শামীম উন বাছির ঃ ভালো নেই নবীনগরের পোল্ট্রি খামারীরা। বিদ্যুৎ সংকট, মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নবীনগরে প্রায় ৩ শতাধিক পোলট্রি খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ক্রমাগত লোকসানের মুখে খামার গুলো বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন খামারের মালিকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০০৫ সালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে তোলা হয়েছিল পাঁচ শতাধিক পোল্ট্র্্ির খামার। গত ৮ বছরের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। হুমকীর মুখে আছে বাকি তিন শতাধিক খামার। খামারের মালিকেরা জানান, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিরিক্ত গরমে ষ্ট্রোক করে প্রতিদিন খামার গুলোতে মুরগীর বাচ্চা মারা যাচ্ছে। লোকসানের মুখে তারা ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋনের কিস্তি দিতে পারছেনা। উপজেলার ইব্রাহিমপুর, জিনোদপুর, লাউর ফতেহপুর, শিবপুর, শ্যামগ্রাম, রসুল্লাবাদ, সাতমোড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় প্রায় ২ শতাধিক খামার বন্ধ আছে। কেউ কেউ আবার খামার ঘুটিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া করছেন। উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের পোল্ট্রি খামার মালিক আলী করিম খন্দকার বলেন, ২০০৫ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাঁস মুরগি পালনের প্রশিক্ষন নিয়ে নিজস্ব ১ লাখ টাকা মূলধন এবং ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাড়ির পাশে তিনটি খামার করি। দফায় দফায় মুরগীর বাচ্চা ও পোল্ট্র্রি ফিডের দাম বৃদ্ধির কারনে দুটি খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। বর্তমানে একটি খামার তাও বন্ধের পথে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে মুরগীর বাচ্চার দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা এবং প্রতি কেজি খাদ্যর দাম ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে প্রতিটি মুরগীর বাচ্চার দাম ৫৫ টাকা এবং প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৫০টাকা। তিনি বলেন, মাসে একটি মুরগীর জন্য খরচ হয় একশত ৩০ টাকা কিন্তু সেই মরগী পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। ফলে হাজার হাজার টাকা লোকসান দিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। একই গ্রামের পোল্ট্রি খামারি সমীর আহম্মদ বলেন, দফায় দফায় মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি ডিম ও মুরগির দাম। রসুল্লাবাদ গ্রামের খামারি তাজুল ইসলাম বলেন, বাচ্চা ও খাদ্যের দাম না কমালে অচিরেই উপজেলার কয়েক শত পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাবে। জিনোদপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর আগেও আমাদের ইউনিয়নে ১০টি খামার ছিল। বর্তমানে মাত্র দুইটি খামার চালু আছে। অনেকেই দেনার দায়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক সরকার বলেন, উপজেলার পোল্ট্রি খামারীরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তাদেরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন. মুরগীর বাচ্চা খাদ্য ঔষধ সহ সব ধরনে জিনিস পত্রের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে এবং সরকারী কোন অনুদান না পাওয়ার কারণে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছে। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কয়েক দফা কথা হয়েছে।আশা করি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা খামারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেই। উপযুক্ত প্রশিক্ষন, যুবউন্নয়ন থেকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে আমাদের কাছে।
|