নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর থেকে: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা সমস্যার কারনে চিকিৎসা সেবা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ৩০ জন ডাক্তারের স্থলে কাগজে কলমে মাত্র ৭ জন ডাক্তার আছেন।তাদের মধ্যে ২জন ডাক্তার যোগদানের পর থেকেই অনুপস্থিত।বাকি মাত্র ৫ জন ডাক্তার কর্মরত থাকায় ডাক্তার সংকটের কারনে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার গণ।
জান গেছে, নবীনগর উপজেলার ২১টি উনিয়নের ৬লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চত করার জন্য কাগজে কলমে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে জনবল সংকট এবং চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা লেগেই আছে বছরের পর বছর ধরে। এখানে ৯ জন বিভিন্ন বিশেষ্যজ্ঞ চিকিৎকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তাসহ ৪জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় মাত্র ৪ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ অঞ্চলের এক মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি),মেডিকেল অফিসার(শৈবিবি)সহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এছাড়া সহকারী সার্জন ৯জন,নাসিং সুপারভাইজার ১ জন,সিনিয়র স্টাফ নার্স ২জন,সহকারী সেবক ১ জনসহ বিভিন্ন পদে লোক শূন্য রয়েছে।
সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য রোগীর ভিড়। হাসপাতালে রোগীরদের ওয়ার্ডগুলো দুর্গন্ধে ভরা। পানীয়জলের সুব্যবস্থা নেই রুগী সেবা ও সাজিক্যাল কাজ করতে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তারদের । প্রতিদিন শতাধিক রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ডাক্তারের অভাবে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী বেশি টাকা খরচ করে জেলা শহরসহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছে।
বর্তমানে উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত প্যাথলজিক্যাল টেকনিশিয়ান নেই,পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই এবং ওয়ার্ড বয় না থাকায় জরুরি বিভাগের কর্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তফা আশরাফ বলেন,আমি গত অক্টোবর মাসে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেছি। হাসপাতালের সঠিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপ্রান চেষ্টা করছি।ডাক্তার সংকটের কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও নবীনগর উপজেলাটি তিতাস ও মেঘনা নদী তীরবর্তী হওয়ায় এই এলাকার জনসাধারণের নৌ-পথে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার গত কয়েক বছর আগে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সকে একটি আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেন। অ্যাম্বুলেন্সটি আসার পর থেকেই চালকের অভাবে একদিনও চলাচল করেনি। গত কয়েক বছর যাবৎ নবীনগর লঞ্চ টার্মিনালের পাশে অবহেলায় পড়ে রয়েছে কয়েক লাখ টাকার মূল্যবান এই অ্যাম্বুলেন্সটি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সে জরুরি রোগী পরিবহনে কাগজ-কলমে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি চালকহীন, অপর অ্যাম্বুলেন্সটি ঠেলা, ধাক্কা ও মেরামত করে চলছে। ফলে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে হাওড়াঞ্চলের স্বল্প আয়ের গরিব ও অসহায় রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসাসেবা পেতে জেলা সদর, কুমিল্লা অথবা ঢাকার কোনো হাসপাতালে নেয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে ভাড়া করা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো যানবাহনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে হয়। এতে রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ৮টি। কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৪৯টি । উপজেলা স্বাস্থ ও প.প. কর্মকর্তা এসব ক্লিনিকগুলো পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য কোন গাড়ি নেই। ফলে মোটরসাইকেল যোগে এসব ক্লিনিক পরিদর্শন করে এসে তার পক্ষে রোগী দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেকক্সে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য নতুন ভবন নির্মান করা হলেও ৫০ শয্যার কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি।
এ সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করে নবীনগরবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ৬ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ অঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো।