পশ্চিমা বিশ্বে সমসাময়িক ইসলামী ব্যক্তিত্ব – ইভন রিডলী
ইসলাম যেভাবে রিডলীর জীবনে আলো হয়ে এলো: “তুমি কি জানো এই ব্যপারটি শুধু যে বিশ্বাসের সাথে জড়িত তাই নয়, বরং তা সম্পূর্ন জীবনের সাথে জড়িত। আজকে এই ক্ষনিকের ভাবনায় এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” তালিবান এক সৈন্য যখন ইভনকে ইসলাম গ্রহন করার আহ্বান জানায় তখন কিছুক্ষন নীরব থেকে ইভন এই উক্তিটি করেন। যখন ইভন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তিনি তালিবানদের বন্দীশিবিরের একজন বন্দিনী। তিনি জানেন না তার ভাগ্যে কি আছে আগামীকাল। তিনি শুধু জানেন তখনও তিনি জীবিত। বন্দী শিবিরই কি তবে হবে তার শেষ ঠিকানা? নাকি তিনি ফিরে যেতে পারবেন তার প্রিয় জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। জীবন মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষনে থাকলেও রিডলী সাহস ও বুদ্ধি হারা হন নি। তালিবান সৈন্যটি যখন তাকে ইসলাম গ্রহনের আহ্বান জানায় তখন তিনি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে যান। তিনি ইসলাম গ্রহনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এদিকে তালিবানদের সম্পর্কে খুব ভাল ভাবে মগজ ধোলাই দেয়া হয়েছে আফগানিস্তানে আসার আগেই। তাই কি বলবেন সে মুহুর্তে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। সরাসরি “না” শোনার মানসিকতা কি তালিবান সৈন্যটির আছে? “না” শোনার সাথে সাথে যে রিডলীর দিকে বন্দুক তাক হয়ে যাবে না, সেই বা কে জানে? রিডলী ভাবতে লাগলেন কি বলা যায়। একেকটি মুহুর্ত মনে হচ্ছে যেন একেকটি যুগ। রিডলীর শেষ পর্যন্ত তার উচু গলা নামিয়ে নিলেন। করলেন সেই উক্তিটি: “তুমি কি জানো এই ব্যপারটি শুধু যে বিশ্বাসের সাথে জড়িত তাই নয়, বরং তা সম্পূর্ন জীবনের সাথে জড়িত। আজকে এই ক্ষনিকের ভাবনায় এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” আশ্চর্যের ব্যপার হল তালিবান সৈন্যটি তা মেনেও নিল। রিডলী বললেন, “আমি যখন ফিরে যাব নিশ্চয়ই আমি এ নিয়ে পড়াশোনা করব। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি সত্য অনুসন্ধানই হবে আমার সর্ব প্রথম কাজ।” তালিবান সৈন্যকে দেয়া সে কথা রিডলী রেখেছিলেন। ফিরে গিয়ে তিনি ইসলাম নিয়ে রিসার্চ করতে লাগলেন। তিনি তার নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকার জন্যই তালিবান সৈন্যটির কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রেখেছিলেন – অর্থাৎ ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করেছিলেন। যেদিন বুঝতে পারেন সত্য কি, আর দেরী না করে সে সত্যের আলোকে নিজেকে আলোকিত করলেন। হয়ে গেলেন ইসলামের আরেক সেনানী। তালিবানদের হাতে ধরা পড়ার শ্বাসরুদ্ধকর মুহুর্তগুলো: রিডলী আফগানিস্তানে যখন পা রাখেন তখন তিনি সান ডে এক্সপ্রেসে সাংবাদিক। সে সময়টায় আর দশজনের মত তিনিও বোরখাবৃত আফগান রমনীদের নির্যাতিতের প্রতিভু মনে করতেন। সে নিয়ে আর্টিক্যাল লেখাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে হামলার পরপর আমেরিকার আফগান নীতির কারনে তালিবান সরকার তার দেশে পশ্চিমা বিরোধী অভিযান শুরু করে। মোল্লা ওমর ঘোষনা দেয়, “পশ্চিমাদের কাউকে কোন আফগান আশ্রয় দিলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।” যার ফলে রিডলী আপাদমস্তক বোরখা পরিহিত হয়ে চলাফেরা করতে থাকেন। সাংবাদিকের জীবন বলে কথা। কিন্তূ শেষ রক্ষা হলো না। এক কাফেলার সাথে যাওয়ার পথে বাহন পশুটির লাফালাফির কারনে তার বোরখা সরে যায়। স্থির হতেই দেখলেন এক সুদর্শন তালিবান তার দিকে এক নয়নে তাকিয়ে। তিনি বুঝতে পারলেন ধরা পড়ে গেছেন। আশ্চর্যের বিষয়, তার মুখ থেকে হতাশা বা ভীতিজনক কোন কথা বের হল না, বরং তিনি তালিবান সৈন্যটিকে বলে উঠলেন, “মাই গুডনেস। ইউ লুক গরজিয়াস।” এরপর শুরু হয় বন্দীদশা। তিনি নিজেও জানেন না তার ভাগ্যে কি আছে। তবে তালিবানরা প্রথম থেকেই তার সাথে খুব একটা খারাপ ব্যবহার করেনি। এটিই তাকে প্রথম ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলে। তালিবানদের সম্পর্কে তার যেরকম ধারনা ছিল তাতে রিডলীর কাছে এটা একেবারেই বেমানান যে কোন তালিবান তার সাথে কথা বলবে। ফলে তালিবানদের সম্পর্কে প্রচলিত কথার অনেক কিছুই রিডলীর কাছে বিসদৃশ ঠেকছিল। রিডলী তালিবান সৈন্যটিকে কথা দেন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করবেন। রিডলী তালিবানদের হাতে ধরা পড়ার কাহিনীটি প্রান্জ্ঞল ভাষায় যখন বর্ননা করছিলেন আমরা শ্রোতারা তখন মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলছিলাম। রিডলী বলছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মুহুর্তগুলো আর আমরা পুরো অডিটোরিয়াম যেন চলে গেছি সেই মোল্লা ওমরের আফগানিস্তানে।স্থানী্য় একটি অনুষ্ঠানে তার তালিবান বন্দী শিবিরের অভিজ্ঞতা বলার ফাকে ফাকে রিডলী কিছু জোকস করছিলেন। যেমন, ফিমেল আন্ডার গার্মেন্টস দেখে তালিবান সৈন্যরা কেমন বিব্রত হয়েছিলো ইত্যাদি। শেষে হাসতে হাসতে মন্তব্য করলেন, “এই যুদ্ধের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। আমেরিকান সৈন্যরা এসে ফিমেল আন্ডার গার্মেন্টস দেখালেই তালিবানরা পরাজয় মেনে নিত।” এরপর রিডলী জানালেন কেন তিনি এন্টি ওয়ার ক্যাম্পেইন করছেন। তিনি বলছিলেন, “আমেরিকার বোমা যখন আমাদের উপর পরে সেই বোমা ছিল নির্বিচার বোমা। আমরা যারা শান্তিবাদী তারা রেহাই পাইনি। পায় নি শিশুরা। কেউ নয়। বোমা চেনে না কে সন্ত্রাসী আর কে সন্ত্রাসী নয়। তাই সেদিনের পর আমি ঠিক করি আমি হব যুদ্ধ বিরোধী একজন।” শেষ কথা: রিডলী তার যুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের জন্য হয়েছেন সমালোচিত। বিশেষত আল-জাজিরা থেকে তার চাকুরিচ্যুতি সম্ভবত এ কারনেই হয়ে থাকে। আর এটি গোটা মুসলিম বিশ্বে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরী করে। ইসলামের মূল বিষয় যেমন সংগীত ইত্যাদি নিয়ে গায়ক সামি ইউসুফের সমালোচনা করে রিডলী একটি আর্টিকেল লিখেন। সামি পাল্টা জবাব দেন। সে বিতর্কটি তখন আমাদের মুসলিমদের মাঝে বেশ আলোড়ন তৈরী করে। রিডলীর “পপ কালচার ইন দ্য নেম অব ইসলাম” শিরোনামে লেখাটিতে রিডলী সামির বিরুদ্ধে গান নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ করেন। সামিও উত্তর দেন এই বলে যে, না তিনি কোন ভুল কিছু করছেন না। যে বোরখার বিরুদ্ধে ঘৃনা নিয়ে তিনি আফগানিস্তানে যান, সে বোরখার ব্যপারে পশ্চিমা দৃষ্টিভংগির ত্রুটিগুলো নিয়ে একটি আর্টিক্যাল লেখেন ওয়াশিংটন পোস্টে। তিনি নিজেও বর্তমানে হিজাব আবৃত। |