লজ্জা! ভারতের শোচনীয় পরাজয়, ১৮০ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতলো পাকিস্তান
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে দিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ঘরে তুললো পাকিস্তান। বিরাট কোহলি, ধোনি, যুবরাজ, ধাওয়ান, রোহিত, অশ্বিনদের ১৮০ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলো সরফরাজ, শোয়েব মালিক, হাফিজ, ফখর জামানদের পাকিস্তান।
ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা বরাবরই বলেছিলেন এই নিজ দেশের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের দলের কাছে পাকিস্তান পাত্তাই পাবে না। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো একের পর এক সংবাদ ছেপেছিল পাকিস্তানকে খোঁচা দিয়ে। কিন্তু, মাঠে নেমে সেই ভারতকে পাওয়া যায়নি। বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও ব্যর্থ শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের ভারত। ভারত কি তাদের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতবে? পাকিস্তান কি পারবে আরও এক বার অভাবনীয় অঘটন ঘটাতে? নায়কদের এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময়। এমনই ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল নিয়ে খোদ আইসিসি তৈরি করেছিল ‘ক্যাচলাইন’। ফাইনালের আগেই নিয়ামক সংস্থা একটা দলকে ফেভারিট আর একটা দলকে আন্ডারডগ বেছে দিচ্ছিল। কিন্তু, সবকিছুর জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। আচরণে উদ্যত টিম ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছিল। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো ওয়ানডে ইভেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামে ভারত-পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় মুখোমুখি হয় দুই দল। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের দলপতি বিরাট কোহলি। নির্ধারিত ৫০ ওভারে পাকিস্তান ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৩৮ রান। জবাবে, ৩০.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ভারত তোলে ১৫৮ রান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকান। এছাড়া, হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন আরেক ওপেনার আজহার আলি। দলকে দুর্দান্ত শুরু পাইয়ে দিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন আজহার আলি। ২৩তম ওভারের শেষ বলে রান আউটের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার আজহার আলি। ৭১ বলে ছয়টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন এ ডানহাতি। এর আগে ফখর জামানের সঙ্গে ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন তিনি।
এরপর বিদায় নেন ওয়ানডেতে অভিষেক সেঞ্চুরি করা ফখর জামান (১১৪)। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে হারদিক পান্ডের বলে জাদেজার তালুবন্দি হন এই ওপেনার। এর আগে বাবর আজমের সঙ্গে ৭২ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১০৬ বলে সাজানো ফখরের ইনিংসে ছিল ১২টি চার আর তিনটি ছক্কা। দলীয় ২০০ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ইনিংসের ৪০তম ওভারে বিদায় নেন শোয়েব মালিক। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে যাদবের তালুবন্দি হওয়ার আগে মালিকের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন বাবর আজম। কেদার যাদবের বল তুলে মারতে গিয়ে যুবরাজের হাতে ধরা পড়েন ৪৬ রান করা বাবর। তার ৫২ বলের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারির মার। দলীয় ২৬৭ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর জুটি গড়েন মোহাম্মদ হাফিজ আর ইমাদ ওয়াসিম। এই জুটি থেকে স্কোরবোর্ডে ওঠে অবিচ্ছিন্ন ৭১ রান। হাফিজ ৩৭ বলে ৪টি চার আর ৩টি ছক্কায়
করেন অপরাজিত ৫৭ রান। ইমাদ ওয়াসিমের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে অপরাজিত ২৫ রান।
পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে ভারত।
ইনিংস শুরু করতে ব্যাট করতে নামেন ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান। প্রথম ওভারেই রোহিতকে এলবির ফাঁদে ফেলেন মোহাম্মদ আমির। তৃতীয় ওভারে আমির বিদায় করেন কোহলিকে। ব্যক্তিগত ৫ রান করে শাদাব খানের তালুবন্দি হন তিনি। দলীয় ৬ রানের মাথায় দুই উইকেট হারায় ভারত। দলীয় ৩৩ রানের মাথায় বিদায় নেন শিখর ধাওয়ান। ২২ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২১ রান করে আমিরের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ধাওয়ান। এরপর ফেরেন যুবরাজ সিং। ইনিংসের ১৩তম ওভারে সাদাব খানের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে যুবরাজ করেন ২২ রান। দলীয় ৫৪ রানের মাথায় ভারত চতুর্থ উইকেট হারায়। একই রানে বিদায় নেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ব্যক্তিগত ৪ রান করে হাসান আলির বলে ইমাদ ওয়াসিমের তালুবন্দি হন ধোনি। ইনিংসের ১৭তম ওভারে সাদাব খানের বলে সরফরাজের গ্লাভসবন্দি হন ৯ রান করা কেদার যাদব। ইনিংসের ২৭তম ওভারে রান আউট হন হারদিক পান্ডে (৭৬)। বিদায়ের আগে জাদেজার সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়েন তিনি। মাত্র ৪৩ বলে পান্ডে চারটি চারের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৬টি ছক্কা। দলীয় ১৫২ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় ভারত। স্কোরবোর্ডে আর ৪ রান যোগ হতেই বিদায় নেন রবীন্দ্র জাদেজা (১৫)। জুনায়েদ খানের বলে বাবর আজমের হাতে ধরা পড়েন তিনি।এরপর অশ্বিনকে ফিরিয়ে ভারতের নবম ব্যাটসম্যানকে ফেরান হাসান আলি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বুমরাহকে ফিরিয়ে দেন হাসান আলি।
মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলি তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। দুটি উইকেট নেন শাদাব খান আর একটি উইকেট নেন জুনায়েদ খান।
গ্রুপপর্বে এই ভারতের বিপক্ষেই বড় ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান। টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ডিএল মেথডে ১২৪ রানে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে
দেয় পাকিস্তান। অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হতাশ করে জয় ছিনিয়ে নেয় পাকিস্তান। এরপর সেমি ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে
ফাইনালের টিকিট কাটে সরফরাজ আহমেদের দলটি। গ্রুপপর্বে পাকিস্তানকে হারালেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছিল ভারত। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে না জিতলে ফাইনালে ওঠার পথ বন্ধ হয়ে যেত টিম ইন্ডিয়ার। প্রোটিয়াদের বিদায় করে সেমিতে ওঠে বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তানকে ফাইনালের মঞ্চে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বিরাট কোহিলর দল।