Main Menu

কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই!

+100%-

ফুয়াদ উদ্দিন (ফারহান): একবার গিয়েছিলাম এক আত্মীয়ার বাসায়। কথা প্রসঙ্গে ভদ্রমহিলা বলতে ছিলেন তাঁর মেয়ের কথা। কথা তো নয় যেন কষ্ট-সংগ্রামের কাহিনী। স্বামীর বাসায় মেয়েকে নাকি অনেক কাজ করতে হয়। নতুন বৌ হয়েও তাকে নাকি রান্না-বান্না করতে হয়, ঘর-আঙ্গিনা সাফ করতে হয়, আবার ভোর বেলা শ্বশুর মশাইয়ের জন্য চা-ও বানাতে হয়। ভদ্র মহিলার আফসোস, উনার মেয়েকে সাহায্য করার জন্য বাড়তি একটা কাজের লোক নেই। এরই মধ্যে উনার ছেলের বউ আামদের চা-নাস্তা দিলো, ঘর ঝাড়ু দিলো, কাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিলো।
তারপর রান্না বসাতে দেরি হওয়ায় শাশুড়ির বকাও শুনলো। সামনে বসে আমি বিব্রত হলাম, সেই সাথে আশ্চর্য হলাম ভেবে যে, যে মহিলা নিজের মেয়ের আরামের জন্য বাড়তি কাজের লোক খোঁজ করছেন, তিনিই আবার “বাসায় তেমন কোনো কাজ নেই” এই বাহানায় কাজের লোক রাখছেন না এবং সব কাজ করার পরও ছেলের বউয়ের ‘অলসতা’ আর ‘আহ্লাদীপনা’য় ত্যক্ত বিরক্ত হচ্ছেন! –এটা ছিলো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ’ অর্থাৎ নিজের মেয়ের জন্য এক নিয়ম আর ছেলের বউয়ের জন্য আরেক নিয়ম –এর নমুনা।
আবার আরেক রকম লোক আছেন যারা মুখে বড় বড় বুলি আওড়ান কিন্তু বাস্তবতা মান্য করেন না। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না যে অনেক বড় বড় ব্যক্তিও আছেন এই দলে। যেমন, ধূমপান প্রতিরোধের উপর বিশাল বক্তৃতা দিয়ে এক বুদ্ধিজীবী নিজেই দুপুরে খাওয়ার পর সিগারেট ধরালেন!
এরকম উদাহরণ আরও বহু আছে। আমরা যা বলি তা নিজেরা খুব কমই মান্য করে চলি। বেশির ভাগই মুখে এক রকম আর বাস্তবে আরেক রকম।অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন ছেলেমেয়ে কথা শুনে না। এক মহিলা আমাকে বললেন, তার মেয়ে মারাত্মক অলস- পড়ালেখার নাম নেই, শুয়ে/বসে সারাদিন কাটায়।মেয়েকে যখন আলাদা করে জিজ্ঞেস করলাম, এ রকম কেন কর? ”তো সে বলে যে,“আমি যেহেতু বড় হয়ে ‘হাউসওয়াইফ’ হবো, অতএব আমার এত পরিশ্রম করার কী দরকার?
তো, হাউসওয়াইফদের যে পরিশ্রম করতে হয় না –এ ধারণা তার কেন হলো? কারণ সে দেখে যে, কাজের লোকদের সাথে চিৎকার করা ছাড়া তার মার নাকি কোনো কাজ নাই। তার মা দুপুরে ৩/৪ ঘন্টা ঘুমান, সন্ধ্যায় উপর তলার ফ্ল্যাটে গল্প করতে যান এবং রাতে ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হিন্দি সিরিয়াল দেখেন।এই করে যেহেতু তার মা বেশ সুখে আছে, কাজেই জীবনে পরিশ্রম করার কোনো প্রয়োজন আছে কী?
এখন এই মেয়েকে আমি কী পরামর্শ দেবো বলেন?
কাজেই যেটা বলবো সেটা মান্য করতে হবে। আমাদের নবীজী একবৃদ্ধার তরুণ পুত্রকে ‘মিষ্টি কম খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিন দিন ধরে ডেকে আনার পর, তৃতীয় দিন। কেন? কারণ আগে তিনি নিজে সেটা অনুসরণ করেছিলেন্। এজন্য তার কথায় মানুষ বদলেছে। নইলে মুখে যতই বলি, বাস্তবে গোয়ালে না থাকলে ঐ কেতাবের গরুর কোনো মূল্য নেই। কারণ মানুষ সব সময় আপনি কী বলেন সেটা না, কী করেন সেটা অনুসরণ করে।
সেজন্য আমার কথাকে কেউ পাত্তা দেয় না –এমন অভিযোগ করার আগে যাচাই করে নিবেন আপনি সেটা মান্য করছেন কিনা। যদি না করে থাকেন তাহলে, একটা সময় এই ভন্ডামির মুখোশ কিন্তু উন্মেচিত হবে। পরিশেষে আপনিও অপমানিত হবেন।






Shares