নবীনগরে ভিক্ষা করে পুত্রের ঋণ পরিশোধ
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: আনুমানিক ৬২ বছর বয়সের মেহের বানু। বহু আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন। একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তিটি (স্বামী) মারা যাওয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান তিনি। জীবন যুদ্ধে নেমেই তিনি অনুভব করেছেন বেঁচে থাকাটা কত কষ্টের। এরপরেও থেমে থাকেননি তিনি সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয়েছে তাকে।
ঘোর ট্রাজেডি কাটিয়ে একসময় হাসি ফুটে মেহের বানুর ম্লান মুখে। বড় হয় তিন পুত্র। নতুন স্বপ্ন দিনবদলের। কিন্তু সুখের পায়রা বেশিদিন টিকেনি তার সংসারে। বড় ছেলে জাফর আলী (৪০) আলাদা বাড়ি করে থাকে উপজেলার শ্যামগ্রামে ও মেঝো ছেলে সফর আলী (৩৫) বউ নিয়ে নরসিংদীতে থাকায় তারা আজ নিজেদের সংসারের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত থাকে। সে কারনে বৃদ্ধ মায়ের খোজ রাখার এরা সময় পায়না বলেই জানালেন মেহের বানু।
তার জীবনে শেষ অবলম্বন ছোট ছেলে আতশ আলী (৩০)। হয়তোবা বৃদ্ধ মায়ের ভাবনায় ছিল শেষ বয়সে ছেলেদের আয় করা পয়সায় জীবনের বাকি সময়টুকু পার করে দিবে। দুই ছেলে আলাদা সংসারী হওয়ায় তিনি আতশ আলীর মুখপানে তাকিয়ে ভাবতেন এ ছেলে মাকে ফেলে দূরে যাবেনা।
মায়ের ইচ্ছা বিফলে না গেলেও ছেলের ঋণের বোঝা আবারো তাকে পথে নামায়। আতশ আলীর চার লক্ষ টাকা ঋণ। মাথায় চার লাখ টাকার চাপ, হয়তোবা তার কাছে আকাশ সমান। এই ভেবে ছেলের ঋণের বোঝা হালকা করতেই মা হাত পাতেন সবার কাছে। ভিক্ষা করে মা ছেলের ঋণ পরিশোধ করবেন এ চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।
পেশায় অটো মেকানিক আতশ আলী স্ত্রী পুত্র নিয়ে উপজেলার সুহাতা মোড়ে থাকে। মা মেহের বানুর স্থায়ী কোন ঠিকানা নেই। নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন এই মা। ভিক্ষার এই চাল নিজে এক মুঠোও খরচ না করেই এ চাল জমিয়ে ছোট ছেলের পাথিয়ে দেন তিনি।
এভাবেই প্রতিমাসে ৫ মণ! গত দু বছরের এ চালে আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছে আতশ।
-আড্ডার ছলে এসব কথা আদায় করলেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চাননি এই মা, সন্তানদের ইজ্জত যাবে বলে। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বঞ্চিত এই মা কি সাবলিল ভাবে বলে যাচ্ছিলেন করুণ এই উপাখ্যান।
আমিই কেবল লড়াই করছি চোখের জলগুলো আটকে রাখতে। পারিনি মা। ক্ষমা করো।