নবীনগরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও সিটিজেন ব্যাংক
আমিনুল ইসলাম,প্রতিনিধিঃসম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনার পরপরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় সিটিজেন রিয়েল এস্টেট ব্যাংক নামে সরকারি অনুমোদনবিহীন কথিত এক ব্যাংক।
ব্যাংকে জমা টাকার উপর অল্পসময়ে অধিক মুনাফা, নিম্নবিত্তদের জমি কিনে দেয়া আর নির্দিষ্ট সময়পর বাড়ি তৈরির নামে নানা প্রলোভনা দেখিয়ে প্রায় ৫ কোটি হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। কষ্টে অর্জিত টাকা হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। এছাড়া এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভ করছে ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়র নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামে ২০১৪ সালের শেষ দিকে মীর নাছির মোল্লার ভবনে রিয়েল এস্টেট সিটিজেন ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক স্থাপিত হয়। ব্যাংকটি যাত্রার শুরুতে একাউন্ট হোল্ডারদের বিশ্বাস স্থাপন করতে আশে পাশের গ্রামের প্রভাবশালী কয়েক ব্যাক্তিকে ম্যানেজার ,ক্যাসিয়রেরপদ সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েকজনকে চাকরি দেয়।এছাড়া লোকজনদের আকৃষ্ট করতে ব্যাংকটি ১ লক্ষ টাকায় বিভিন্ন একাউন্টের ভিত্তীতে ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা প্রতিমাসে মুনাফা দেয়।
তা ছাড়া নিম্নবিত্ত ও কৃষকদের মধ্যে অল্পসুদে দৈনিক,সাপ্তাহিক,মাসিক কিস্তিতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় লোন দিয়ে আকৃষ্ট করে হিসাবধারীদের। অন্যদিকে দৈনিক,সাপ্তাহিক,মাসিক কিস্তিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন একশ থেকে ১লাখ পর্যন্ত টাকা জমা নেয় তারা। এতে নির্দিষ্ট সময় পর এসব টাকার উপর উচ্চ হারে সুদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। এমনকি এসব টাকায় শহরের আশে পাশে জমি কিনে বাড়ি তৈরির প্রলোভনও দেখায় কথিত এ ব্যাংকটি। এতে আকৃষ্ট হয়ে ব্যাংকটির ৩ টি শাখা নবীনগরের ভাংগরা, বড়াইল বাজার এবং বি,বাড়ীয়ার সদর উপজেলার গোকর্ণঘাট ব্রান্স থেকে প্রায় ৪ হাজার হিসাবধারীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এমনি ক্ষতিগ্রস্তদের কয়েকজন বিল্লাল হোসেন ৩ লক্ষ, তাছলিমা আক্তার ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ,কিসমতারা বেগম ১ লক্ষ ২০ হাজার, আব্দুর রহমান ৫ লক্ষ ,করিম মিয়া ১ লক্ষ ১০ হাজার, কাকলি আক্তার ৮০ হাজার, শেখ ফরিদ ১ লক্ষ ১০ হাজার,নুরুল আমিন ১৫ হাজার,রমজান আলী ১৩ হাজার ও মোশারফ হোসেন দেড় লক্ষ টাকা বিভিন্ন মেয়াদে ব্যাংকে রাখেন।
এদের মধ্যে কিসমতারা বেগম বলেন গত বছর আমার ছেলে দুবাই মারা যায়, এ উপলক্ষে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পায়।এ টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আমি ব্যাংকে জমা রাখি। ভুক্তভোগীরা এখন অভিযোগ করছে আমরা টাকা দিয়েছি ব্যাংকে চাকরিরত এলাকার লোকজনদের দেখে।তাদের উপর ভরসা রেখেই টাকা দেয়।ব্যাংকের মালিককে দেখে নয়।তারা এখন আমাদের টাকা দিবে।
ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে সংশ্লিষ্ট থানায় ব্যাংকের প্রতারক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোক্তভোগীরা।এতে বড়াইল বাজার শাখার ম্যানেজার সাবিনা আক্তার(৩০) এবং গোকর্ণঘাট শাখা থেকে মো. লিটন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুর রহমান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ব্যাংকটি এখন বন্ধ রয়েছে।প্রতারক মালিক আব্দুর রহমান কিন্তু তিনি ভিজিটিং কার্ডে দেলোয়ার হোসেন নামে পরিচিত। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ বলে জানতে পেরেছি।তিনি এখন পলাতক রয়েছেন।তবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তার বিরুদ্ধে এলাকায় ২টি বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে।তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় আমরা ১ জনকে আটক করেছি।