নবীনগরে এম.পি বাদল এত কাজ করেও কেন মনোনয়ন পেলেন না…???
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: সেই আদি কাল থেকে নবীনগর উপজেলার মানুষ মাত্র ১৯ কি. মি দূরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে যাতায়াত করে আসছে নৌপথে। লঞ্চ, নৌকা, ট্রলার কিংবা স্পিডবোট-ই হলো নবীনগরবাসির জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে তাই নবীনগরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি ছিলো নবীনগরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।
আশার কথা হলো, সেই সড়ক নির্মাণের প্রাণের দাবি এখন অনেকটাই পূরণ হয়েছে নবীনগরবাসির। একটি সড়কের বদলে এখন তিন তিনটি সড়ক দিয়ে নবীনগর থেকে সরাসরি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে সড়কপথে আসা যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি, পার্শ্ববর্তী উপজেলা আশুগঞ্জ নৌবন্দরের সঙ্গেও নবীনগরের সড়ক নির্মাণের কাজটিও এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর এই সবকটি সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে, শুধু জেলা সদর নয় ঢাকার সঙ্গেও নবীনগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ণ উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছে নবীনগরবাসি।
আর এইসব কিছুই সম্ভব হয়েছে ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়।
এলাকাবাসি জানান, ফয়জুর রহমান বাদল সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। যারমধ্যে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নবীনগর-শিবপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রাধিকা সড়ক নির্মাণ, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিটঘর-কুড়িঘর-গোকর্ণঘাট- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নির্মাণ ও ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নবীনগর-কৃষ্ণনগর-গোসাইপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নির্মাণ করে তিনি অবহেলিত ও পশ্চাদপদ নবীনগবাসির মনে একটি স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হন। এরমধ্যে দুটি সড়কের কাজ প্রায় শেষ হলেও একটি সড়কের (রাধিকা) কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া একনেকে পাশ হওয়া প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক নির্মাণের কাজও হয়তো সহসাই শুরু হবে। এছাড়াও ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নবীনগর কোম্পানীগঞ্জ সড়কটিকে ডাবল লাইনে উন্নীতকরা সহ প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে মানিকনগর এলাকায় মেঘনার ভাঙ্গণ রোধে বিশাল বেড়িবাঁধ নির্মাণও এমপি বাদলের উলে¬খযোগ্য কাজ।
স্বাধীনতার পর নবীনগরে চোখ ধাঁধানো এতসব উন্নয়নমূলক কাজ করার পরও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার এমপি বাদল আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন কেন পেল না, এ নিয়ে নবীনগরের সর্বত্র গত দুদিন ধরে চলছে নানা আলোচনা, হিসেব নিকাশ ও সমীকরণ। বলা যায়, এটি এখন ‘টক অব দ্যা নবীনগর’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,‘এমপি বাদলের মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য বাদল নিজেই অনেকটা দায়ী। কারণ আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও এমপি বাদলের কথিত নিরপেক্ষতার কারণে নবীনগরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও নবীনগর পৌরসভার মেয়র এ দুটি পদে বিএনপির বিপুল ভোটে জয় লাভ করাটাই তাঁর (বাদল) মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে বড় একটি কারণ ছিলো। এছাড়া, এমপি হয়ে স্থানীয় অনেক নেতা কর্মীর সঙ্গে প্রকাশ্যে অশোভন আচরণ করা, তৃণমূলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া, ত্যাগীদের বদলে ডিগবাজীখ্যাত হাইব্রীডদের কাছে রাখা, জাতীয় দিবসেও এলাকায় সঠিক সময়ে কম আসা, মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলীয় হাই কমান্ডে চেষ্টা তদ্বির না করা এবং সর্বশেষে দলীয় মনোনয়ন প্রথমে জমা না দিয়ে দুদিন অনেকটা ‘উধাও’ থেকে পরে অন্তিম মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে মনোনয়ন জমা দেয়াটাও মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ‘কারণ’ হিসেবে কাজ করেছে।’
তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন,‘একথা সত্য যে, মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই তাঁর (বাদল) নিজেরই প্রচন্ড অবহেলা ও উদাসীনতাই এক্ষেত্রে বেশী দায়ী বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু তাঁর পাঁচ বছরের ব্যাপক উন্নয়ন কাজের মধ্য দিয়ে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের তিনি যে ভালোবাসা পেয়েছেন, সেটি ছিলো স্বত:স্ফুর্ত। তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি যে নবীনগরের সবচেয়ে বড় জনবান্ধব ও জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন, সেটি মনোনয়ন পেলেই সাধারণ ভোটাররা এবার প্রমাণ করে দিতেন। এছাড়া, তাঁর আমলে নবীনগরে একটিও রাজনৈতিক মামলা হয়নি। কোন চাাঁদাবাজি, মস্তান বাহিনী, টেন্ডারবাজিও হয়নি। পাঁচ বছর সাধারণ মানুষ খুবই শান্তিতে ছিলেন।’
এ নিয়ে কথা হয় নবীনগরের গোসাইপুর গ্রামের শুক্কু মিয়া নামের পঞ্চাশোর্ধ এক রিকশা চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে নবীনাগর ও বাউনবাইরা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থাইক্যা আমাগো গেরাম গোসাইপুর ও কিষ্টনগরে (কৃষ্ণনগর) আয়ন যাওয়নের কুনু রাস্তাঘাট ছিল না। বাদল সাব এমপি হইয়া ক্ষেতের উপর দিয়া পিচের বড় রাস্তা কইরা দিছে। অহন দিন নাই, রাইত নাই, যহন খুশি তহনই গাড়ী লইয়া আমাগো এলাকার লোকজন এলাকায় আইতে যাইতে পারেন। অথচ, তার মতন এমপি এইবার নমিনেশান না পাওয়াডা কুনুভাবেই মাইন্যা লওয়ন যায়না, এইডা বড়ই কষ্টের, বড়ই দু:খের।’
এদিকে এবারই প্রথম ভোটার হওয়া ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে চাকুরীরত স্থানীয় মোক্তার হোসেন নামের এক যুবক, এমপি বাদল সম্পর্কে তার ফেসবুকে লিখেছে,‘একটি রাজনৈতিক দলের নেতা যে কেউ হতে পারে, কিন্তু জনগণের নেতা সবাই হতে পারে না। আপনি বাদল ভাই আপনার কর্ম দিয়ে নবীনগরের সকল জনগণের নেতা হয়েছেন। আপনি ৫ বছরে যা করলেন, তার জন্য আমরা নবীনগরবাসি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।’
কিন্তু এতকিছুর পরও এমপি বাদল এবার আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নটা শেষ পর্যন্ত পেলেন না।
সর্বশেষ, সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের উপদেষ্টা, বিকন গ্রুপের মালিক, বিশিষ্ট শিল্পপতি এবাদুল করিম বুলবুল।