নবীনগর প্রেসক্লাবের একটি আলোচিত মামলা: অত:পর পুলিশের ফাইনাল রিপোর্ট
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর,প্রতিনিধি: এক বছরেরও বেশী সময় আগে খোদ্ নবীনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে একটি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন (মামলা নং-০৭, তারিখ ০৮/১২/২০১৬)।
কিন্তু গত এক বছরেও অপরাধীকে গ্রেপ্তার করাতো দূরে থাক, পুলিশ ওই মামলার অপরাধীকে চিহ্নিত-ই করতে না পেরে সম্প্রতি আদালতে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ, বাদী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ফেসবুকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ‘Khaka Babu’ নামের একটি আইডি খোলা হয় (যা আগে Samrat Sarkar নামে ছিলো) ।
পরবর্তীতে ‘Khaka Babu’ নামের ওই আইডি থেকে পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নবীনগর প্রেসক্লাবের একাধিক সদস্য এমনকি প্রেসক্লাবের অনেক সদস্যদের পরিবারের নারীদের অসংখ্য অশালীন ছবি ও অমার্জনীয়ভাবে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রতিনিয়িত আপলোড করে এসব পরিবারের ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করা হয়। এক নাগারে প্রায় কয়েকমাস ধরে ওই ‘Khaka Babu’ ‘ আইডি থেকে প্রতিনিয়ত আপলোড করা ক্ষমার অযোগ্য এসব ছবি ও অশ্রাব্য ভাষার লেখাগুলো পাঠ করে ফেসবুকের সাধারণ পাঠকেরা নানাভাবে বিভ্রান্ত ও বিব্রত হন। আর যাদের কিংবা যাদের পরিবারের নারীদের নিয়ে বিভিন্ন ছবি ও কুরুচিপূর্ণ লেখাগুলো ওই আইডিতে আপলোড করা হত, তারা লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনও নিয়মিত অবগত থাকতেন। কিন্তু স্বত:প্রনোদিত হয়ে ওই আইডির বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে চলতে থাকা নির্লজ্জ ওই ‘Khaka Babu’ আইডিটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নিতে অবশেষে নবীনগর প্রেসক্লাবে এক জরুরী সাধারণ সভা ডাকা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নবীনগর প্রেসক্লাবের ওই সাধারণ পরিষদের জরুরী সভায় সর্বসম্মতভাবে ওই ‘Khaka Babu’ আইডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় অইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে সময়ে প্রেসক্লাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন নবীনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল বাদী হয়ে নবীনগর থানায় তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি সে সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করানো হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী ম্যামল প্রচন্ড ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,‘স্বয়ং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে মামলা করার পরও যখন পুলিশ মামলার অপরাধীকে চিহ্ণিত করতে পারেনি, তখন আমরা কি বলার আছে বলুন? তবে শুনেছিলাম, পুলিশ নাকি তাদের তদন্তে ওই আইডির মালিককে অনেকটাই সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ ওই বিতর্কিত আইডির মালিককে (অপরাধী) চিহ্নিত করতে বর্ণিত ফেসবুক আইডির সুনির্দিষ্ট ২১টি স্কীনশট এজহারের সঙ্গে সংযুক্তি করে দেয়া হয়েছিলো।’
নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও নবীনগর প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কান্তি কুমার ভট্টাচার্য দু:খ করে বলেন,‘ওই বিতর্কিত ফেসবুক আইডির মালিককে পুলিশ সনাক্ত করতে না পারাটা আসলেই দু:খজনক। কারণ, আমার বিশ্বাস, এই বিতর্কিত আইডির মালিক ধরা পড়লেই, ফেসবুকের এমন ভূয়া আইডিগুলো র অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে যেত।’
তবে তৎকালীন পুলিশের একজন কর্মকর্তা (এখন নবীনগরের বাইরে কর্মরত) টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন,‘ওই বিতর্কিত ফেসবুক আইডির মালিক কে, সেটি নবীনগরের সাংবাদিকেরাই ভালো জানেন। সে সময়ে ঢাকা থেকে আসা আইটি এক্সপার্টরা নবীনগরে এসে স্কীনশটগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে খোকাবাবু নামের ওই আইডির মালিককে সনাক্ত করার কাজটা অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু একটি নির্বাচনের ফলাফল তখন সবকিছু ওলটপালট করে দেয়।’
নবীনগর থানার ওসি আসলাম সিকদার জানান,‘ওটা একটি ভূয়া আইডি ছিলো। যা থেকে বিভিন্ন অশোভন পোস্ট ও ছবি আপলোড করা হত। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তেও ওই ভূয়া আইডির মালিককে সনাক্ত করতে না পারায় সম্প্রতি মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হয়।’
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম (বার) মুঠোফোনে বলেন,‘এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নেবো।’