নবীনগরে পা কেটে হাতে নিয়ে মিছিল: কারা এই নরপশু? অদূরে পুলিশ থাকলেও করেনি সাহায্য
অবস্থা সংকটাপন্ন মোবারক মিয়ার (৪৫)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোবারকের বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দিহান তার পরিবার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ক্ষ্ণৃনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে দাঙ্গাবাজরা মোবারকের বাম পা গোড়ালীর ওপরের অংশ থেকে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর কাটা পা হাতে নিয়ে আনন্দ মিছিল করে। এসময় ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দেয় দাঙ্গায় জড়িত এই নরপশুরা। পরিবারের লোকজন জানান- তার ডান পা-ও কুপিয়ে আলাদা করার চেষ্টা হয়। দুই হাত এবং পিঠে রয়েছে আরো অনেক কোপের ক্ষত।
রোববার সংগঠিত লোমহর্ষক বর্বর এ ঘটনায় জড়িত ক’জনের নাম ঘটনার পরপরই প্রকাশ করেন মোবারক। তারা হচ্ছেন থানাকান্দি হাতবাড়ি গ্রামের সিরাজের ছেলে খোকন, হাজিরহাটি গ্রামের মাঈনুদ্দিনের ছেলে রুমান, ,জিল্লুর ছেলে শাহিন ও মালির ছেলে জাবেদ।
পা কেটে নেয়ার পরপরই গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনায় জড়িত এই ক’জনের নাম প্রকাশ করে মোবারক। বাকীদের সে চিনতে পারেনি বলে জানায়। তার এই বক্তব্য কেউ মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে। মিছিলে কাটা পা ছিলো গৌরনগর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে আনোয়ারের হাতে। স্থানীয়রা জানিয়েছে সে সিলেটে কাপড়ের ব্যবসা করে। করোনা পরিস্থিতির কারনে বাড়িতে এসেছিলো সে। ঘটনার শিকার হাজিরহাটি গ্রামের আবু মেম্বারের বাড়ির মোবারক ঢাকায় রিকসা চালাতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে চলে আসেন। মোবারককে ঘরে ঢুকে কোপানো হয় বলে জানান তার স্বজনরা। ঝগড়া শুরুর পর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো সে। দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে কোপানো হয় তাকে।
মোবারকের স্ত্রী সাবিয়া জানান- তার সামনেই মোবারককে মাটিতে সোজা করে শুইয়ে ফেলে। এরপর কোপাতে শুরু করে। এসময় তিনি অদূরেই থাকা পুলিশের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন সাহায্যের জন্যে। তার স্বামীকে মেরে ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে উল্টো ধাওয়া দেয়। সাবিয়া জানান, ঘটনাস্থলের কাছে ৩০/৪০ জন পুলিশ অবস্থান করছিলো। তারা ঝগড়া থামানোর কাজ না করে আসামী ধরাতেই ব্যস্ত ছিলো। মোবারক গ্রামের কোন ঝগড়া-দলাদলিতে ছিলেননা বলেও জানান তার স্ত্রী। তার জন্ম এবং বিয়েশাদী সব ঢাকাতেই। বছর চারেক আগে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে আসেন মোবারক। কিন্তু গ্রামের দাঙ্গা পরিস্থিতির কারনে এরমধ্যে দেড়বছর শ্বশুর বাড়িতে কাটাতে হয় তাকে । পরে আবার ঢাকায় চলে যান রিকসা চালাতে।
মোবারকের এক চাচাতো ভাই শাহজালাল জানান- শারীরিক অবস্থা ভালো নয় মোবারকের। তার বাঁচা কঠিন। ডান পা-ও কুপিয়ে প্রায় আলগা করে ফেলা হয়েছে। ডান হাতে ৭টি এবং বাম হাতে ৩টি কোপ দেয়া হয়। পিঠেও রয়েছে ৩টি কোপ। ঘটনার পরপর মোবারককে প্রথমে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শাহজালাল জানান- ১০/১২ জন মিলে কুপিয়েছে। ৪/৫জন ছাড়া মোবারক সবাইকে চিনতে পারেননি। হাজিরহাটির খায়েশ মিয়ার ছেলে কাশেম,বারেক মিয়ার ছেলে আরিফ এবং হাতবাড়ি গ্রামের সিরাজের ছেলে খোকনের সাথে তার আরেক ভাই সোহেলও মোবারকের ওপর হামলায় জড়িত বলে জানতে পেরেছি আমরা। এরবাইরে গৌরনগর থেকে এসেছে আরো কয়েকজন। এদেরকে চেনা যায়নি।
পৈশাচিক ঘটনায় জড়িতদের সবাই এখনো পুলিশের ধরাছোয়ার বাইরে। তবে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে দু-পক্ষের নেতা নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও কাউসার মোল্লাসহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নবীনগর থানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পা কেটে নিয়ে মিছিলকারী ১২/১৩ জনকে তারা গ্রেফতার করেছেন। কুপানোর সঙ্গে জড়িতরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। তাদের অন্যতম রুমান । পুলিশ বলছে রুমানই কুপিয়েছে।
তবে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিৎ রায় জানান- পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার একটি অভিযোগ দিতে পারে। এতে হয়তো ঘটনায় জড়িতদের নামধাম থাকতে পারে। এটি পেলেই আমরা বলতে পারবো কারা কারা এঘটনায় জড়িত। তবে ওইদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি। কৃষ্ণনগরে ওই সংঘর্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়। বাড়িঘর ভাঙ্গচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রতিবেদনটি মানবজমিনে প্রকাশিত