সাকা-মুজাহিদ ‘পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করেছিল’ :: পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর



ডেস্ক ২৪:: বাংলাদেশের শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ‘মাত্রাতিরিক্ত আবেগের’ সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর।
পাকিস্তানে যেখানে সামরিক আদালত গঠন করে লোকজনকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশিদের অথবা সৌদিতে পাকিস্তানিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে ক্ষোভ জানানোকে সরকারের ‘দ্বৈতনীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
বাংলাদেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি শনিবার কার্যকর হওয়ার পরদিন রোববার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে আসমা জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ফাঁসির ওপর দেওয়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিরও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ মানবাধিকার কর্মী।
তার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দেশটির ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, ‘পাকিস্তান সরকার নিজের দেশের নাগরিকদের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি অতিরিক্ত আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে- এর মাধ্যমে সেই বার্তা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি- পাকিস্তানে ফাঁসি কার্যকরের মতো বিষয়ে সরকার সম-আবেগ দেখাবেন, তারপর বিশ্বের অন্যান্য স্থানে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ত্রুটির বিষয়ে কথা বলবেন।’
তিনি বলেন, ‘দুইজনের ফাঁসি বাংলাদেশে বিভাজনের রেখাপাত আরো বাড়িয়ে দেবে এবং ভবিষ্যেতের রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের বিচার কাজ পর্যবেক্ষণ করছে, তারা সবাই একমত হয়েছে- অভিযুক্ত দুইজনকে যথাযথ আইনি সুবিধা দেওয়া হয়নি।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনার আমি নিন্দা এবং অ্যামনেস্টি ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে কিছু করার জরুরি আহ্বান জানায়।’
পাকিস্তানের বিবৃতির বিষয়ে আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর, তারা (সাকা-মুজাহিদ) পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করেছিল।’
পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন আসমা জাহাঙ্গীরের বাবা মালিক গোলাম জিলানী। একাত্তরের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে পাকিস্তানের যে ১৩ জন নাগরিককে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয় মালিক গোলাম জিলানী তাদের একজন। ওই বছর ২৪ মার্চ ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাবার পক্ষে সম্মাননা নেন আসমা জাহাঙ্গীর।