প্রদীপ নিভে যাওয়া পরিবারটি দেখলো আলোর মুখ
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার মঝিকাড়া গ্রামের রিক্সা চালক অরুণ মিয়ার থাকার কোন জায়গা নেই। স্ত্রী ও দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে পরের বাড়িতে একটি একচালা ছাউনি ভাড়া নিয়ে কোন রকমে জীবন চালিয়ে যাচ্ছিল। বড় ছেলের নাম মোছেন মিয়া(১৪)ছোট ছেলে ছেলের নাম আবির (১২)। জন্মের পর টাইফয়েড জ্বরে তার ছোট ছেলে আবিরের বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়, আর বড় মোছেন মিয়া জন্মের পরেই বাক প্রতিবন্ধী ও হাত পা বিকলাঙ্গ। আবিরের পায়ে একটি রড দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে তার জীবন। রিস্কা চালিয়ে অল্প আয়ের সংসারে তিন বেলা ভাত জোগাড় করতে পারতো না অরুন, ছেলেদের চিকিৎসা তো দুরের কথা। এরই মাঝে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস জীবন যুদ্ধে চলা অবস্থায় হঠাৎ একদিন আবিরের দাদা,দাদি,বাবাসহ পরপর তিন দিনে তিনজনের মৃত্যু দেখে ওই প্রতিবন্ধী দুই শিশু। বেঁচে থাকার আলো নিভে যায় তাদের। আবির পা খুড়িঁয়ে ভিক্ষা করে মা ভাইয়ের খাবার যোগার করত। সস্ম্রতি এই পরিবারের হৃদয়বিদারক এই কাহিনী সমাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তা দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামূল ছিদ্দিক এই অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারটি পাশে দাড়াঁলেন। তাদের হাতে তুলে দেন পাঁচ মাসের খাদ্য সামাগ্রী ও নগদ অর্থ। আর আবিরকে অপারেশন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে জিননদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি করে দেন এবং মাথা গুঁজার ঠাই হিসাবে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ন প্রকল্পে জিনদপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের জমিসহ একটি আধাপাকা ঘর উপহার দিলেন।
গতকাল বুধবার(১০-৫)স্কুলে আবিরের সাথে কথা হয়,আবির বলে,লেখাপড়া করে বড় হয়ে আমি স্যারের মত হবো। আমিও মানুষের সেবা করবো, স্যার যেভাবে মানুষকে উপকার করে আমিও তেমন ভাবে মানুষের উপকার করবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
জিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার বলেন,তার দায়িত্ব আমাদের ইউএনও মহোদয় নিয়েছেন। আবির লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী, আমরাও তার লেখাপড়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখছি।
এই মানবিক বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক বলেন,সমাজে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। যে পরিবারটিকে সহায়তা প্রদান করা হলো সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিসহ তিন দিনে তিনজন মারা গেছেন। আমরা চেয়েছি পারিবারটির জন্য স্থায়ীভাবে কিছু একটা করে দিতে।এখন তারা সমাজের মূল ¯্রােতে ফিরে এসেছে। আবিরের মা শিউলী বেগমকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও গাভী পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।