কাতার বিএনপি’র নির্বাচনে সা.সম্পাদক প্রার্থী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ আমিনুল হক
আমিনুল ইসলাম, কাতার প্রতিনিধি:: আগামী ৩ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতারস্থ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তাথা ধানসিড়ি বিএনপির নির্বাহী কমিটির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন। নির্বাচনে তিনটি পদে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে এগার জন প্রার্থী। সভাপতি পদে তিনজন, সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পাঁচজন। বাংলাদেশ স্কুল ও কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০’র ডাকসু ও হল ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে মনোনীত হয়ে স্যার এ.এফ. রহমান হল ছাত্রসংসদ থেকে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচিত সহ-ক্রীড়া সম্পাদক, কাতার বিএনপির ২০০৯ সালের নির্বাচনে একজন দায়িত্বশীল নির্বাচন কমিশনার এ.কে.এম. আমিনুল হক (কাজল) এবার কাতার ধানসিড়ি বিএনপির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন।
শৈশব ও ছাত্রজীবন:আমিনুল হক কাজল ১৯৬৯ সালে ৩০ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইস্ট পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তিনিও আমিনুল হকের জন্মসারেই মৃত্যুবরণ করেন।শিশুকারে এতিম এ ছেলের দায়িত্ব নেত তার বড় ভাই এ.কে.এম. রুহুল আমিন। তিন তখন দ্য পিপলস্ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। জামিলা আক্তারের অপত্য স্নেহ আর ভাই-ভাবীর শাসন-সোহাগে স্বপ্নবাজ হয়ে ওঠেন আমিনুল। ২য় শ্রেণীতেই ভাই রুহুল আমিন তাঁকে ঢাকায় এনে শেরে বাংলা স্কুলে ভর্তি করে দেন। বাসা বদলের সূত্রে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল ও বঙ্গভব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। মা’র জন তাঁর প্রাণ ভীষণভাবে কাঁদে। বারবার গ্রামের বাড়িতে মা’র কাছে যেতে চান। অবশেষে গ্রামের স্কুলেরই মা’র সান্নেধ্যে থাকার জন্য তিনি ভর্তি হন পঞ্চম শ্রেণীতে।
১৯৮৫ সারে গোকর্ণ সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি ও ১৯৮৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই সাতিত্যানুরাগী আমিনুল তিনি ১৯৯০সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএন(সম্মান) ও ১৯৯১সারে এম.এ. পাশ করেন।
কর্মজীবন:বিশ্ববিদ্যালয়ের ছা্ত্রত্বের শেষ দিকে তিনি ঢাকার উত্তরার গুরু গৃহ প্রি-ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুলে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তারপর নিজ উপজেলার চাতলপাড় কলেজ ও পরে ঢাকার দক্ষিণখানে উত্তরা আনোয়ারা মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৯৬ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত বাংলাদেশ এম.এইচ.এম. স্কুল ও কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক থেকে উপাধ্যক্ষ, ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে কাতারের রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের সাথে মতের মিল না হওয়ায় তিনি কলেজ ছেড়ে কাতারের নিজ উদ্যোগে ট্রেডিং কন্ট্রাক্টিং ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আল হিম্মা আল কাতারি রিয়েল এস্টেটের সিইও।
সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন:
ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগঠক হিসেবে পরিচিত।তাঁর নিজ গ্রামে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় গঠন করেন সঞ্চয়ী ও সামাজিক সংগঠন নূরপুর যুব উন্নয়ন পরিষদ। সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়েও তিনি এ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সভাপতি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল হক। এ সময় শহীদ দিবস উপলক্ষে তাঁর সম্পাদিত প্রথম ম্যাগাজিন ‘বাংলা হৃদয় রাঙলা’ প্রকাশিত হয়।তাঁর নেতৃত্বেই নাসিরনগর উপজেলার প্রথম স্কুল হিসেব ১৯৮৪ সালে প্রথম গোকর্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল ড্রেস বাস্তবায়ন হয়। তিনিই ১৯৮৫ সালে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ‘নাসিরনগরে কলেজ চাই’- শিরোনামে লিখেন। যার ফলে ১৯৮৭ সালে অত্র এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ.এম. এরশাদ আসলে উপজেলার প্রথম কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।গত বছর এ কলেজ সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৮৭ সালে নিজগ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যার আহ্বায়ক ছিলেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আহসানুল হক।
১৯৭৬ তিনি যখন বঙ্গভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তখন ব্রাদার্স ক্লাবের আমান্ত্রণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঢাকার গোপীবাগের বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনীতে আসেন।আমিনুল হক ভাই-ভাবীর সাথে ঐ কলোনীতেই থাকতেন।মঞ্চের কাছে থেকে জিয়াউর রহমানকে তিনি দেখেন। সেই থেকে জিয়াভক্ত আমিনুলের শ্রদ্ধা-ভক্তি ক্রমেয় বাড়তে থাকে।জিয়া যখন মারা যান তখন আমিনুল সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। মরহম রাষ্ট্রপতির শোকসভায় শিক্ষকদের নিকট থেকে জিয়া সম্পর্কে নানা ইতিবাচক কথা শুনে তাঁর ভক্তির মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। এরই প্রতিফলন হিসেবে কিশোর অবস্থায় বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজ এলাকায় বিভিন্ন মিছিল-মিটিং ও রিকসায় চড়ে মাইকে প্রচারণায় অংশ নেন। ১৯৮৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে জেলা ছাত্রদলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসেন ঢাকা থেকে কিংবদন্তী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান রিপন,মাহবুবুল হক বাবলু ও সানাউল হক নীরু।তাদের আগমন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর মিছিলের শহরে পরিণত হয়। আমিনুল হক ছাত্রদলের এ মিছেলে শতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। সেই থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে তার পদচারণা।
১৯৮৭-৮৮শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন। ৯০’র ডাকসুতে আমান-খোকন-আলমের নেত্রীত্বে ডাকসুর পূর্ণ প্যানেলে ছাত্রদল বিজয়ী হয়। সে সময় স্যার এ.এফ.রহমান হল ছাত্রসংসদে ছাত্রদল নেতৃত্বাধীন সাঈদ-লিয়াকত-টগর পরিষদ ১২টি পদের মধ্যে ৮টিতেই বিজয়ী হয়। আমিনুল হক ঐ প্যানেলে সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ছাত্রলীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়।
ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ঢাকাস্থ নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি গঠিত হয়। তিনি ঐ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের চার জনের একজন। পরে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে ঐ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সম্পাদনায় সমিতির প্রথম বার্ষিক ম্যাগজিন প্রকাশিত হয়।
তিনি জাসাস এফ.রহমান হল শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক থাকাকালে শহীদ দিবসে প্রথম ম্যাগাজিন ‘সন্তর্পণে’ প্রকাশ করেন। তাঁর হাত ধরের অত্র হল ছাত্রসংসদের প্রথম বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়; যদিও এর দায়িত্ব ছিল সাহিত্য সম্পাদকের।
জনাব আমিনুল হক ২৪ বছর ধরে কাতারে অবস্থান করলেও শিক্ষকতার প্রথম বার বছর রাজনীতি করে নি। তবে সময়ে বিএনপি’র মন্ত্রীরা যারা কাতারে এসেছেন তাঁদের প্রায় সকলের মানপত্র তিনি লিখেছেন। সর্বশেষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কূটনীতিক ক্লাবে সংবর্ধনা প্রদান কালে তাঁকে উপহার দেয়া মানপত্রটি তিনিই লিখেছিলেন – যা পাঠ করে উপহার দেন বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
বাংলাদেশ স্কুল ও কলেজ ছেড়ে আসার পর তিনি ধানসিড়ি বিএনপি’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলে অংশগ্রহণ করতেন। ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বর ধানসিড়ি বিএনপি’র নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। নির্বাচনের পর প্রথম নির্বাহী কমিটির মিটিং-এ তাঁকে ট্যাকনোক্র্যাট কোটায় নির্বাহী সদ্য হিসেবে সভাপতি জানাব আবু ছায়েদের দেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাশ হলে তিনি কাতার ধানসিড়ি বিএনপির রাজনীতিতে সরাসারি জড়িত হন।
তিনি ধানসিড়ি বিএনপির সংবিধান সংশোধনী কমিটির সদস্য হিসেবে সংবিধানকে যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১২ সারের নির্বাচনে তিনি সাবেক সভাপতি আবু ছায়েদের নেতৃত্বাধীন প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল দ্বিধাবিভক্ত হলে পরবর্তীতে একত্রীকরণের জন্য দুই পক্ষের দুটি কমিটি হয়। আমিনুল হক তাঁদের পক্ষের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেন। এক হওয়া ধানসিড়ি বিএনপির তিনি নির্বাহী সদস্য এবং বাণিজ্যিক এলাকা নাজমার বিএনপি’র সভাপতি।
সামাজিক সংগঠক হিসেবে তাঁর বেশ পরিচিত রয়েছে কাতার জুড়ে। তিনি সদ্য গঠিত বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। আল-নূর কালচারাল সেন্টারের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক এবং বর্তমান গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক পরিচালক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি কাতার এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রধান উপদেষ্টা। ২০১২ সাল থেকে তিনি এনটিভির কাতার প্রতিনিধি ও এর দর্শক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক। তিনি কাতারস্থ বাংলাদেশ লেখক-সাংবাদিক অ্যাসিসিয়েশনের তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি।
৩মে আসন্ন নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে সবাইকে সাথে নিয়ে যুবদল, শ্রমিকদল, জাসাসকে পুনর্গঠিত করার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে কাতার বিএনপির হাত আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি দীর্ঘ দশ বছর নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্বের যে জট আছে তা নিরসনের জন্য নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব দিতে চান।
আমিনুল হক আশা করেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ দিবেন কাতার বিএনপি’র নেতাকর্মীবৃন্দ। তিনি ভোটাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতার পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছে একটি করে ভোট চান