজলিশ বেগম জানান, চেয়ারম্যানের লোকজন আমার বাড়িতে ঢুকে আমার কোমরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। এরপর আমার ঘরে ভাঙচুর করেছে। একটা মানুষও ধান কাটতে পারছে না। বলেছে একহাজার টাকা দিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর না নিলে ধান কাটতে দিবে না। আরেকজন আক্তার মিয়া জানান- সরকারি নির্বাচন (নৌকা প্রতীক) কেন করলাম সে কারণে আমাদের বলেছে তোরা দেশে থাকতে পারবি না। পুলিশও হুমকি দিতাছে ধইরা লাইবো, মাইরা লাইবো। হামলার সময় তার ঘরে থাকা ছেলের বিদেশে যাওয়ার টাকাও লুট করে নেয়া হয়।
আসেদ মিয়ার ৪ কানি জমির বোরো ফসল কাটা বাকি। তার ছেলেরা বাড়ি ছাড়া বলে ফসল কাটতে পারছেন না। গ্রামের কাউসার মোল্লার পক্ষের সব লোকজনেরই অভিযোগ পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। থানাকান্দি ছাড়াও উত্তর লক্ষ্মীপুর, সাতঘরহাটি ও গৌরনগর গ্রাম অশান্ত নির্বাচনোত্তর এই বিরোধে। গত ৩০ দিন ধরে শ’ শ’ মানুষ বাড়িছাড়া। আর সে কারণে ফসল কাটাও বন্ধ। হামলার সময় অর্ধশত বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি বাড়িতে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন,উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমাকে ফাসাতে এসব অভিযোগ তোলছে তারা। আমার বিরোদ্ধে অভিযোগ কারি সবাই কাউছার মোল্লার লোক। এলাকায় ত্রাস সৃস্টি করাই তাদের কাজ। এ বিষয়ে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে।
নবীনগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ জানান, পুলিশ নৌকা বা দোয়াত-কলম পক্ষ বিবেচনা করে আসামি ধরছে না। যারা দাঙ্গায় লিপ্ত ছিল তদন্ত করে তাদেরকেই ধরা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না দাবি করে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন- যারা সাধারণ মানুষ তাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা ধান কাটতে পারেন।