কানাডায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ
সদেরা সুজন, সিবিএনএ, কানাডা থেকে:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বাংলাদেশব্যাপী মন্দির ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগসহ রকমারি বর্বর হামলা এবং বর্তমান সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে সারা বিশ্বের মতো কানাডার বিভিন্ন শহরে প্রবাসীরা নাগরিকরা প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেছেন। প্রতিটি সভাতেই বর্বরোচিত জঘন্য মানবতাবিরোধী হামলার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নারী পুরুষ শিশুরা বিভিন্ন রকমের ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। বিশেষ করে কানাডা বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট এসোসিয়েশনের বিশাল মিছিলটি মূলধারার মানুষদেরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
মন্ট্রিয়লে মানববন্ধন ও বিক্ষোভস্থানে বক্তব্য রাখেন উত্তর আমেরিকার মানবাধিকার নেতা উইলিয়াম স্লোন, এডভোকেট ফনিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার প্রবীর ধর, দিলীপ কর্মকার, শ্যামল দত্ত, এডভোকেট অমলেন্দু ধর, বিদ্যুৎ ভৌমিক, জয়দত্ত বড়ুয়া ও রণজিৎ মজুমদার।
বক্তারা, নির্বাচন-পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে একই অজুহাত তুলে কক্সবাজারের রামুসহ কয়েকটি এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে আক্রমণ চালিয়ে কয়েক শ স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। সরকার সেসব বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারের কিছু নির্মাণ করে দিলেও আক্রমণকারী কাউকে শাস্তি দিতে পারেনি। সেবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বৌদ্ধ সম্প্রদায়, এবার হিন্দু সম্প্রদায়। কিন্তু এসবের সঠিক বিচার না হওয়ায় এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বিক্ষোভকারীরা এজন্য প্রশাসনের উদাসীনতা এবং স্থানীয় এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন, মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অথচ এদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘুরা শহীদ হয়েছে, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আদিবাসী সবাই মিলে একসঙ্গে বসবাস করা এদেশের ঐতিহ্য ছিলো। সব ধর্মের মানুষ এদেশে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসলেও কিছু ধর্মান্ধ মৌলবাদীর মিথ্যা অভিযোগ করে বার বার সংখ্যালঘুদেরকে নির্যাতন করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় থাকতে একজন মন্ত্রী হিন্দুদের নিয়ে এই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কীভাবে করলেন? এতে জাতি বিস্মিত।
হিন্দু সম্প্রদায়কে আঘাত করে বক্তব্য দানকারী প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুর রহমান নামের মন্ত্রীকে বহিষ্কারের এবং ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এছাড়া অনতিবিলম্বে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। ৭২ এর সংবিধান পুন চালু করে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার আহবান জানান। দেশব্যাপী ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার দাবিও তুলেন বক্তারা।
এদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কানাডা শাখার পূর্ব নির্ধারিত দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন ও সম্মেলন হবার কথা ছিলো আজ মন্ট্রিয়লের কোট দে নেইজে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচারের প্রতিবাদে এই সংগঠনটির অধিবেশন বাতিল করে প্রতিবাদ সভা রূপান্তরিত হয়।
প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি সুনীল গোমেজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতা প্রদীপ সরকার দোলন, জয়দত্ত বড়ুয়া। অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেন সরোজ কুমার দাস। প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্মালংকার ভিক্ষু, আনন্দপ্রিয় ভিক্ষু, কৃষ্ণপদ সেন, বরুণ বনিক, বিবেকানন্দ বিশ্বাস, অলক চক্রবর্তী, দিলীপ চৌধুরী, রিংকন বড়ুয়া, সুশান্ত বড়ুয়া, সুকান্ত বড়ুয়া প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বাংলাদেশব্যাপী মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক বর্বর হামলার বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর (রোববার) বিকেলে এক প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছে টরন্টোর ড্যানফোর্থে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি‘ জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা উপস্থিত হয়ে বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। কানাডার অন্যান্য শহরও বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।