স্বাক্ষাৎকার—
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের আওয়ামীলীগের দলীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। এসময় বিভিন্ন প্রশ্নেরও সাবলীল উত্তর দেন তিনি।
মিঠু সূত্রধর পলাশ.নবীনগর : প্রশ্ন: একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
এমপি বাদল : দেখুন, গত পাঁচ বছরে নবীনগর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য যে তিনটি সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে (এরমধ্যে ২টি প্রায় শেষ পর্যায়ে) সেগুলো নির্মাণসহ উপজেলার সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নবীনগরে মোট ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। যা গত ৪৭ বছরেও এখানে হয়নি। এসব বিবেচনায় মনোনয়নের বিষয়ে আমি খুবই আশাবাদী।
প্রশ্ন: মনোনয়ন পেয়ে আবারও এমপি হলে আপনার প্রথম কাজটি কি হবে?
এমপি বাদল : অসমাপ্ত থাকা চলমান উন্নয়ন কাজগুলোর দ্রুত সমাপ্ত করাই হবে আমার প্রথম কাজ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা ব্যায়ে নবীনগরবাসির দীর্ঘ প্রত্যাশিত নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়কটিও (ইতিমধ্যে একনেকে অনুমোদিত) দ্রুত নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর হয়ে ঢাকা আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়ক নির্মাণ করা হবে আমার পরবর্তী অন্যতম প্রধান কাজ।
প্রশ্ন: অভিযোগ রয়েছে, দলের নেতাকর্মীদের সাথে আপনি প্রকাশ্যেই দুর্বব্যবহার করেন, কেন?
এমপি বাদল : দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় মাঝে মাঝে কতিপয় নেতাকর্মীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে হয়। যেটি আপনাদের (সাংবাদিক) ভাষায় দুর্ব্যবহার। তবে যারা অভদ্র, আমি কেবল তাদের সঙ্গেই অভদ্র ব্যবহার করি। কিন্তু যারা ভদ্র আমি তাদের সঙ্গে সর্বদাই ভদ্র আচরণ করি, যথেষ্ট সম্মানও করি।
প্রশ্ন: আরেকটি অভিযোগ, গত পাঁচ বছর আপনি এলাকায় খুবই কম এসেছেন ?
এমপি বাদল : নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ি আমি হয়তো সবসময় আসতে পারিনি, এটি কিছুটা সত্য। কিন্তু এলাকায় কম এসেছি, এটি মোটেই সত্য নয়। তবে আপনাদের দোয়ায় আবারও যদি এমপি হতে পারি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে এ অভিযোগ আর থাকবে না।
প্রশ্ন: অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী ইতিমধ্যে আপনাকে নাকি ছেড়ে চলে গেছে ? কি বলবেন ?
এমপি বাদল : আওয়ামীলীগ বড় দল। এই দলে অনেক বড় বড় যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু নেতাকর্মী ওইসব প্রার্থীদের সঙ্গে এখন সভা সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। এতে আমি কোন ক্ষতি দেখছিনা। বরং এতে নৌকারই প্রচার প্রচারণা হচ্ছে।
প্রশ্ন: অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদিকদের আপনি সময় দেন না এবং সাংবাদিকদের ফোনও ধরেন না, কেন ?
এমপি বাদল : এ অভিযোগও পুরোটা সত্য না। আমি আপনাদের প্রেসক্লাবে একাধিকবার গিয়েছি। ক্লাবের জন্য আর্থিক অনুদান সহ একটি সরকারি জায়গাও দিয়েছি (যা প্রক্রিয়াধীন)। ব্যক্তিগতভাবে একাধিক সাংবাদিককে আর্থিক ভাবে (চিকিৎসার জন্য) সহযোগিতাও করেছি। এটি সত্য, অনেক সময় কাজের চাপে অনেকের ফোন ধরতে পারি না। তবে কেউ আমাকে ম্যাসেজ পাঠালে আমি তাৎক্ষণিক ফোন ব্যাক করি। আমি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। গত পাঁচ বছরে কোন সাংবাদিকের লেখালেখিতে কোন প্রকার ইন্টারফেয়ার করিনি।
প্রশ্ন: মহাজোটের (জাসদ ইনু) সাবেক এমপি জিকরুল আহমেদের সঙ্গে আপনার দুরত্ব চলছে, কেন? জিকরুল সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কি?
এমপি বাদল : দুরত্ব সৃষ্টির অভিযোগ সত্য না। জিকরুল ভাই আমার বড় ভাই। তাঁকে আমি বড় ভাই হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করি এবং আমার বিশ্বাস, তিনিও আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো যথেষ্ট স্নেহ করেন। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বরাবরই ভালো।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, মনোনয়ন না পেলে আপনি ‘স্বতন্ত্র’ থেকে নির্বাচন করবেন?
এমপি বাদল : প্রশ্নই ওঠেনা। আমি এখানে আওয়ামীলীগের সভাপতি। আওয়ামীলীগ এ আসনে যেকোন সময়ের তুলনায় এখন ঐক্যবদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য আমাদেরকে যা যা নির্দেশ দেবেন, নৌকাকে বিজয়ী করতে নেত্রীর সেই প্রতিটি নির্দেশ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। নেত্রীর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনে মৃত্যুবরণও করবো। তাই, আসন্ন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে বিজয়ী করতে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা সকলের সর্বত সহযোগিতা কামনা করছি।