Main Menu

মধ্যপ্রাচ্য থেকে অর্থ প্রেরণে আসছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা : প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে

+100%-

ডেস্ক ২৪: মধ্যপ্রাচ্য থেকে অর্থ প্রেরণে আসছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা। এরই মধ্যে সৌদি আরব সরকার তার দেশ থেকে অর্থ পাঠানোর সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে এটি চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়া ওমান, কুয়েত, সিরিয়া, আবুদাবি, ইরাক, কাতারসহ অন্যান্য দেশগুলো পরিকল্পনা করেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্র্রতিক এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরব নিউজ একটি রিপোর্ট করেছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, রেমিট্যান্স পাঠানোতে এই কড়াকড়ির ধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ এ দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ৩৫ ভাগ আসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স থেকে। এর মধ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান রয়েছে। জানা গেছে, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আসে। এর মধ্যে রেমিট্যান্স খাতে আসে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাহত হলে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আরব নিউজের রিপোর্টে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আবু আয়েশা নামে একজন পাকিস্তানি শ্রমিক বলেন, আমাদের অর্থ অবৈধ নয়। সম্পূর্ণ বৈধ পথে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ আমরা দেশে প্রেরণ করে থাকি, এটা গোপন কোনো বিষয় নয়। উপসাগরীয় দেশগুলো যদি ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় তাহলে দেশগুলোর উচিত, যে শ্রমিকরা তাদের দেশে সস্তায় শ্রম বিক্রয় করছে তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া। তাছাড়া দেশগুলোর উচিত তাদের নাগরিকদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া ও উত্সাহিত করা যাতে তারা সহজেই নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারেন। এতে করে তাদের বিদেশি শ্রমিক নির্ভরতা কমে আসবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সোহেল মালিক নামে মক্কায় বসবাসরত একজন শ্রমিক বলেন, সম্প্র্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর পূর্ণ অধিকার আছে। আলিম খান নামে সৌদি আরবে বসবাসরত একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, এটা খুবই ভাল খবর যে প্রবাসীরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশে তাদের স্বজনদের কাছে পাঠাতে পারছে। তবে প্রবাসীরা যে সমস্ত দেশে কাজ করে তাদের এই বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত যে লাখ লাখ দক্ষ পেশাদার লোক এদের মধ্যে আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান, যারা তাদের দেশে কাজ করতে এসেছে। তারা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে তাদের সঙ্গে। যেটা যে কোনো দেশের ভবিষ্যত্ বিনির্মাণ পরিকল্পনায় তাদের একটা বড় বিনিয়োগ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় ৬টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ করে। ২০১১ সালে তারা প্রায় ৭৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স নিজ দেশে প্রেরণ করেছে। আর এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ৬০ শতাংশই সৌদি আরব ও আরব আমিরাত থেকে প্রেরণ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে ভারতীয়রা। ২০১১ সালে তারা দেশে প্রেরণ করেছে ২৯ বিলিয়ন ডলার।

নাজমি বাহজাত নামে জেদ্দায় বসবাসকারী একজন শ্রমিক বলেন, কেউ কাউকে ফ্রিতে কিছু দেয় না। এই অর্থ আমরা কষ্ট করে উপার্জন করি। এটা খরচ করা কিংবা দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ অধিকার থাকা উচিত। উপার্জিত অর্থ প্রধানত আমরা এখানে আমাদের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে ব্যয় করি। তাছাড়া আকামা পরিবর্তন ও ভিসা নবায়নের কাজে যে অর্থ ব্যয় করি তা রাজস্ব হিসেবে দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই জমা হয়। আমাদের উপার্জিত অর্থের একটা বড় অংশ আমরা এখানে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয় করে ফেলি। দিলশাদ আহমেদ নামে প্রবাসী এক ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী বলেছেন, প্রবাসীদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তবুও তারা সৌদি নাগরিকদের প্রেরণার একটি বড় উত্স হতে পারে। সৌদি নাগরিকরা তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারে এবং চাকরির জন্য নিজকে দক্ষ করে তুলতে পারে। যদিও সৌদি নাগরিকদের জন্য এটা খুবই কঠিন এবং নিম্নমানের কাজ হিসেবেই বিবেচিত হয়।






Shares