ঋণ দেয়ার প্রলোভন : নবীনগরে কোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও!
মিঠু সূত্রধর পলাশ: নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জামানত বাবদ জমা করা গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে ‘ভিলেজ ডেভলপম্যান্ট সেন্টার (ভিডিসি) নামের একটি ভূয়া এনজিও উধাও হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকায় মাত্র ৫ দিন অবস্থান করে নামসর্বস্ব ওই ভূয়া এনজিও’র প্রতারকেরা গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে জামানতের ওই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
এলাকার ভূক্তভোগী ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যাকুট গ্রামে ব্যবসায়ী খায়ের মিয়ার বাড়িতে গত ১৪ জুন ‘ভিলেজ ডেভলপম্যান্ট সেন্টার’ নামে ওই এনজিও’র লোকজন অফিস ভাড়া নেন। এরপর তারা মাত্র পাঁচদিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তিতে ও স্বল্প সুদে নগদ টাকা ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক মানুষকে এর সদস্য করেন।
এলাকার সাদ্দাম মিয়া, জসিম উদ্দিন, জুলেখা খাতুন, দিলরুবা বেগমসহ অসংখ্য ভূক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন,’এক লাখ টাকা ঋণ নিলে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা সুদসহ দুই বছরে সহজ কিস্তিতে ওই এক লাখ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর ওই লাখ টাকা ঋণ পেতে হলে, জামানত বাবদ ১০ হাজার টাকা তাদের কাছে জমা রাখতে হবে। অনুরূপ ঋণের পরিমাণ ২ লাখ হলে ২০ হাজার, পাঁচ লাখ হলে ৫০ হাজার টাকা জামানত রাখতে হবে।’
এলাকার লোকজন জানান, এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে গ্রামের শতাধিক মানুষ ঋণ পেতে গত পাঁচদিন ধরে এনজিও কার্যালয়টিতে ভীড় জমায়। এরপর ঋণ পাওয়ার লোভে কেউ ১০ হাজার, কেউ ২০ হাজার এমনকি কেউ কেউ ৫০ হাজার টাকাও এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে জামানত বাবদ টাকা জমা করে।
ভূক্তভোগীরা জানান, জামানতের টাকা জমা করার পর ১৯ জুন সোমবার প্রত্যেককে জামানত অনুযায়ি ঋণের সমুদয় টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে ঋণগ্রহীতাদের আবেদন পত্রও (ফর্ম) জমা রাখা হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে (১৯ জুন) ভূক্তভোগীরা ওই এনজিও অফিসে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বাড়ির মালিক খায়ের মিয়া বলেন,’আমারে বাড়ি ভাড়ার এডভান্স, বাড়ির ভাড়া ও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ প্রায় ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক টাকাও পাইনি। আসলে এই প্রতারক চক্র যে এত অল্প সময়ে এমন বাটপারী করে মানুষের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাবে, সেটি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।’
স্থানীয় শিবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই শেখ কামাল উদ্দিন ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন,’শুনেছি, পাঁচ সদস্যের ওই প্রতারক চক্র সকালে বিদ্যাকুটের ওই অফিসে আসতেন এবং সারাদিন সদস্য সংগ্রহসহ জামানতের টাকা গ্রহণ করে সন্ধ্যায় চলে যেতেন। ওরা রাতে সেখানে নাইটহোল্ডও করতেন না। এরপরও মানুষ কিভাবে খোঁজখবর না নিয়ে ঋণের টাকা না পেয়েই ১০ হাজার, ৫০ হাজার টাকা জামানত রাখেন, আমার মাথায় আসেনা।’
এস আই শেখ কামাল আরও জানান,’এখনও এ বিষয়ে কোন ভূক্তভোগী আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে, ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বিদ্যাকুটের ইউপি চেয়ারম্যান জাকারুল হকের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও, তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে নবীনগরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান বলেন,’বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’