Main Menu

একজন প্রবাসীর ঈদ আনন্দ

+100%-

ফারুক আহমেদ পার্থ, অস্ট্রেলিয়া থেকে: শেষ কবে দেশে ঈদ করেছিলাম মনে নেই, ছয়-সাত বছর হবে। প্রথম যখন বিদেশে ঈদের নামাজ পর ইমাম সাহেবের সাথে কোলাকুলি করে বলেছিলাম – জীবনে প্রথম ঈদের নামাজের ইমাম সাহেবের সাথে কোলাকুলি করলাম, তিনি হেসেছিলেন।

দেশে ঈদগা মাঠের পেছনে বসলে ইমাম সাহেবকে চেনা যেত না ভালো করে, এক মাঠ সারি সারি মানুষ – যেন ধনী-গরিব সব ভুলে এক হয়ে যেত কিছুক্ষণের জন্য।  কতদিন দৌড়ে গিয়ে নামাজ ধরেছি। দূর থেকে মাইকে শুনতে পেতাম – আল্লাহুয়াকবার আল্লাহুয়াকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহুয়াকবার আল্লাহুয়াকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। চারদিক থেকে দলে-দলে হাঁটতে হাঁটতে আমরাও বলতাম -আল্লাহুয়াকবার আল্লাহুয়াকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহুয়াকবার আল্লাহুয়াকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ঈদগা মাঠে পৌঁছে চটের উপর অথবা ঘাসের উপর পরিষ্কার বিছানার চাদর ভাজ করে বিছাতাম – ভাইয়েরা সবাই আব্বার পাশে লাইন দিয়ে বসে যেতাম। চারদিকে আতরের গন্ধ পেতাম। অপেক্ষা করতাম কখন নামাজ শেষ হবে – বাসায় গিয়ে শুরু হবে আনন্দের সেই দিন, খুদবা লম্বা হলে উশখুশ করতে থাকতাম।

তেমন আনন্দ প্রবাসে নেই। বাবা-মা, ভাইবোন ছেড়ে সেই ঈদ আনন্দ পাওয়ার কোন কারণও নেই। আর যারা স্ত্রী-ছেলেমেয়ে দেশে রেখে এসেছেন, সকালে হয়ত তাদের দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে দেশে ফোনে কথা বলতে বলতে। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা ঈদ বিষয়টা ঠিক উপলব্ধি করতে পারে না আমরা যেমন অনুভব করতাম যেন ঈদের দিনটার একটা গন্ধ ছিল, রঙ ছিল। সন্ধ্যা হয়ে গেলে মন খারাপ হয়ে যেত – আরেকটা ঈদের জন্য অপেক্ষার শুরু।  আমাদের ছেলেমেয়েদের  সমস্ত আনন্দ যেন টেলিভিশন, গেমস, আর কম্পুটার গিলে খেয়ে ফেলেছে। বাবা হিসাবে এটা আমার জন্য কষ্টের। এ বিষয়ে পরে একদিন বলব, আজ ঈদের কথা বলি।

এখানে সারাদিন ব্যস্ত কাটে এ বাড়ি সে বাড়ি ঘুরেঘুরে। কোলাকুলি আর খাওয়া দাওয়া, আড্ডা দেয়া, দেশে ফোনে কথা বলা, স্ত্রীর কান্না ভেজা গলায় তার দেশে বাবা-মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে শোনা। এই তো। অনেকে ছুটি না পেলে কাজ করেন। তবে এখানে ঈদের দিনে মানুষের কষ্ট দেখতে হয় না। দেখতে হয় না আমার মেয়ের বয়সী আট-নয় বছরের মেয়েটিকে, যে ঈদের মাঠের পাশে হাত বাড়িয়ে বসে থাকত। দেখতে হয় না আমার ছেলের বয়েসী দশ বছরের ছেলেটাকে, যে মায়ের জন্য ঈদের শাড়ি কেনার জন্য ঈদের আগে বখশিসের জন্য মিনতি করতো, যে ইফতারের পরে চায়ের দোকানে চা নিয়ে ছুটোছুটি করতো।

প্রবাস জীবনে কষ্ট এই যে সামর্থ্য থাকতেও আমার ছেলেমেয়েদের বয়েসী শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিছু করতে পারি না। হয়ত পারি তা খুবই সামান্য। দেশে পরিবারের কাছে পাঠানো টাকা থেকে অথবা আত্মীয় আর বন্ধুদের কিছু টাকা পাঠিয়ে মেয়েটাকে একটা ফুটফুটে জামা কিনে দিতে বলতে পারি। চায়ের দোকানের ছেলেটাকে একটা লাল জামা কিনে দিতে বলতে পারি। আর একটা শাড়ি গ্রামে ফেলে আসা ওর মায়ের জন্য। সে হয়তো তার মাকে গিয়ে বলবে – এক স্যার বখশিশ দিছে। হয়তো সে বুক ফুলিয়ে বলবে – মা, তুমার লাইগ্যা আনছি। তাতে মায়ের চোখে যদি দুই ফোঁটা পানি আনন্দে গড়িয়ে পড়ে – তাই বা কম কি? তাই দেরী না করে আজই ওদের মুখে একটু হাসি ফোটাই। একটি শিশুর মুখেও যদি হাসি ফোটে, একটি মায়ের চোখেও যদি আনন্দ অশ্র“ ঝরে – ধরে নেব আমার এই লেখা সার্থক।



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares