একজন প্রবাসীর ভাবনা:: কঠিন সত্য মেনে নিয়ে নিজের ভবিষ্যতকে সু-প্রসন্ন করুন।
সুখে থাকাই জীবনের চরম সার্থকতা নয়,
বরং কাউকে সুখে রাখতে পারাটাই হল জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।
কিন্তু উদারচিত্তে কাউকে সবকিছু উজাড় করে দেয়াটা বোকামি ছাড়া কিছু না।
আসলে সহনশীল মানুষগুলা একটু বোকা প্রকৃতির হয়, আর সেই সুযোগটা কাজে লাগায় উৎ পেতে থাকা স্বার্থবান মানুষেরা।
সাধারনত অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার আগে নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া খুব জরুরী।
কারন অন্যের দায়িত্ব পালন করতে নিজেকে নিঃস্ব করে একদিন আপনি নিজেই অন্যের বোঝা হয়ে কারো না কারো ঘাড়ে বসে থাকতে হবে।
হয়তো তখন আপনার প্রতি কেউ দায়িত্বশীল হবে না। তিরষ্কার আর লাঞ্চনা ছাড়া হয়তো ভাগ্যে কিছু জুটবেনা।
এই তিরষ্কার লাঞ্চনা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের কপালেই জুটে,
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে-
একটা পরিবারের একজন সদস্য প্রবাসে কিন্তু পরিবারের বাকি সদস্যরা বেকার কমিটির সদস্যের আওতাভুক্ত।
যেমন এক ভাই প্রবাসে বাড়িতে দুই ভাই বেকার এক ভাই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করে, আবার বিয়ের উপযুক্ত তিনটি বোন একটি বোন মাত্র প্রাইমারীতে ভর্তি হয়েছে।
মা বাবা সহ নয় জন সদস্যের সংসারে একমাত্র ভরসা একজন প্রবাসী।
একজন প্রবাসী নয়জন সদস্যের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
হ্যা দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যবোধ আবশ্যক।
কিন্তু দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যবোধে সম-অধিকার থাকা ও আবশ্যক।
বিপত্তি আমাদের এখানেই দায়িত্ববোধে সম অধিকার।
কিন্তু কেন নয়????
একজন মানুষ নিঃস্বার্থে নিজের জীবনকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দিয়ে নয়জন মানুষকে সমাজে প্রতিষ্টিত করে বসবাসের উপযোগী করে দিলো, কিন্তু সেই মানুষটা যখন বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে গেলো তখন সে সবার কাছে অবহেলিত হয়ে বেচে থাকতে হয় বাকিটা জীবন।
সহনশীল মনোভাব তো দুরের কথা, উল্টো প্রতিহিংসার স্বীকার হতে হয় সেই নিবেদিত মানুষটাকে।
তখন প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় পরিবারের সকলের কাছে।
যাদের জন্য নিঃস্ব হলো তারাই বলে কত টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স জমা করেছো?
শশুর বাড়িতে কত বিঘা জমি কিনেছো?
বউয়ের একাউন্টে কত টাকা ডিপোজিট আছে?
বউ বেচারি প্রশ্ন করে তোমার ভাইদেরকে প্রতিষ্টিত করেছো তারা তোমাকে কি দিচ্ছে?
সন্তানরা বলে আমাদের জন্য কি জমা করেছো?
আজ কেন আমরা অন্যের হাতপানে চেয়ে থাকবো?
চাচাত বোন মাসে ৩/৪ টা জামা কিনে,
আমাকে বছরে কয়টা জামা কিনে দিচ্ছো?
চাচাত বোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে,
আমি কেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে পারবো না?
গল্প শুনেছি একসময় সংসারে অর্থ যোগান দিয়েছো তুমি,
তাহলে আজ তুমি সহ আমরা সংসারে এত অবহেলিত কেন?
কেন মায়ের সাথে সবাই রুঢ় আচরন করে?
দাদা দাদু কেন কথায় কথায় বলে আমাদেরকে সংসার থেকে পৃথক করে দিবে?
তাহলে সংসারের জন্য কি তুমি কিছু করো নাই?
নিস্তব্দতায় নিস্ফলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আর শ্রবন করতে থাকে অবাঞ্চিত প্রশ্নগুলো।
উত্তর দেয়ার মত ভাষা তার কাছে নেই।
উত্তর দিতে পারতো যদি নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হতো। কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই নেই।
কারন সময় ফুরিয়ে গেছে।
সময় মানুষকে কখন কোন পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয় সেটা সময়ই ভালো জানে।
আসলে সময় বড়ই নিষ্টুর, সময় থাকতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে কপালে দুঃখ ছাড়া কিছুই জোঠেনা।
অবশ্যই আমরা নিজেরা নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়াটা খুবই জরুরী।
নিজের ভবিষ্যতকে সুপ্রসন্ন করে অন্যের ভবিষ্যতের কান্ডারী হওয়া সমিচীন। নিজেকে স্বার্থন্বেষী পরিচয় দেওয়া সঠিক নহে, কিন্তু নিজের প্রতি দায়িত্ববান হওয়া উন্নত মানসিকতার চিন্তাধারা।
নিবেদিত মানুষগুলোকে সুখের সঙ্গী নাই বা করলে, কিন্তু দুঃখের সাগরে ঠেলে দেওয়া ঠিক নহে।
আর এই দুঃখের সাগরে ভাসমান কচুরিপানা হয় একমাত্র প্রবাসীরা।
প্রসঙ্গত প্রবাসীরা একটু বেশী আবেগ প্রবন, প্রবাসে এসে একা থেকে থেকে পরিবার পরিজনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসা বেড়ে যায়।
কিন্তু এই মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসা প্রবাসীদের ভবিষ্যতকে সাগরের কচুরিপানা বানিয়ে তোলে।
একটা কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা।
পৃথিবীতে টাকার কাছেই সবকিছুই হার মানে।
তাই এখন আপনার টাকা আছে সবাই আপনাকে বুকে টেনে নিবে, আপনার যখন টাকা থাকবেনা তখন আপনি কেমন আছেন কেউ জিঙ্গেস করবেনা।
সুতরাং কঠিন সত্য মেনে নিয়ে নিজের ভবিষ্যতকে সু-প্রসন্ন করাই শ্রেয়।
আর যারা এই কঠিন সত্যকে মেনে নিতে কষ্ট হয় তাদের ভবিষ্যত সাগরে ভেসে থাকা কচুরিপানার মত।
প্রমানিত………….