ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা
বর্তমানে অনেকেই ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী থাকেন। রোগীদের এ আগ্রহের কারণেই সারাবিশ্বেই এ রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসার নানা ঔষধ ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে।এরই ধারাবাহিকতায় আপনাদের কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং যেগুলোর কার্যকারিতা গবেষণাগারেও প্রমাণিত হয়েছে এবং বিভিন্ন জার্নালেও তা প্রকাশিত হয়েছে।
করল্লার রসঃ
—————-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় করল্লার রস খেলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাবে,রক্তে ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়বে,অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ কমে যাবে এবং রক্তে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে।
মূল উপাদানঃ
চ্যারানটিন(Charantin),পিপিপি[Insulin like peptide(PPP)], লেকটিন(Lectin), ভাইসিন(Vicin) ,কিউকারবিটেন (Cucurbitane glycosides),মমোরডিন(Momordin) এবং স্যাপোনিন (Saponin).
কীভাবে কাজ করেঃCharantin,PPP, Lectin,Vicin- এরা ইনসুলিনের মত কাজ করে।.Momordin-অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণে বাঁধা দেয়।Saponin-ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ায়।Cucurbitane glycosides- কোষের গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তাকারী প্রোটিন AMPK কে সক্রিয় করে ফলে সহজেই কোষের মধ্যে গ্লুকোজ ঢুকতে পারে।
মাত্রাঃপ্রতিদিন ১০০মিলি করল্লার রস সমান দুই ভাগে ভাগ করে দিনে দুই বার খাবেন খাওয়ার পর পর।এছাড়াও করল্লার রসের পাউডার পাওয়া যায় যা প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ১০০মিগ্রা হিসাবে পরিমাণ বের করে তাকে সমান দু ভাগে ভাগ করে দিনে দু’বার ভরা পেটে খাবেন।
সাবধানতাঃ
মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ডুমুরের পাতাঃ
—————-
স্পেনের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে ডুমুরের পাতার চা খেলে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের দৈনিক ইনসুলিনের চাহিদা ১২% কমে যায় মাত্র এক মাসে। এছাড়াও ডুমুর পাতার চা পানে রক্তে ক্ষতিকর চর্বির মাত্রা কমে যায়। (সূত্র:ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন,ইউনিভার্সিটি হসপিটাল,মাদ্রিদ,স্পেন)
মূল উপাদানঃ পলিফেনল
কীভাবে কাজ করেঃ
ডুমুরের পাতার পলিফেনল হুবহু ইনসুলিনের মত কাজ করে।
কীভাবে এই চা বানাবেন?-আধা লিটার পানিতে ২ টেবিল চামচ শুকনা ডুমুরের পাতার গুড়া ছেড়ে দিন।এরপর ১৫মিনিট বা তার অধিক সময় ধরে ফুটান যাতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়।এখন এই চা পান করুন নাস্তার সাথে।
সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
জিরাঃ
—————-
প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা পত্রে দাবী করা হয়েছে যে জিরা ১)রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় ২)রক্তে চর্বির মাত্রা কমায় ৩)ডায়াবেটিক জটিলতার জন্য দায়ী AGE(Advanced Glycated End-product) তৈরীতে বাঁধা দেয়। কোন কোন গবেষক দাবী করেছেন জিরা’র কার্যকারিতা বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ঔষধ Glibenclamide(যেমন Dibenol) এর সমতুল্য।
মূল উপাদানঃ কিউমিন অ্যালডিহাইড (Cuminaldehyde).
কীভাবে কাজ করেঃ
১)জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড ক্ষুদ্রান্তের(পেটের নাড়ী-ভুড়ির অংশ) ভিতরের দেয়ালের কোষের আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমকে কাজ করতে বাঁধা দেয় ফলে পরিপাককৃত শর্করাজাতীয় খাদ্যের ওলিগোস্যাকারাইড মনোস্যাকারাইডে(গ্লুকোজ) পরিণত হতে বাঁধাগ্রস্থ হয়।
২)কিউমিন অ্যালডিহাইড অ্যালডোজ রিডাকটেজ এনজাইমকে বাঁধাদানের মাধ্যমে দেহের জন্য ক্ষতিকর ও ডায়াবেটিক জটিলতার জন্য দায়ী AGE(Advanced Glycated End-product) তৈরীতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।ফলে ডায়াবেটিসের নানাবিধ জটিলতা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
মাত্রাঃআধা চা-চামচ সদ্য গুড়াকৃত জিরা পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে সকালে নাস্তার আগে ও রাতের খাবারের আগে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা মনে রাখতে হবে যে জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড বাতাসের অক্সিজেনের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে নষ্ট হয়ে যায়।কাজেই ঔষধীগুণ পেতে তাৎক্ষণিকভাবে গুড়াকৃত জিরাই ব্যবহার করতে হবে।
সাবধানতাঃজিরা’র গুড়ার কার্যকারিতা বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ঔষধ Glibenclamide এর সমতুল্য হওয়ায় রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ক্যাসিয়াঃ
—————-
গবেষণায় দেখা গেছে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় এমন ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত ক্যাসিয়া (আমাদের দেশে যেটা দারুচিনি নামে পাওয়া যায়) খেলে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা(FBS) ১৮-২৯% কমে যায়;ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ২৩-৩০%;লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন(LDL) কমে ৭-২৭% এবং কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমে ১২-২৬%।
মূল উপাদানঃ MHCP ও সিনামিক এসিড।
কীভাবে কাজ করেঃ MHCP ইনসুলিনের ন্যায় কাজ করে।আর সিনামিক এসিড PPAR-gamma কে সক্রিয় করে।এর ফলে একদিকে কোষের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যাওয়ায় কোষে সহজেই গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে আর অন্যদিকে কোষের মধ্যে চর্বিকে প্রবেশ করিয়ে রক্তে এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
মাত্রাঃ প্রতিদিন ৩-৬ গ্রাম ক্যাসিয়া সকাল ,দুপুর ও রাতে সমানভাগে ভাগ করে খেতে হবে।এটা আপনি সরাসরি পাউডার আকারে বা স্টিক চিবিয়ে বা এটা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।
সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।তাছাড়া ক্যাসিয়াতে কুমারিনের(কুমারিন রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয়) মাত্রা বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সেবনে আঘাতপ্রাপ্তস্থানে রক্ত জমাট বাঁধা বাঁধাগ্রস্থ হয়।তাছাড়া যাদের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা আছে তাদের রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।কাজেই এসব বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গীঃ
——————————–
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক Prof.Steve Hertzler এর মতে প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে ১গ্রাম স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গীর নির্যাস (Salacia extract) খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে প্রায় ২৩% এবং দেহে ইনসুলিনের চাহিদা কমে ২৯%।স্যালাসিয়ার কাজ ডায়াবেটিসের ঔষধ Acarbose (যা আমাদের দেশে Gluco-A,Sugatrol,Carbos ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) এর মত।
মূল উপাদানঃস্যালিসিনল (SALICINOL) ও কোটাল্যানল (KOTALANOL)- উভয়েই অত্যন্ত শক্তিশালী আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমের কাজে বাঁধাদানকারী।
কীভাবে কাজ করেঃশর্করাজাতীয় (ভাত,রুটি,আলু…) খাবার পরিপাককৃত হয়ে অপেক্ষাকৃত সরল শর্করা ওলিগোস্যাকারাইড ও ডাইস্যাকারাইডে পরিণত হয়।অন্ত্রের ভিতরের দেয়ালের কোষের আবরণীতে থাকা আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইম এসব শর্করাকে ভেঙ্গে অতিসরল শর্করা বা মনোস্যাকারাইডে(যেমন-গ্লুকোজ) রূপান্তরিত করে।স্যালিসিয়ার স্যালিসিনল ও কোটাল্যানল এই এনজাইমের কার্যকারিতাকে বাঁধা দেওয়ায় শর্করাজাতীয় খাবার অতি দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে পারে না।ফলে খাওয়ার পর পর দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে না।
মাত্রাঃপ্রতিদিন ১গ্রাম স্যালাসিয়া এক্সট্র্যাক্ট (নির্যাস) সকালে নাস্তার সাথে।এক্সট্র্যাক্ট না পাওয়া গেলে ৩-৬ গ্রাম স্যালাসিয়া গাছ/কাঠের গুড়া বা গুড়া দিয়ে তৈরী চা পান করলেও চলবে।
সাবধানতাঃস্যালাসিয়া হাইপোগ্লাইসেমিয়া না করলেও অপরিপাককৃত শর্করার কারণে পেট ফাঁপতে পারে,পেট ভার লাগতে পারে,পেট ব্যাথা হতে পারে কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে।
জামের বীচিঃ
—————-
আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের ভেষজ চিকিৎসায় জামের বীচির ব্যবহার অতি পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে জামের বীচি (Eugenia jambolana) ১)অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় ২)মাংসপেশীর কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেনে পরিণত হওয়া তরান্বিত করে এবং ৩)রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়।
মূল উপাদানঃজাম্বোলিন (Jamboline)
কীভাবে কাজ করেঃ
১)ধারণা করা হয় জাম্বোলিন ইনসুলিন নিঃসরণ করায় বা নিজেই ইনসুলিনের মত কাজ করে
২)জাম্বোলিন পেশীকোষের গ্লুকোজ পরিবহণকারী প্রোটিনকে সক্রিয় করে ফলে রক্ত থেকে গ্লুকোজ সহজেই মাংসপেশীতে ঢুকে রক্তে এর মাত্রা কমায়
৩)গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণের জন্য দায়ী এনজাইমকে উত্তেজিত করে মাংসপেশী ও লিভারে এদের সঞ্চিত হতে সাহায্য করে।—এই ত্রিমুখী কার্যকলাপে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়।
মাত্রাঃজামের শুকনো বীচির গুড়া ১গ্রাম করে সকালে,দুপুরে ও রাতে খাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে।
সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
গুরমারির পাতাঃ
—————-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরমারির (Gymnema sylvestre) পাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো।হামদর্দ এর ডায়াবেটিসের ঔষধ ‘দোলাবী’র মূল উপাদান গুরমারি।গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিতও হয়েছে।কিন্তু যেটি তারচেয়েও বেশী চমকপ্রদ তা হলো কিছু গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।যদি বিষয়টি সত্যি হয় তবে ডায়াবেটিস থেকে চিরমুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মূল উপাদানঃজিমনেমিক এসিড (Gymnemic acid)
কীভাবে কাজ করেঃজিমনেমিক এসিডের গঠনের সাথে গ্লুকোজ অণুর মিল থাকায় পরিশোষণ (absorption) কিংবা মিষ্টি স্বাদ উদ্রেক করতে(sweet taste) গ্লুকোজ কোষের যে রিসেপ্টরের সংযুক্ত হয় জিমনেমিক এসিডও সে রিসেপ্টরের সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে আগে গিয়ে সংযুক্ত হয়।ফলে জিমনেমিক এসিড ও গ্লুকোজ একই সাথে উপস্থিত থাকলে গ্লুকোজের মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় না এবং সঠিকভাবে অন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে রক্তে দ্রুত যেতে পারে না।
অামি নিজেই পরীক্ষা করে দেখেছি,গুরমারির পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পর চিনি বা গ্লুকোজ খেলে ২ ঘন্টা পর্যন্ত মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় না।
মাত্রাঃপ্রতিদিন সকালে ও রাতে ৪০০মিগ্রা করে গুরমারি পাতার নির্যাস (extract) খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে।
বংশলোচনঃ
—————-
বংশলোচন বা তাবাশীর (Tabasheer) এক বিশেষ প্রজাতির বাঁশের ভিতর গিঁটে জমে থাকা তরল ক্রমান্বয়ে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে তৈরী হয়।বংশলোচনের মূল উপাদান অর্গানিক সিলিকা।গবেষণায় দেখা গেছে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়,চর্বির(কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড) মাত্রা কমায় এবং লিভারের সুরক্ষা প্রদান করে। ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে Qurs Tabasheer বহুল ব্যবহৃত ঔষধ Glimepiride ( Amaryl, Dialon,Secrin ইত্যাদি নামে অামাদের দেশে পাওয়া যায়) চেয়েও বেশী কার্যকরী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।হামদর্দের জনপ্রিয় ডায়াবেটিসের ঔষধ ‘দোলাবী’র প্রতিটি ট্যাবলেটে ৯৫.৬০মিগ্রা বংশলোচন আছে।
মূল উপাদানঃঅর্গানিক সিলিকা (Silicic acid)
কীভাবে কাজ করেঃবংশলোচন কীভাবে কাজ করে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও রক্তে এর উপস্থিতিতে লিভারে গ্লুকোজ ও চর্বি বিপাকের সাথে সংশ্লিষ্ট কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের মাত্রার তারতম্য ঘটে।যেমন Glucose-6-Phosphatase ও Fructose-1-6-biphosphatase এর মাত্রা কমে যায় এবং Hexokinase এর কার্যকারিতা বেড়ে যায়।ধারণা করা হয় বংশলোচন এসব এনজাইমের কাজকে প্রভাবিত করেই রক্তে গ্লুকোজ ও চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
মাত্রাঃ১-৩ গ্রাম প্রতিদিন সমান দু’ভাগে ভাগ করে দিনে ২বার খেতে হবে।
সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
নিম পাতাঃ
—————-
নিম গাছের ঔষধি গুণের কথা আমরা সবাই জানি।নিম গাছের পাতার নির্যাস ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।International Research Journal of Biological Sciences [Vol. 1(6), 76-79, October (2012)] থেকে জানা যায় ডায়াবেটিক ইঁদুরকে মাত্র ১ডোজ নিমের পাতার নির্যাস খাওয়ানোর পর তার রক্তে glucose এর মাত্রা কমেছে 18%,cholesterol কমেছে 15%,triglycerides কমেছে 32%,urea কমেছে 13%,creatinine কমেছে 23% এবং lipids বা চর্বি কমেছে 15%।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাতেও নিমের পাতার ডায়াবেটিস বিরোধী গুণের কথা প্রমাণিত হয়েছে যা Bangl. J. Vet. Med.(2010). 8(1): 75 – 80 তে প্রকাশিত হয়েছে।তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্যটি দিয়েছে Evidence-Based Complementary and Alternative Medicine [Volume 2011 (2011), Article ID 561625] নামক জার্নালটি।সেখানে বলা হয়েছে নিম পাতার নির্যাস ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।এটা বাস্তব হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসকে চিরতরে বিদায় জানানো সম্ভব হবে।
মূল উপাদানঃনিম পাতার নির্যাসে প্রায় ১৩৫টি ঔষধীগুণসম্পন্ন উপাদান পাওয়া গেছে।তবে গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন কোন কোন উপাদান ডায়াবেটিস নিরাময়ে কাজ করে।গবেষণায় দেখা গেছে নিম পাতার জলীয় নির্যাসের (aqueous extract) এর তুলনায় ক্লোরোফর্ম দ্বারা নিষ্কাষিত নির্যাসের (chloroform extract) ডায়াবেটিস নিরাময়ের ক্ষমতা অনেক বেশী।
কীভাবে কাজ করেঃডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার নির্যাসের কার্যকরী উপাদান নিম্নোক্ত উপায়ে কাজ করে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে-
১)খাদ্যের শর্করাকে গ্লুকোজে রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম হলো অন্ত্রের গ্লুকোসাইডেজ।নিম পাতার নির্যাস অন্ত্রের এই এনজাইমের কার্যকারিতা ৩৫%-৫২% পর্যন্ত কমিয়ে দেয় ফলে পরিপাকের পর খাদ্য থেকে গ্লুকোজ খুব দ্রুত ও বেশী মাত্রায় রক্তে প্রবেশ করতে পারে না।
২)ইনসুলিন নিঃসরণকারী অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের কার্যকারিতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৩)রক্তে প্রবেশের পর অতিরিক্ত গ্লুকোজ বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করে গ্লাইকোজেন আকারে জমা হয় ফলে রক্তে মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজের উপস্থিতি থাকে না।গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরে glucose-6-phosphate dehydrogenase এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ডায়াবেটিসে এই এনজাইমের কার্যকারিতা বেশ কমে যায়।নিম পাতার নির্যাস এই এনজাইমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৪)রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়।কিন্তু সেরোটোনিন ইনসুলিন নিঃসরণে বাঁধা সৃষ্টি করে।নিম পাতার নির্যাস সেরোটোনিনের কাজে বাঁধা দেওয়ার মাধ্যমে ইনসুলিনের স্বাভাবিক নিঃসরণ বজায় রাখে।
মাত্রাঃযেহেতু ডায়াবেটিসে নিম পাতার নির্যাসের কার্যকারিতা নিয়ে জোরেশোরে গবেষণা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে থেকে সুতরাং মানুষের জন্য এর সুনির্দিষ্ট মাত্রার বিষয়ে এখনও বিশদ তথ্য পাওয়া যায়নি।তবে ভারতীয় উপমহাদেশে এর বহু প্রাচীন ও ব্যাপক প্রচলন থেকে দেখা যায় প্রতিদিন ১-৫টি নিম পাতা সকালে নাস্তার সাথে খাওয়া হয়।এ বিষয়ে রেজিস্টার্ড হেকিম বা কবিরাজরাই ভাল বলতে পারবেন।
কীভাবে খেতে হবেঃডায়াবেটিসে কার্যকরী নিম পাতার উপাদান খুব ধীরে ধীরে পানি ও ক্লেরোফর্ম দ্রবণে বের হয়ে আসে।যেহেতু chloroform extract ঘরে করা সম্ভব নয় (যদিও এটি ডায়াবেটিস নিরাময়ে সবচেয়ে কার্যকরী) তাই আপনাকে নিম পাতার জলীয় দ্রবণেই এর কার্যকরী উপাদানকে বের করে আনতে হবে।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক (অভিজ্ঞ হেকিম/কবিরাজ কর্তৃক নির্দেশিত) তাজা নিম পাতা বেঁটে তা ১০০মিলি মাঝারি মাত্রার গরম পানিতে (ফুটন্ত পানি নয়) মিশিয়ে একটি হটপটে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিন।২৪ ঘন্টা পর সেটি পান করুন।
এটি কেবলমাত্র সকালে নাস্তার সময় পান করতে হবে।
সতর্কতাঃমাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদী নিমের নির্যাস সেবন লিভার ও কিডনীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।নিমের তেল (বীচি থেকে প্রাপ্ত) যদিও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় তবুও এটি একটি বিষাক্ত উপাদান;এক্ষেত্রে মৃত্যঝুঁকিও রয়েছে।এছাড়াও নিম পাতা গর্ভপাত ও গর্ভনিরোধে ব্যবহৃত হয়।সুতরাং গর্ভধারণে ইচ্ছুক বা গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এটা কোনক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।রক্তে ক্ষতিকর মাত্রায় গ্লুকোজ কমে যাওয়ার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে।
গুরমার গাছের পাতা
——————————
ইংরেজি নাম: Gymnema Sylvestre (Gurmar)
পরিবার: Asclepiadaceae
ব্যবহার্য অংশ: পাতা
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পাতা ডায়াবেটিক বা সুগার রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। গুরমারের পাতা সেবনেই অনায়াসে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তে শর্করা মাত্রা মানে সুগার লেভেল। এক মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবহার পদ্ধতি:
– শুকনা পাতা গুঁড়া করে খাবারের আগে খেতে হবে।
– গবেষণায় দেখা গেছে গুরমার অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
– বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগ দেখা দেয়ার শুরুতে এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও শিলাজিত বা অ্যাসফল্টাম,চুকা পালং শাক,কালোজিরা,বাগান বিলাসের নির্যাস,গুরচা,মেথী,চিরতা,কাঁচা ঢেঁড়শ ইত্যাদি নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের খুবই কার্যকরী উপাদান রয়েছে।কিন্তু সম্মানিত পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতির বিষয়টি মাথায় রেখে আর্টিকেলটির কলেবর অার বৃদ্ধি করলাম না।
সতর্কবাণীঃ
১)উপরোক্ত অার্টিকেলটি কেবলই তথ্যমূলক;কোনক্রমেই তা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লেখা হয়নি।
২)রেজিস্টার্ড ভেষজ চিকিৎসক (হেকিম/কবিরাজ) এর পরামর্শ ছাড়া এসব প্রাকৃতিক উপাদান চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে না।
৩)যেহেতু এসব প্রাকৃতিক উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় তাই এগুলোর মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণে বা অন্যন্য ডায়াবেটিক বিরোধী ঔষধের সাথে সেবন করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে ক্ষতিকর মাত্রায় গ্লুকোজ কমে যাওয়া) হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
ধন্যবাদ
সূত্রঃ
http://www.diabetes.co.uk/
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/
http://news.nationalgeographic.com/news/2013/09/130905-blueberries-fruit-juice-diabetes-nutrition-health-science/?utm_source=Facebook&utm_medium=Social&utm_content=link_fb20130908news-blueberhealt&utm_campaign=Content